নাম জিজ্ঞেস করি নাই।
চাদর দিয়ে ঢেকে তাকে তুলেছে কেন?
জানি না।
রশীদ সাহেব বললেন, মিথ্যা কথা বলছ কেন বসির? হঠাৎ তোমার মিথ্যা বলার প্রয়োজন পড়ল কেন? আমি ঐ কামরায় গিয়েছিলাম। মৃত ছেলেটির মার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা ডেড বডি কফিনে করে নিয়ে যাচ্ছে। কফিনে প্রচুর বরফ এবং প্রচুর চা পাতা দেয়া হয়েছে। ঠিক বলছি না?
বসির কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, জি স্যার।
বসির জবাব দিল না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। রশীদ সাহেব বললেন,
You are a naughty boy
You will not get a toy.
আমার সামনে থেকে দূর হবার হয়েছে সময়।
সামনে থেকে যাও।
বসির দ্রুত বের হতে গিয়ে দরজায় বাড়ি খেল। রশীদ সাহেব ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বললেন, ছেলেটা মিথ্যা কথা কেন বলল?
আশহাব বলল, বুঝতে পারছি না। কারণ ছাড়াই হয়ত বলেছে।
রশীদ সাহেব বললেন, কারণ ছাড়া কেউ মিথ্যা বলে না। তবে প্যাথলজিক্যাল লায়াররা বলে। সমগ্র মানব গোষ্ঠীর অতি ক্ষুদ্র অংশই প্যাথলজিক্যাল লায়ার। বসির নামের এই ছেলের মিথ্যা বলার পেছনে অবশ্যই কারণ আছে। কারণটা বের করতে হবে।
আশহাব বলল, আপনি সব সময় কিছু না কিছু নিয়ে চিন্তা করেন।
রশীদ সাহেব বললেন, আমি একা না, তুমি নিজেও সব সময় কিছু না কিছু নিয়ে চিন্তা কর। ডাক্তার হিসেবে তুমি এই তথ্য নিশ্চয়ই জান যে মানুষের হার্ট এবং ব্রেইন কখনো বিশ্রাম নেয় না। হার্ট এবং ব্রেইনের বিশ্রাম নেয়ার অর্থ মৃত্যু। ঘুমের মধ্যে হার্ট যেমন কাজ করে ব্রেইনও কাজ করে। ভাল কথা, এই মাত্র তোমার ম্যাজিকের কৌশলটা আমি ধরে ফেলেছি।
সত্যি?
আমাকে কয়েনটা দাও আমি দেখাচ্ছি। ট্রেনে যাত্রীদের নিয়ে আমি যখন কনশাসলি চিন্তা করছিলাম তখন আমার ব্রেইন নিজের উদ্যোগে চিন্তা ভাবনা করে কৌশলটা বের করেছে।
আশহাব একটা কয়েন দিল। রশীদ সাহেব বললেন, তোমাকে ম্যাজিকটা দেখালে তুমি মজা পাবে না। কারণ তুমি কৌশলটা জান। এক কাজ কর ঐ মেয়েটাকে ডেকে আন। সে মজা পাবে।
দশটা মিনিট পরে যাই স্যার?
দশ মিনিট পরে যাবে কেন?
আশহাব বিব্রত গলায় বলল, আমার মা আমার উপর বিশেষ একটি কারণে খুবই রেগে আছেন। তার রাগ পড়ার সময় দিচ্ছি। আধাঘণ্টা থেকে পঁয়তাল্লিশ মিনিটের মধ্যে সাধারণত তার রাগ পড়ে যায়।
তুমি হিসেব করে বের করেছ?
না। আমার বাবা হিসেব করে বের করেছেন। মা বেশির ভাগ রাগ বাবার সঙ্গে করতেন। বাবার সারভাইবেলের জন্যে হিসাবটা দরকার ছিল।
উনি কি করতেন?
ব্যাংকার।
গুড আমরা পনেরো মিনিট অপেক্ষা করব।
চিত্রা বসে আছে সাজেদার সামনে
চিত্রা বসে আছে সাজেদার সামনে। চিত্রার মনে হচ্ছে ভদ্রমহিলা কিছুটা শান্ত হয়েছেন। তবে এখন তিনি ক্রমাগত কথা বলে যাচ্ছেন। কথারও আগা মাথা পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে না। অর্থহীন কথা শুনতে চিত্রার আপত্তি নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লিলির অর্থহীন কথা শুনে সে অভ্যস্ত। সমস্যা হল ভদ্রমহিলা তাকে বৌমা বলে সম্বোধন করছেন। চিত্রার উচিত তাকে মনে করিয়ে দেয়া যে তিনি ভুল করছেন। চিত্রার সঙ্গে এই প্রথম তার দেখা হয়েছে, এবং চিত্রা তাঁর বৌমা না। বৌমা হবার কোনো বাসনাও তার নেই।
বৌমা শোন, আমার ছেলে ইচ্ছা করে আমাকে অপমান করার জন্যে মদ গিলছে। সে কি করবে তোমাকে বলি। গলা পর্যন্ত মদ গিলবে তারপর টলতে টলতে কামরায় ঢুকবে। তোমার সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করবে। তখনতো আমি তাকে ছাড়ব না। মায়ের সামনে যে তার স্ত্রীকে অপমান করে তার মতো কুলাঙ্গার এই দুনিয়ায় জন্মায় নি। আমি সেই কুলাঙ্গারকে সহ্য করব না। আমি খাঁ বাড়ির মেয়ে। আমার দাদা আশরাফ আলীর নাম নিশ্চয় শুনেছ? আমি আশরাফ আলী খাঁ সাহেবের নাতনী। আশরাফ আলী খাঁ সাহেব প্রকাশ্য বাজারে থানার ডিউটি অফিসারকে কি করেছিলেন তা এখনো ইতিহাস। পুলিশের এস পি খবর পেয়ে জেলা হেড কোয়ার্টার থেকে দাঙ্গা পুলিশ নিয়ে এলেন। আমার দাদাজানের লোকজনও লাঠি-বৈঠা নিয়ে তৈরি হল। দাদাজান তার দুনলা বন্দুক বের করলেন। থমথমে অবস্থা। দাঙ্গা বেঁধে যায় এমন অবস্থা। শেষ পর্যন্ত এস পি সাহেবের বুদ্ধিতে সমস্যার সমাধান হল। এস পি সাহেব শাদা পোষাকে এসে দাদাজানের বাড়িতে ঢুকে বললেন, স্যার, আমার চাচা আপনার ছাত্র ছিলেন। দাদাজান সঙ্গে সঙ্গে এস পি সাহেবকে জড়িয়ে ধরে বললেন, বাবা কেমন আছ? এস পি সাহেব বললেন, ভালো থাকব কি ভাবে? শুনেছি আমার এক অফিসার আপনার সঙ্গে বেয়াদবী করেছে। আমি এস পি। আমার অফিসারের বেয়াদবী আমি সহ্য করব না।
দাদাজানের রাগ সঙ্গে সঙ্গে পানি। তিনি বললেন, এটা কেমন কথা। অল্প বয়সের উত্তেজনায় একটা বেয়াদবী করেছে এটা কোনো ব্যাপার না। তুমি তাকে খবর দিয়ে আন হাত মিলাই।
এখন বুঝেছ আমি কোন বংশের?
চিত্রা বলল, জি বুঝেছি।
সাজেদা বড় করে নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, তুমি যাও আমার ছেলেকে ডেকে আন। আমি তাকে ক্ষমা করেছি। আমি যেমন রাগতে পারি ক্ষমাও করতে পারি। রাত দশটা বাজে। তার নিশ্চয়ই ক্ষিধে লেগেছে। নটা বাজতেই সে খেয়ে নেয়। ছোট বেলার অভ্যাস।
চিত্রা উঠে দাঁড়াল। মহিলার সঙ্গে কামরা শেয়ার করার ব্যাপারটা তার এখন আর ভাল লাগছে না। তারচে অনেক ভালবুডোর অংকের গল্প শুনে রাত কাটানো।
আশহাব কামরা থেকে বের হয়েছে তবে ঠিক মতো পা ফেলতে পারছে। তাকে এগুতে হচ্ছে দেয়াল ধরে। চিত্রার সামনে সে খানিকটা ব্ৰিতও বোধ করছে। চিত্রা বলল, আপনাদের মাতা-পুত্রের সমস্যায় হঠাৎ জড়িয়ে পড়েছি। ভাল লাগছে না।