সুরমা টমেটো জুসের গ্লাস নিয়ে খাস কামরার দিকে রওনা হয়েছেন। যমুনা তার স্বামী ফয়সলকে নিয়ে সেই কামরাতেই আছে। দুজন হাত ধরাধরি করে বসা ছিল। সুরমাকে দেখে হাত ছেড়ে দিল। সুরমা বললেন, ফয়সল তুমি আমাকে দেখে লজ্জা পাচ্ছ কেন বল তো? স্ত্রীর হাত ধরে বসে থাকবে না তো কার হাত ধরে বসবে। আমার মধ্যে কোনোরকম প্রিজুডিস নেই। (সুরমার পড়াশোনা ক্লাস সিক্স পর্যন্ত। তার দ্রুত উন্নতি হয়েছে। কথাবার্তায় তিনি এত চমৎকার করে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করেন যে তাঁর শিক্ষা দিক্ষা নিয়ে বিভ্রান্ত হতে হয়। প্রিজুডিস শব্দটা গত সপ্তাহে শিখেছেন—এর অর্থ মন খোলা। যে কোনো কিছুতেই কিছু মনে করে না।) সুযোগ পেলেই সুরমা প্রিজুডিস শব্দটা ব্যবহার করেন। যাতে সড়গড় হয়ে যায়।
সুরমা বসতে বসতে বললেন, ফয়সল এক গ্লাস টমেটো জুস খাবে? খেয়ে দেখতে পার। সামান্য ভদকা দেয়া হয়েছে টমেটোর গন্ধ দূর করার জন্যে। এরা ব্লাডি মেরী না-কি-কি যেন বলে।
ফয়সল বলল, খেয়ে দেখতে পারি।
যমুনা বলল, বড়পা, ও খেলে আমাকেও একটু দিতে হবে। আমি কোনদিন ভদকা খাইনি আজ খেয়ে রাশিয়ান হয়ে যাব। আমার নাম হবে যমুনাভস্কি।
সুরমা বললেন, তুই ভদকা খাবি মানে পাগল নাকি?
এইসব বললে হবে না, আমিও এক চুমুক খাব। এক চুমুক খেলে কি হয়? আমি যমুনাভস্কি হব।
সুরমা বললেন, ঠিক আছে তোকে দেব এক গ্লাস। ঘ্যান ঘ্যান বন্ধ করে তোর দুলাভাইকে এক গ্লাস দুধ দিয়ে আয়। ওর এসিডিটি হচ্ছে। কোনো বিশ্রাম নাই কিছু নাই শুধু কাজ আর কাজ—এসিডিটিতো হবেই। একটু বেড়াতে যাচ্ছে এরমধ্যেও টেলিফোনের পর টেলিফোন।
যমুনা বলল, আপা দুলাভাইকে বল মোবাইল সেটটা জানালা দিয়ে ফেলে দিতে। ময়মনসিংহ পৌঁছে আরেকটা কিনে নেবে।
সুরমা বললেন, তুই যে কি পাগলের মতো কথা বলিস। দিনের মধ্যে দশবার প্রধানমন্ত্রী টেলিফোন করেন। সেট ফেলে দিলে উনার কল কে রিসিভ করবে? প্রধানমন্ত্রীর সবচে কাছের মানুষ বলতে এখন সে।
মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে টেলিফোন এসেছে
মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে টেলিফোন এসেছে। টেলিফোন করেছে তার বড় ছেলে ইমতিয়াজ। ইমতিয়াজের গলার স্বর চাপা। ভীত ভাবও আছে।
বাবা!
হুঁ।
ভাল আছ বাবা?
হুঁ।
আমার বিষয়ে কেউ কি তোমাকে টেলিফোন করেছে?
না। তুই কি নতুন কোনো ঝামেলা পাকিয়েছিস?
উঁহুঁ। বাবা তোমরা কি মজা করছ? গানের দলটা কেমন?
জানিনা কেমন। গান শুরু হয় নি।
আচ্ছা বাবা শোন, আমি ছোট্ট একটা ঝামেলায় পড়েছি।
কি ঝামেলা?
কিছু দুষ্ট লোক আমাকে ফলস একুইজিশান দিচ্ছে। আমি নাকি একটা মেয়েকে রেপ করেছি। অথচ ঘটনা যখন ঘটে তখন আমি নারায়নগঞ্জে আমার এক বন্ধুর বাসায়। তুমি বিখ্যাত মানুষ হওয়ায় সবাই লেগেছে আমার পেছনে। আমাকে দিয়ে তারা তোমার ক্যারিয়ার নষ্ট করতে চায়।
মেয়েটা এখন আছে কোথায়? হা
সপাতালে।
পুলিশ কেইস হয়েছে?
ওরা কেইস করতে গিয়েছিল। ওসি সাহেব কেইস নেননি। উনি খুবই ভদ্রলোক। আমাকে টেলিফোন করে বলেছেন, চিন্তা না করতে।
পত্রিকায় জানাজানি হয়েছে?
এখনো হয়নি। পত্রিকা চেক দেয়ার ব্যবস্থা করেছি।
কি ভাবে?
টাকা পয়সা দিয়ে। তৌহিদ আছে আমার ফ্রেন্ড। সে এইসব ব্যাপারে ওস্তাদ।
টেলিফোনের লাইন কেটে গেল। আবুল খায়ের খান সাহেব কপালের ঘাম মুছলেন। তার ছেলে এখনো মন্ত্রীত্ব যাবার খরবটা জানে না। কিছুক্ষণের মধ্যেই জেনে ফেলবে। তখন কি হবে? মন্ত্রীত্ব চলে যাওয়া পিতার পুত্ররা ভয়াবহ অবস্থায় পড়বে এটাতো জানা কথা। ইমতিয়াজ এ্যারেস্ট হবে আজ রাতেই। কোর্টে চালান করা মাত্র কোর্ট তিন দিনের রিমান্ড দিয়ে দেবে।
আবুল খায়ের খান সাহেব দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন। মন্ত্রী থাকতে থাকতে ছেলের বিয়ে দিতে পারলেন না। দিতে পারলে উপহার দিয়ে ঘর ভরতি করে ফেলতে পারতেন। গাড়ি পাওয়া যেত কম করে হলেও দুটা। নিউ টেক্সটাইলের মালিক মজিদ সাহেবতো বলেই রেখেছেন, ছেলের বিয়ের অন্তত ছমাস আগে আমাকে খবর দিবেন। আমি জাপান থেকে ব্রান্ড নিউ গাড়ি আনিয়ে দেব। আপনার ছেলে তার চাচার কাছ থেকে একটা নতুন গাড়ি পাবে না তো কে পাবে?
সুরমা নিজেই গ্লাসে করে দুধ এনেছেন। তিনি স্বামীকে আদুরে গলায় বললেন, এক চুমুকে খেয়ে ফেলতো। এই নাও এন্টাসিড। দুধ খাওয়ার পর একটা ট্যাবলেট খাবে।
খায়ের সাহেব দুধের গ্লাসে চুমুক দিলেন। সত্যিই বুক জ্বালাপোড়া করছে।
সুরমা বললেন, এই শোনো, ইমতিয়াজ এই মাত্র টেলিফোন করেছে। শত্রুতা করে কে না-কি তাকে ফাসাতে চেষ্টা করছে। ধানমন্ডি থানার ওসি সাহেবকে একটু বলে দিও। না-কি আমি বলব?
তোমার বলার দরকার নেই।
আমি বলতে পারি। আমাকে উনি খুবই সম্মান করেন।
খায়ের সাহেব বললেন, বললাম তো তোমাকে টেলিফোন করতে হবে। কথা যা বলার আমি বলব।
বাবুর্চি জিজ্ঞেস করছিল ডিনার কখন দিবে। ঠিক দশটার সময় দিতে বলব?
বল।
দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে বসে আছ কেন। খাও।
তুমি তোমার কাজে যাও। আমি সময় মতো খেয়ে নেব।
সুরমা বললেন, তুমি একা একা আছ কেন? এসো সবাই গল্প করি।
খায়ের সাহেব বিরক্ত ভঙ্গিতে বললেন, আমাকে কিছুক্ষণ একা থাকতে দাও।
তোমার সমস্যা কি? দশটা না পনেরোটা না—একটা মাত্র শালী। আয়োজন করে বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছ, একটা কথা বলছ না। ওরা কি মনে করবে? যমুনার হাসবেন্ড কি যে ভালো জোক বলতে পারে। শুনলে হাসতে হাসতে পেট ফেটে যাবে। এসো জোক শুনে যাও।