আমি কিছুই লুকাব না। উনি যা জানতে চাইবেন আমি বলব।
জানতে না চাইলে নিজে থেকে বলবি। হয়ত কোন একটা জরুরি পয়েন্ট জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেল।
ভাল সাইকিয়াটিস্ট হলে ভুলবে না। যদি ভুলে যায় তাহলে বুঝতে হবে লো ক্যালিভার সাইকিয়াটিস্ট। তখন তার প্রশ্নের জবাব না দেয়াই ভাল।
তোর বন্ধু বান্ধব যদি তোর খোঁজ করে তাহলে আমি বলব তুই কিছুদিনের জন্যে জন্যে রাঙ্গামাটি গিয়েছিস।
আচ্ছা।
ওদের কাউকে যদি তোর কিছু বলার থাকে তাহলে আমাকে বলে যা। আমি বলে দেব।
কাউকে কিছু বলতে হবে না। শুধু মজিদের বিয়ে হচ্ছে ৮ই পৌষ। বিয়েতে দামী গিফট পাঠাবে। দাওয়াতের কার্ড দিয়ে যাচ্ছি–সেখানে ঠিকানা আছে।
কি গিফট পাঠাব?
দামী একটা শাড়ি আর একসেট রবীন্দ্র রচনাবলী। মজিদ সব সময় বলতো তার টাকা হলে সে এক সেট রবীন্দ্র রচনাবলী কিনবে।
আচ্ছা আমি পাঠিয়ে দেব। তবে আমার ধারণা ৮ই পৌষের আগেই তুই সুস্থ হয়ে ফিরে আসবি।
আমার সে রকম মনে হয় না বাবা।
হোসেন সাহেব একাই সাজ্জাদকে চিকিৎসা কেন্দ্রে রেখে এলেন। নীতুকে সঙ্গে নিলেন না। তার মনে হল এইসব জায়গায় মেয়েদের নিয়ে যাওয়া ঠিক না। গাড়িতে ফেরার পথে তিনি খুব কাঁদলেন।
রুবিনা হকের বয়স চল্লিশের উপরে–তাকে দেখে তা মনে হয় না। বয়সের একমাত্র ছাপ তাঁর চুলে। কানের পাশের চুল সাদা হয়ে আছে। তিনি সেখানে রঙ দেননি। কানের পাশে চুলগুলি কালো করে তিনি যদি চোখ থেকে ভারী চশমাটা খুলে ফেলতেন তাহলে তাঁকে কিশোরীদের মত দেখাতো। তিনি তা জানেন। কিশোরী মনস্তত্ত্ববিদ রোগীদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এই তথ্যটিও সম্ভবত তাঁর জানা। তিনি সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, কেমন আছেন?
সাজ্জাদ বলল, ভাল।
মহিলার শাড়ির রঙ হালকা সবুজ। কাধে সাদা রঙের চাদর জড়িয়েছেন। তাকে এই পোষাকেও চমৎকার লাগছে। শুধু গলার স্বর হাস্পিক। মনে হচ্ছে ঠাণ্ডা লেগেছে।
রুবিনা হক বললেন, আসুন আপনার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলি।
সাজ্জাদ বলল, বলুন। সেসানটা হবে কেমন? আমি কি কাউচে শুয়ে থাকব?
না। যেভাবে চেয়ারে বসে আছেন ঠিক সেইভাবে বসে থাকবেন। চা দিতে বলব?
বলুন।
আপনি কি সিগারেট খান?
জ্বি খাই।
তাহলে সিগারেট খেতে পারেন। আমি নিজেও সিগারেট খাই। তবে বাংলাদেশের পুরুষদের সামনে না। মেয়েরা সিগারেট খাচ্ছে এই দৃশ্য এই দেশের পুরুষরা অভ্যস্ত হয় নি। তারা একটা শক খায়। আপনাকে কোন শক দিতে চাচ্ছি না।
সাজ্জাদ বলল, আমি এত অল্পতে শকড হই না। আপনি সিগারেট ধরান।
রুবিনা হক অভ্যস্ত ভঙ্গিতে সিগারেট ধরালেন। টেবিলের ওপাশে ফ্লাস্যক ছিল। ফ্লাস্ক থেকে চা ঢাললেন।
সাজ্জাদ সাহেব!
জ্বি।
আসুন আমরা একটা চুক্তি করি।
কি ধরণের চুক্তি।
আমার প্রশ্নের আপনি সত্যি জবাব দেবেন। সরাসরি জবাব দেবেন। ড্রাগ নিয়ে যারা অভ্যস্ত এই কাজটা তারা পারে না। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আপনি পারবেন।
আপনার এরকম মনে হবার কারণ কি?
আপনাকে রেসপনসিভ বলে মনে হচ্ছে। আপনার ভেতর দ্বিধা এবং কুষ্ঠার ভাবটা নেই। আমার কি প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু করব?
করুন।
আমি কি ধরে নিতে পারি আপনি সত্যি কথা বলবেন?
হ্যাঁ ধরে নিতে পারেন?
রুবিনা হক সিগারেটে লম্বা একটা টান দিয়ে সাজ্জাদের দিকে ঝুঁকে এলেন। ভারী এবং গম্ভীর গলায় বললেন, আপনি কি কখনো মানুষ খুন করার কথা ভেবেছেন?
সাজ্জাদ হকচকিয়ে গেল। এই প্রশ্নের জন্যে সে তৈরী ছিল না। সে ধরে নিয়েছিল প্রশ্ন হবে ড্রাগ সম্পর্কিত। সে কি ধরণের ড্রাগ নেয়। কতবার নেয়। কবে থেকে শুরু করেছিল। এইসব। ভদ্রমহিলা সে দিকে না গিয়ে আচমকা প্রশ্ন করলেন–আপনি কি কখনো মানুষ খুন করার কথা ভেবেছেন। ইন্টারেস্টিং।
সাজ্জাদ বলল, সব মানুষই জীবনে কখনো না কখনো খুন করার কথা ভাবে।
আমি সব মানুষের কথা জানতে চাচ্ছি না। আপনার কথা জানতে চাচ্ছি। আপনি কি ভেবেছেন?
হ্যাঁ।
শুধু ভেবেছেন, না পরিকল্পনাও করেছেন?
পরিকল্পনাও করেছি।
পরিকল্পনাটা বলুন।
সাজ্জাদ হেসে ফেলল। রুবিনা হক বললেন, বুঝতে পারছি আপনার প্রাথমিক পরিকল্পনাটা খুব হাস্যকর ছিল। নিশ্চয়ই শিশু বয়সের পরিকল্পনা। বলুন শুনি। আপনার সিগারেট নিভে গেছে। সিগারেট ধরিয়ে বলুন।
আমার একজন প্রাইভেট স্যার ছিলেন–নাম এজাজ উদ্দিন। ইংরেজী পড়াতেন। স্যারের অভ্যাস ছিল সারাক্ষণ নাকের লোম ছেড়া। তিনি নাকের লোম ছিড়তেন এবং তার সামনে একটা সাদা কাগজে সেগুলি জমাতেন। আমাকে পড়ানো শেষ করে কাগজটা প্যাকেট করে সঙ্গে নিয়ে যেতেন।
আপনার কাছে দৃশ্যটা ভয়ংকর কুৎসিত লগত?
জ্বি।
আপনি তাকে খুন করার পরিকল্পনা করলেন?
জ্বি।
পরিকল্পনাটা বলুন শুনি।
আমার ফুটবলের একটা পাম্পার ছিল। আমি ঠিক করলাম কেরোসিন দিয়ে সেই পাম্পার ভর্তি করব। তারপর আড়াল থেকে পাম্পারে চাপ দিয়ে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেব। তারপর একটা দেয়াশলাই জেলে কাঠিটা তার গায়ে ফেলে দেব।
আপনার বয়স তখন কত?
আমি তখন সিক্সে পড়ি।
পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি কেন?
স্যার চাকরি ছেড়ে চলে গেলেন।
পরের পরিকল্পনা সম্পর্কে বলুন।
কণা নামের একটা মেয়ে আছে। আমি তার স্বামীকে খুন করার পরিকল্পনা করি।
পরিকল্পনা সম্পর্কে বলুন।
খুব সহজ পরিকল্পনা–জটিল কিছু না। আমি খুব তীব্র কিছু বিষ জোগাড় করে কণাকে দিয়ে আসি। তাকে বলে দেই। সে যেন কোন না কোন ভাবে তার স্বামীকে খানিকটা খাইয়ে দেয়।