বুঝলে আতাহার, পশু এবং মানুষকে তুমি যদি দুটা ভাগে ভাগ কর তাহলে তুমি মজার একটা ব্যাপার লক্ষ্য করবে। ব্যাপারটা সিস্টেমেটিক্যালি কর। এসো, একটা থািট এক্সপেরিমেন্ট করি। মনে মনে কলপনা করো। একটা শাদা পাতা নাও। একদিকে লিখে। মানুষ, একদিকে পশু, মাঝখানে লম্বা একটা দাগ দাও। দিয়েছ?
জ্বি।
ভেরী গুড। এখন নাম্ববারিং করা। এক দুই করে গো আপওয়ার্ড …
হোসেন সাহেব উৎসাহের সঙ্গে শুরু করেছিলেন। তার উৎসাহ বাধাপ্রাপ্ত হল। দরজার মুখে নীতুকে দেখা গেল।
নীতুও আজ শাড়ি পরেছে। আতাহার ভেবে পেল না— আজ কি কোন বিশেষ দিন–যে দিন সব বাচ্চা মেয়েকে শাড়ি পরতে হবে?
নীতুর মুখ কঠিন। তার গলার স্বরও হিমশীতল। হোসেন সাহেব বললেন, কি ব্যাপার মা?
তুমি বাজারে যাবে না?
যাচ্ছি তো। পশু এবং মানুষ বিষয়ক আমার ধারণাগুলি আতাহারকে বলছিলাম। ধারণাগুলি বলার সময় তুমি অনেক পাবে বাবা। ধারণা পালিয়ে যাচ্ছে না। এখন যদি বাজারে না যাও, মাছ-টাছ কিছুই পাবে না। আজ ছুটির দিন না?
দ্যাটস রাইট। আজ ছুটির দিন তো বটেই।
তুমি বাজারে চলে যাও। আমি আতাহার ভাইকে আটকে রাখছি।
এটা মন্দ না।
চট করে বাজার সেরে এসো। এসে পশু এবং মানুষ বিষয়ক তোমার হাইপোথিসিস আতাহার ভাইকে বুঝিয়ে বল।
হোসেন সাহেব মেয়ের কথায় আস্বস্ত হলেন এবং অতিরিক্ত ব্যস্ততায় বাজারের দিকে রওনা হলেন। নীতু আতাহারের দিকে তাকিয়ে বলল, বাবার হাত থেকে আপনাকে বঁচিয়ে দিলাম। এখন আপনি ভালীয় ভালয় বিদেয় হয়ে যান।
নাস্তা খেয়ে তারপর যেতে হবে। নাস্তা খেয়ে আসিনি। বাসি রুটি-ভাজ্বি যা হোক একটা কিছু দে। আমি সাজ্জাদের ঘরে গিয়ে বসি। ওর ঘুম ভেঙেছে?
ভাইয়া বাড়িতে নেই।
কোথায় গেছে?
জানি না কোথায় গেছে। দুদিন ধরে তার কোন খোঁজ নেই।
দুদিন ধরে একটা মানুষের কোন খোঁজ নেই। আর তোরা বেশ স্বাভাবিক জীবন যাপন করছিস? আশ্চর্য তো!
আমরা কি করব? মাইকে করে পাড়ায় পাড়ায় ঘোষণা দেব–সাজ্জাদ নামের একজন যুবক হারানো গিয়াছে? ভাইয়ার বাড়ি থেকে উধাও হওয়া তো আজ নতুন কিছু না। আপনি সেটা ভাল করেই জানেন।
তুই আমার উপর রাগ করছিস কেন? আমি তো তাকে ফুসলে-ফাসলে বাড়ি থেকে বের করিনি। আমি খুবই গৃহী ধরনের মানুষ। রাত আটটার পর সব সময় আমাকে বাসায় পাওয়া যায়।
নীতু গম্ভীর মুখে বলল, আপনি বসার ঘরে গিয়ে বসুন–আমি চা-নাশতা নিয়ে আসছি। হলুদ দাগ দেয়া পাঞ্জাবিটা কি ইচ্ছা করে পরেছেন? সবাইকে দেখানোর জন্যে যে আপনি আলাদা? অন্যদের মত পরিস্কার জাম-কাপড় পরেন না–নোংরা জামকাপড় পরেন?
আতাহার হাই তুলতে তুলতে বলল, সাজ্জাদ বাড়ি থেকে পালিয়েছে এই রাগ তুই আমার উপর চাপাচ্ছিস এটা ঠিক হচ্ছে না। উদ্দোর পিণ্ডি বুধের ঘাড়ে হলেও কথা ছিল। উদ্দোর পিণ্ডি একেবারে সুলায়মানের ঘাড়ে!
নীতু কিছু না বলে চলে গেল। এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই নাশতা নিয়ে ঢুকল। যেন তার জন্যে নাশতা তৈরিই ছিল, নীতু শুধু নিয়ে এসেছে। আগুন-গরম পারাটা, ডিমভাজা, একটা বাটিতে গরুর মাংস। নীতু খাবার টেবিলে নামিয়ে রাখতে রাখতে বলল, চা খাবেন, না কফি খাবেন?
দুটাই খাব। প্রথমে এক কাপ চা, তারপর কফি। আর শোন নীতু, এক পারাটায় আমার হবে না। দুটা লাগবে।
পারাটা ভাজছে।
গুড। শোন নীতু, পৃথিবীর পাঁচটা শ্রেষ্ঠ মেয়ের তালিকা যদি কোনদিন করার চেষ্টা হয় তাহলে আমি খুব চেষ্টা করব তোর নাম ঢুকাতে।
শুনে খুশি হলাম।
দেশ ছেড়ে যাবার সময় পাঁচটা জিনিসের জন্য আমার খারাপ লাগবে। এক–বৃষ্টি, দুই–বর্ষার ব্যাঙের ডাক, তিন–বাশবনে জোছনা, চার–কালবোশেখি, পাঁচ–তুই।
আপনার সবই কি পাঁচটা পাঁচটা করে?
হুঁ। পাঁচ হচ্ছে ম্যাজিকেল নায়ার। কোন মেয়েকে যদি কখনো পাঁচটা গোলাপ দেয়া যায় তাহলে সে জন্মের মত কেনা হয়ে যায়। পারাটা তো নীতু অসাধারণ হয়েছে। বিষ্ণু দের কবিতার চেয়েও ভাল হয়েছে। প্রায় ক্লাসিকের পর্যায়ে চলে গেছে। খেতে মায়া লাগছে। ক্লাসিক পর্যায়ের জিনিস ভক্ষণ করা যায় না।
ভক্ষণ করা না গেলে করবেন না। আপনাকে তো জোর করে ভক্ষণ করাচ্ছি না।
নীতু, তুই কোন রাশির জাতক বল তো?
কেন?
আমার মনে হচ্ছে তুই লিব্রা। লিব্রারা যে কোন সহজ কথায় একটা প্যাঁচ ধরে। খবরদার, তুই বিয়ে করবি না। বিয়ে করলে তোর স্বামীর সঙ্গে তুই ত৬৫ দিন ঝগড়া করবি। লিপ ইয়ারে করবি ত৬৬ দিন।
কাজের মেয়ে ধোয়া ওঠা পারাটা নিয়ে ঢুকল। নীতু আতাহারের প্লেটে পারাটা তুলে দিতে দিতে বলল, আপনি দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, তা তো জানতাম না!
সাজ্জাদ তোকে কিছু বলেনি?
ভাইয়ার সঙ্গে আমার কোন কথা হয় না। যাচ্ছেন কোথায়?
হলুদ চামড়ার দেশ–জাপানে।
জাপানে গিয়ে আপনি কি করবেন?
জাপানের আকাশে-বাতাসে ইয়েন উড়ছে। খাবলে খাবলে তাই ধরব। ভিসা পাওয়াই শুধু সমস্যা। সেই সমস্যার সমাধান হয়েছে।
সমাধানটা কি?
সাংস্কৃতিক এক দল যাচ্ছে জাপানে। আমি ওদের সঙ্গে তবলাবাদক হিসেবে যাচ্ছি। ওরা ফিরে আসবে, আমি থেকে যাব।
পারাটা কি আরেকটা দেব?
না। দিলে লোভে পড়ে খেয়ে ফেলব। অত খাওয়া উচিত হবে না। চা দে, কফি দে। চা-কফি খেয়ে বিদেয় হই।
আপনার মা কেমন আছেন?
ভাল।
উনার কেবিন নাম্ববার কত? আমি একবার উনাকে দেখতে যাব।
আনিলাকি থারটিন-কে দুই দিয়ে গুণ করলে যত হয় তত।
উনার শরীর এখন কেমন?