কণা রাজি হয়?
সে শিশিটা হাতে নিয়ে খুব হাসে। হাসি দেখে মনে হচ্ছিল সে রাজি।
সে যে রাজি না সেটা কখন বুঝলেন?
পরের বার তার খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি সে বাসা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গেছে।
মেয়েটিকে আপনি বিয়ে করতে চাচ্ছিলেন?
হ্যাঁ।
কেন? সে খুব রূপবতী?
না, খুব রূপবতী না। চেহারায় আকর্ষণ ক্ষমতা অবশ্যি আছে।
… কেন তাকে বিয়ে করতে চান এটা নিয়ে কি কখনো ভেবেছেন?
জ্বি না।
ব্যাপারটার পেছনে কি প্রতিশোধ স্পৃহা কাজ করছে? আপনার মা, আপনার বাবাকে ছেড়ে অন্য একজনকে বিয়ে করেছে … এই জাতীয় কিছু।
হতে পারে।
আপনার কি বন্ধু-বান্ধব আছে?
না।
না কেন?
বেশী দিন কাউকে আমার ভাল লাগে না।
কেন লাগে না।
ওদের বুদ্ধিবৃত্তি নিম্নশ্রেণীর মনে হয়। ওদের সঙ্গে কথা বলে আরাম পাই না।
মানুষকে চমকে দিতে আপনার ভাল লাগে?
লাগে।
আপনার শখ কি?
আমার কোন শখ নেই।
আপনার বাবার কাছে শুনেছি। মুখোশ সংগ্রহ করা আপনার হবি।
ঠিকই শুনেছেন।
মাঝে মাঝে আপনি কি মুখোশ পরে চুপচাপ বসে থাকেন?
জ্বি।
আপনি কি জানেন আপনি মানসিকভাবে অসুস্থ।
জানি।
আমাদের সাইকোলজির ভাষায় এই রোগের একটা নাম আছে। আপনি নামটা জানেন?
Antisticial Psychopath।
এই বিষয়ে আপনার পড়াশোনা আছে?
জ্বি আছে। আমার প্রিয় বিষয়–কবিতা এবং সাইকোলজি।
আমাকে একটা কবিতা শুনানতো।
সাজ্জাদ চোখ বন্ধ করে গম্ভীর গলায় আবৃত্তি করল,
You knew Orion always comes up sideways.
Throwing a leg up over our fence of mountains.
And rising on his hands, he locks in in me
Busy outdoorshy lantern-light with something
l should hawe di ne hy layligh. and indeed…
কার কবিতা?
রবার্ট ফ্রস্ট।
রুবাট ফ্রস্ট কি আপনার প্রিয় কবি?
না–আমার অপ্রিয় কবি।
অপ্রিয় কেন? যে সব কবিতা আপনার লেখার কথা সে সব কবিতা উনি লিখে ফেলেছেন বলে?
হ্যাঁ।
সাজ্জাদ হাসল। মহিলার বুদ্ধি তাকে চমৎকৃত করছে। এর সঙ্গে কথা বলে আরাম আছে। সাধারণত মেয়েদের সঙ্গে কথা বলা আরাম পাওয়া যায় না। জন্মগতভাবেই তারা চাপা। এরা সহজ ভাবে কিছু বলবে না। বুদ্ধিমতি মেয়েদের বেলায় এই ব্যাপারটি আরো তীব্র। তারা পুরুষদের সঙ্গে কখনো বুদ্ধির খেলা খেলবে না। নিজের বুদ্ধি, মেধা ও মনন চাপা দিয়ে রাখবে। মেয়েরা অন্যদের কাছে নিজেদের সরল সহজ হিসেবে দেখাতে ভালবাসে।
সাজ্জাদ সাহেব।
জ্বি।
কণার হাতে বিষের শিশি দিয়েছেন, এই কথাটা আপনার বানানো? তাই না?
জ্বি বানানো–আমি কণাকে বলেছিলাম আমি তোমাকে বিষ দিয়ে যাবো। তুমি তোমার স্বামীকে খাইয়ে দিও। শুনে সে খিলখিল করে হেসেছিল। আমি তার দুদিন পরে সত্যি সত্যি বিষের কৌটা নিয়ে যাই–তখন আর তাদের পাইনি। এবার কিন্তু আমি সত্যি কথা বলছি।
হ্যাঁ এবার সত্যি কথা বলেছেন। আপনার মা যখন আপনার বাবাকে ছেড়ে যান। তখন আপনার বয়স কত?
ছ সাত বছর হবে। ঠিক বলতে পারছি না।
সেই সময়কার স্মৃতিতো নিশ্চয়ই আপনার মনে আছে?
হ্যাঁ আছে।
আপনার মা যাকে বিয়ে করেন। তিনি আপনার বাবার বন্ধু?
জ্বি।
আপনার বাবার অনুপস্থিতিতে তিনি আসতেন?
হ্যাঁ।
আপনার মা কি তার সঙ্গে দরজা বন্ধ করে গল্প করতেন?
হ্যাঁ।
দরজার ফাঁক দিয়ে আপনি কি কখনো উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করেছেন ভেতরে কি হচ্ছে?
হ্যাঁ, করেছি।
যা দেখেছেন তাতে আপনার মনে প্রচণ্ড রাগ এবং ঘৃণা তৈরি হয়েছে।
আমি ছোট ছিলাম। কিছু বুঝতাম না।
তার পরেও প্রচণ্ড রাগ এবং ঘৃণা জন্মাতে পারে।
হ্যাঁ পারে।
আপনি কি বুঝতে পারছেন আপনার বর্তমান অবস্থার বীজ হচ্ছে শৈশব।
হতে পারে।
এখনতো আপনার বয়স হয়েছে, এখন কি আপনি আপনার মার ব্যাপারটা সহজভাবে নিতে পারেন না? বাবা আপনার যতই প্রিয় হোন না কেন আপনার মার কাছে প্রিয় ছিলেন না। তার যে সব অভাব ছিল আপনার বাবা সে সব অভাব মিটাতে পারছিলেন না। অসুখী একজন মহিলা সুখের সন্ধান করবে–এটা কি স্বাভাবিক না?
হ্যাঁ স্বাভাবিক।
আপনি কি আরেক কাপ চা খাবেন?
না।
আপনার কি ক্ষিধে পেয়েছে? কিছু খাবেন? আমার সঙ্গে ভাল চকলেট কেক আছে।
কেক না–অন্য কিছু খেতে ইচ্ছে করছে।
বলুন কি খেতে চান?
সাজ্জাদ শীতল গলায় বলল, একটা টিকটিকি খেতে চাই। মিডিয়াম সাইজের একটা টিকটিকি।
রুবিনা হকের মুখের ভাব বদলাল না। তিনি স্বাভাবিক ভাবেই ফ্রাক্স থেকে চা ঢালছেন। যেন তিনি সাজ্জাদের কথা শুনতে পান নি।
সাজ্জাদের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে তার হাতের মুঠি বন্ধ। মনে হচ্ছে সে অনেক কষ্টে রাগ সামলাচ্ছে।
নীতু তার বাবাকে ডাকতে এসে দেখল তিনি জবুথবু হয়ে বসে আছেন। তার মাথা নিচু। বেশ শীত পড়েছে। কিন্তু তিনি বসে আছেন পাতলা একটা গেঞ্জি গায়ে। মাথার উপর ফ্যানটাও ফুলস্পসীডে ঘুরছে। নীতু বলল, বাবা তোমার কি শরীর খারাপ করেছে?
হোসেন সাহেব বললেন, না।
তাহলে এসো। ভাত খাবে এসো।
হোসেন সাহেব বললেন, ভাত খাব নারে মা!
ভাত খাবে না কেন?
মনটা ভাল নেই।
রুটি বানিয়ে দেব?
না। কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না।
একদম কিছু খাবে না তা কি করে হয় বাবা? একটা কলা খাও, আর এক গ্রাস দুধ এনে দেই?
আচ্ছা দে।
নীতু কলা এবং দুধ এনে দেখল তার বাবা ফুপিয়ে যুঁপিয়ে কাঁদছেন। নীতুর মনটাই খারাপ হয়ে গেল। একজন বয়স্ক মানুষ যদি ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদে তাহলে তাকে খুব অসহায় লাগে। নীতু বাবার পাশের চেয়ারে বসতে বসতে বলল, ভাইয়ার জন্য কি মনটা খারাপ লাগছে। বাবা?