জ্বি আচ্ছা স্যার।
করিম সাহেব চলে যাবার পরপরই কুদ্দুস ঢুকল হাসিমুখে। তার হাতে কাঁঠাল আকৃতির দুটি পাকা পেঁপে। সে স্যারের জন্যে নিয়ে এসেছে। কুদ্দুস মাথা চুলকে বলল, গাছের পেঁপে স্যার।
তাই নাকি?
বাবার নিজের হাতে পোঁতা গাছ।
ভালো, খুবই ভালো–দাম পড়ল কত?
চল্লিশ টাকা। পঞ্চাশ টাকা জোড়া চায়–চল্লিশে দিল।
মনজুর হেসে ফেলল। কুদ্দুসের মুখ অসম্ভব বিষগ্ন হয়ে গেল। জেরার মুখে সে এক সেকেন্ডও টিকতে পারে না। তাছাড়া এই মানুষটাকে সে আগে থেকেই ভয় পায়। এখন যেন সেই ভয় সাতগুণ বেড়েছে। ছায়া দেখলেই ভয় লাগে। মূল মানুষটাকে দেখতে হয় না।
কুদ্দুস।
জ্বি স্যার।
ওয়েটিং রুমে আমানুল্লাহ নামে একটা ছেলে বসে আছে। তাকে নিয়ে আস।
জ্বি আচ্ছা স্যার।
কুদ্দুস ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেল। মনে মনে ঠিক করল, আগামী এক মাস এই মানুষটার ত্ৰিসীমানায় সে থাকবে না। নগদ টাকা সাধলেও না।
আমানুল্লাহর সঙ্গে মনজুরের আগে একবার দেখা হয়েছে। এটা দ্বিতীয় সাক্ষাৎ। আজ সে আমানুল্লাহকে আসতে বলেছে। আজ তাকে টাকা দেয়ার কথা। মনজুর রাজি আছে আমানুল্লাহর শর্তে। নগদ এক লক্ষ টাকা আগেই দেয়া হবে।
আমানুল্লাহ আজ সুন্দর একটা শার্ট পরেছে। চুল আঁচড়ানো। ইন্ত্রি করা প্যান্ট। সকালবেলাতেই গোসল করেছে বলে বোধহয় তাকে সুন্দর লাগছে। চোখে-মুখে স্নিগ্ধ ভাব।
কেমন আছ আমানুল্লাহ?
জ্বি স্যার ভালো।
মনজুর ব্ৰাউন রঙের একটা প্যাকেট এগিয়ে দিল। নিচু গলায় বলল, তোমার টাকা এখানেই আছে। পাঁচশ টাকার নোট দিয়েছে। তুমি গুণে নাও।
আমানুল্লাহ টাকা গুনছে।
মনজুর বলল, তুমি কিছু খাবে?
জ্বি না।
চ-টাও খাবে না?
না।
টাকা গোনা শেষ হয়েছে। প্যাকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে আমানুল্লাহ বলল, আমি একজনকে টাকাটা দেয়ার জন্যে তিন চারদিনের জন্যে বাইরে যাব। আপনারা হয়তো ভাবতে পারেন। আমি পালিয়ে গেছি। এই জন্যে বললাম।
মনজুর বলল, আমি এ রকম কিছুই ভাবব না।
আমার পাসপোর্ট হয়ে গেছে। যেদিন যেতে বলবেন আমি যাব। শুধু …
শুধু কী?
না কিছু না।
তুমি কি ভয় পাচ্ছ?
ভয়? হ্যাঁ একটু পাচ্ছি।
cror’?
মনে হচ্ছে অপারেশনে আমি মারা যাব।
তাই যদি মনে হয় তাহলে রাজি হলে কেন?
টাকাটা আমার খুবই দরকার।
মরে যাবে জেনেও টাকার জন্যে তুমি রাজি হচ্ছে?
জ্বি। অবশ্যি তাতে কোনো অসুবিধা নেই। মানুষতো আর সারাজীবন বেঁচে থাকে না। এক সময় না এক সময় মরতে হয়। আগে আর পরে—এই আর কী। আচ্ছা আমি যাই।
তোমার সঙ্গে একটা গাড়ি দিয়ে দি। গাড়ি নিয়ে যাও–এতগুলো টাকা সঙ্গে নোবে!
অসুবিধা নেই। কেউ বুঝবে না আমার কাছে এত টাকা–স্নামালিকুম।
ওয়ালাইকুম সালাম।
মনজুর চুপচাপ বসে আছে। তার খুব খারাপ লাগছে। মন খারাপ শুধু না, শরীরও খারাপ। বমি ভাব হচ্ছে। মাথায় যন্ত্রণা। কুদ্দুস। দরজার ফাঁক দিয়ে মাথা ঢোকাল। মনজুর বলল, কিছু বলবে কুদ্দুস?
স্যার পেঁপে কেটে দিব?
না। তোমার দেশের বাড়ির পেঁপে পরে খাব।
আপনার কি স্যার শরীর খারাপ লাগছে?
হুঁ।
বাসায় চলে যাবেন?
তাই ভাবছি।
গাড়ি বের করতে বলব স্যার?
মনজুরের মনে পড়ল এখন তার দখলে একটা গাড়ি আছে যে গাড়িতে চড়ে সে এখন সারা শহর ঘুরতে পারে।
অফিসের কাজ মীরার মনে ধরেছে
অফিসের কাজ মীরার মনে ধরেছে।
তেমন কিছু করার নেই। সেজেগুজে বসে থাকাই মনে হচ্ছে কাজের প্রধান অংশ। দ্বিতীয় অংশ হচ্ছে অফিস পলিটিক্স। দুটি প্রধান দল আছে অফিসে। জি.এম. সাহেবের দল, এন্টি জি.এম. দল। দুদলই চেষ্টা করছে মীরার মন ফেরাতে। এন্টি জি.এম. দলের প্রধান–মোসাদেক সাহেব একদিন মীরাকে অফিস কেন্টিনে চা খাওয়াতে নিয়ে গেলেন এবং নানান কথার ফাঁকে এক সময় নিচু গলায় বললেন, আপনার বয়স অল্প, আপনাকে একটা কথা বলছি শুনে রাখুন, জি.এম. সাহেব যদি গাড়িতে লিফট দিতে চান–এভয়েড করবেন। কী জন্যে এভায়েড করতে বলছি জিজ্ঞেস করবেন না। আমার পক্ষে বলা সম্ভব না।
মীরা হেসে বলল, ঠিক আছে জিজ্ঞেস করব না।
মোসাদেক সাহেব খানিকটা বিমর্ষ হয়ে পড়লেন। তিনি ভেবেছিলেন মীরা শোনার জন্যে অনুরোধ করবে, তখন রসিয়ে গল্পটা বলা যাবে।
মিস মীরা, আপনি আছেন যখন সবই শুনবেন। এইসব হচ্ছে ঘরের কথা। কাউকে বলাও যায় না—সহ্য করাও যায় না।
জি.এম. সাহেবকে মীরার বেশ পছন্দ হলো। ভদ্রলোক হাসিখুশি। মহিলা কর্মচারী আশপাশে থাকলে তার হাসিখুশির পরিমাণটা বেড়ে যায়। এছাড়া অন্য কোনো দোষ মীরার চোখে পড়ল না।
জি.এম. সাহেব মীরাকে বললেন, আপনি কি রিকশায় যাওয়া-আসা করেন?
জ্বি সার, তবে মাঝেমধ্যে ভাইয়ের গাড়িতে আসি।
ভবিষ্যতে আর রিকশায় যাওয়া-আসা করবেন না। অফিসারদের আনা-নেয়ার জন্যে গাড়ি আছে। ঐ গাড়িতে যাবেন-আসবেন। মাঝে মধ্যে আমার গাড়িতেও যেতে পারেন। কোনো অসুবিধা নেই। বললেই হবে। আমি ঐদিক দিয়েই যাই।
থ্যাংক ইউ স্যার।
কাজকর্ম কেমন লাগছে?
ভালো। অবশ্যি কাজকর্ম তেমন কিছু তো নেই।
হবে। ধীরে ধীরে হবে। আপনার পোস্টটা নতুন ক্রিয়েট করা হয়েছে। এই পোস্ট আগে ছিল না। মইন সাহেবের জন্যেই ক্রিয়েট করা। ইনি আপনার কে হন?
দূর সম্পর্কের আত্মীয়।
খুব চমৎকার মানুষ। তাই না মিস মীরা?
জ্বি চমৎকার মানুষ।
শুনলাম। তিনি বিদেশে ফিরে যাচ্ছেন না। দেশে সেটেল করবেন। শুনে ভালো লাগল। তার মতো একটিভ, ইনোভেটিভ মানুষ হচ্ছে দেশের সম্পদ। দেশ গড়ার কাজে এদের মতো লোক দরকার–তাই না?