খবরের কাগজে গুরুত্ব না দিলে কি হবে এ ছোট্ট শহরে কারো ব্যাপারটা জানতে বাকি নেই। স্কুলে গেলে সবাই আড়চোখে তাকায় আর বলাবলি করে, এই ছেলেগুলি, এই ছেলেগুলি! আমরা না শোনার ভান করে গম্ভীর হয়ে হেঁটে যাই। স্যারেরা অবিশ্যি ব্যাপারটা ভাল চোখে দেখেননি – মালেক স্যার তো বাড়ি থেকে পালিয়েছিলাম বলে একদিন আমাদের কান মলে দিলেন, অবিশ্যি হাসতে হাসতে! তবু কানমলা তো কানমলাই!
বাসায় কেউ বেড়াতে এলেই আমাদের দেখতে চায়, আমরা গম্ভীর হয়ে গিয়ে দাঁড়াই। সবাই সাহসের প্রশংসা করে তারপর বেশি সাহসের জন্যে আশঙ্কা প্রকাশ করে। আমাদের উপর এখন সবাই খুব তীক্ষ্ণ নজর রাখে, কখন না আবার পালিয়ে যাই!
যখন কেস শুরু হল তখন আমাদের সাক্ষী দিতে হয়েছিল, সে ভারি একটা মজার দৃশ্য! ডাকাত সর্দার কাঠগড়া থেকে আমাদের দিকে প্রথমে চোখ পাকিয়ে তাকিয়েছিল। উকিল যখন খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে সবকিছু জেনে নিল তখন ডাকাত হাঁ করে আমাদের দিকে তাকিয়ে রইল! আমাদের ভারি মজা লেগেছিল দেখে।
ডাকাতগুলির আটবছর দশবছর করে জেল হয়েছে। ওদের নামে নাকি আগেরও অনেক কেস ঝুলে ছিল। এখন সবাই জেলে।
ইসমাইল খাঁ মাঝে মাঝে আমাদের দেখতে আসে। যখনই আসে কিছু না কিছু উপহার নিয়ে আসে। একবার এনেছিল এক নৌকা আম। সত্যি সত্যি এক নৌকা, এ পাড়ার সবাই মিলে খেয়েও তিন চারদিনে শেষ করতে পারেনি। আরেকবার এনেছিল দুটি রুই মাছ, ছোট মাছটাও আমার থেকে লম্বা, বুকের দিকটা টকটকে লাল, হাতের তালুর মত বড় বড় আঁশ! ওগুলো নাকি ওর নিজের পুকুরের। শেষবার যখন আসে তখন এনেছিল কয়েক হাঁড়ি মিষ্টি। সে কি মিষ্টি! এখনও মুখে স্বাদ লেগে আছে।
আমরা এখনও ফুটবল খেলি, নৌকা করে ঘুরে বেড়াই আর সবসময় চোখ কান খোলা রাখি, কখন কোথায় কি ঘটে যাবে আর আবার হয়তো আমাদের অ্যাডভেঞ্চারে বের হতে হবে। কিন্তু এতদিন হয়ে গেল এখনও সেরকম কিছু ঘটল না। আমরা অবিশ্যি আশা ছাড়িনি, অপেক্ষা করে আছি একটা না একটা কিছু নিশ্চয়ই ঘটবে। রবিন অবিশ্যি অন্যরকম বলে, সে নাকি আরও কিছুদিন দেখবে তারপরেও যদি কিছু না হয় তাহলে নিজেই অ্যাডভেঞ্চার তৈরি করে নেবে। বুদ্ধিটা খারাপ না, আমাদেরও মনে হচ্ছে শেষ পর্যন্ত তাই বুঝি করতে হবে।