“ও।”
“হ্যাঁ। আমাদের আসল পরিচয় কেউ জানতে পারে না। এটা গোপন রাখতে হয়।”
“ও।”
“আমারও পরী নামটা পছন্দ না।”
“তাহলে রেখেছ কেন?”
“আসলে চিন্তা করার বেশী সময় পাই না। যখন আপনার ফোন এসেছে তখন যেই নামটা প্রথমে মনে এসেছে সেইটাই বলে দিয়েছি।”
“এই নামটা প্রথমে মনে এসেছে?”
“হ্যাঁ। একটা উপন্যাস পড়ছিলাম সেইটার নায়িকার নাম পরী।”
“কার লেখা উপন্যাস?”
“হুমায়ূন আহমেদ।”
“আমিও তাই ভেবেছিলাম।”
“কিন্তু আপনি যেহেতু নামটা পছন্দ করেন নাই এটা চেঞ্জ করে ফেলব।”
“কী নাম রাখবে?”
“আপনি রাগ হবেন না তো?”
জুলহাজ একটু অবাক হলো ”আমি কেন রাগ হব?”
“কারণ নামটা একটু আগে আপনার কাছ থেকে পেয়েছি। আপনার ওয়াইফের নাম। নীলা।”
“নীলা?”
“হ্যাঁ, নীলা।”
জুলহাজ আবার বলল, “নীলা?”
মেয়েটা বলল, “হ্যাঁ। নীলা।” একটু পরে জিজ্ঞেস করল, “আপনি কি.আমার উপরে রাগ হয়েছেন কিংবা বিরক্ত হয়েছেন?”
“রাগ হব কেন? বিরক্ত হব কেন?”
“গুড। থ্যাংক ইউ।” মেয়েটা হঠাৎ করে বলল, “আপনাকে একটা কথা বলি?”
“বল।”
“আমি আপনার ওয়াইফের নামটা নিয়েছি কিন্তু আমি তার সম্পর্কে কিছুই জানি না।”
“অফ কোর্স জান। শি ইজ ডেড।”
“না না সেইটা না। আপনার ওয়াইফ মানুষটা কী রকম-দেখতে কী রকম এই সব আর কী।”
“আবার কথা বাড়ানোর চেষ্টা করছ?”
অন্য পাশ থেকে মেয়েটা একটু ব্যস্ত হয়ে বলল, “না, না-আমি এইবারে কথা বাড়ানোর চেষ্টা করছি না। এইবার আসলেই জানতে চাচ্ছি। একজন মানুষের নামটা ব্যবহার করব তার সম্পর্কে কিছু তো জানা উচিত। ঠিক কিনা?”
জুলহাজ কিছু বলল না।
মেয়েটা বলল, “একটু পরে তো আর আপনার সাথে যোগাযোগ করা যাবে না। এখনই একটু বলেন। এই একটুখানি প্লীজ।”
জুলহাজ ফোনটা কানে ধরে দাঁড়িয়ে রইল। নীলার কথা সে চাইলে একটুখানি না অনেকখানি বলতে পারে। অনেকখানি মানে আসলেই অনেকখানি। কিন্তু সে তো আর এখন অনেকখানি বলে শেষ করতে পারবে না।
কোথা থেকে শুরু করবে?
শুরু করবে?
৫. রত্নাকে ঘিরে সবাই বসে আছে
রত্নাকে ঘিরে সবাই বসে আছে। কেউ কোনো কথা বলছে না সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। যখনই রত্নার চোখের সাথে কারো চোখ পড়ছে সে নিঃশব্দে হাতের বুড়ো আঙুলটা উঁচু করে তাকে উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা করছে। সাদা একটা কাগজে ইমরান মার্কার দিয়ে লিখল, “চালিয়ে যাও।”
রুনু ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল, “তোমার কিছু লাগবে? পানি? চা কপি? কোক?”
রত্না মাথা নেড়ে জানাল কিছু লাগবে না। তারপরও রুনু একটা গ্লাসে করে পানি এনে রত্নার ডেস্কের উপর রাখল। রত্না যদিও বলেছে তার কিছু লাগবে না কিন্তু পানির গ্লাসটা রাখার সাথে সাথে সে গ্লাসটা থেকে ঢক ঢক করে প্রায় পুরো পানিটা খেয়ে ফেলল, তার এভাবে গলা শুকিয়ে আছে সে টের পায়নি।
রাজু ফিস ফিস করে বলল, “কথা বল।”
রত্না আবার কথা বলল, “শুনছেন?”
অন্যপাশ থেকে মানুষটা বলল, “হ্যাঁ। শুনছি।”
“আপনি বলবেন একটু আপনার ওয়াইফের কথা?”
“আমার ওয়াইফের কথা?”
“হ্যাঁ।”
মানুষটা অন্য পোশ থেকে একটা নিঃশ্বাস ফেলল। বলল, “তুমি কথা বলে বলে সময়টা টেনে লম্বা করার চেষ্টা করছ। ঠিক কিনা?”
“পুরোপুরি ঠিক না। একটুখানি-” আপনি যদি কার্নিশ থেকে নিচে লাফ দেন তাহলে তো সব শেষ। কিন্তু যতক্ষণ লাফ দিচ্ছেন না ততক্ষণ তো একটুখানি হলেও আশা থাকবে যে আপনি হয়তো একবারে শেষ মুহূর্তে আপনার মাইন্ড চেঞ্জ করবেন।”
“না করবো না।”
“ঠিক আছে। কিন্তু মনে করেন যখন আপনি আমাকে আপনার ওয়াইফ নিয়ে কথা বলবেন তখন আপনার একটা দুইটা সুইট মেমোরির কথা মনে পড়বে। পড়বে না?”
“হ্যাঁ পড়বে।”
“তখন আপনার মনটা কি একটু ভালো হবে না?”
“জানি না। হয়তো আরো মনটা খারাপ হবে।”
রত্না মাথা নাড়ল, বলল, “না না মনটা আরো খারাপ হবে না। যখন আপনি সুইট মেমোরিটার কথা বলবেন তখন আপনার মনটা ভালো হবে। আমি জানি।”
“তুমি কেমন করে জান?”
“আমি এই সুইসাইড হটলাইনের ভলান্টিয়ার হওয়ার জন্য ট্রেনিং নিয়েছি না? মানুষের মন কীভাবে কাজ করে সেটার উপরে আমাদের ট্রেনিং দিয়েছে।”
অন্য পাশ থেকে মানুষটা হাসার মত শব্দ করল। বলল, “মানুষের মন এত সোজা একটা জিনিস? যোগ অঙ্কের মত? যে তুমি একটা নিয়ম বলে দেবে আর সেই নিয়মে কাজ করতে থাকবে?”
“না না সোজা জিনিস মোটেও না। আমাদের ট্রেনিং দেওয়ার সময় সেটা একশবার বলেছে। আমাদের বলেছে প্রত্যেকটা মানুষ আলাদা। আমরা একজনের সাথে কথা বলে যেন মনে না করি সবকিছু জেনে গেছি। সবকিছু শিখে গেছি।”
“তাহলে?”
“কিন্তু এইটাও বলেছে যে কথা বললে মানুষের মন হালকা হয়। পরিচিত একজনের সাথে অনেক কথা বলা যায় না কিন্তু যাকে চিনি না
জানি না যার সাথে কোনোদিন দেখা হবে না তার সাথে অনেক কিছু বলে ফেলা যায়। তখন মন হালকা হয়। সেই জন্যে আমি আপনার কথা শুনতে চাইছি। আর কিছু না।” রত্না কয়েক সেকেন্ড চুপ করে রইল। তারপর জিজ্ঞেস করল, “বলবেন?”
অন্য পাশ থেকে মানুষটা কোনো কথা বলল না।
রত্না টেলিফোনটা ধরে রাখল। তার বুকটা ধ্বক ধ্বক করছে। যখন এই মানুষটা কার্নিশ থেকে লাফিয়ে পড়বে তখন তার কেমন লাগবে? তার সাথে কথা বলতে বলতে একজন সুইসাইড করেছে এই ব্যাপারটা কি সে সারা জীবনে ভুলতে পারবে?