সেলিনা বিজলীর হাত ছেড়ে দিল। বিজলী দৌড়ে নাজনীন ম্যাডামের অফিসের দিকে ছুটে যায়।
দরজা খুলে অফিসে ঢুকতেই নাজনীন অবাক হয়ে বিজলীর দিকে তাকালো। বিজলী ঘুরে দরজাটা বন্ধ করে তার ছিটকিনি লাগিয়ে দিল। নাজনীন ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করল, কী হচ্ছে, দরজাটা বন্ধ করছ কেন?
বিজলী তার ওড়নাটা কোমরে প্যাচিয়ে নেয়। তারপর ডান হাতটা মুষ্টিবদ্ধ করে নাজনীনের দিকে এগিয়ে যায়। নাজনীন ভয় পেয়ে তার চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল। শুকনো গলায় বলল, কী হচ্ছে? কী হচ্ছে এখানে?
বিজলী ফিসফিস করে বলল, আপনার জন্যে আমাকে এক বছর থেকে বেশি রাস্তায় থাকতে হয়েছে। আমি ছেলে সেজে দিনের পর দিন ফুটপাথে ঘুমিয়েছি। রাস্তায় অন্যদের সাথে মারামারি করেছি। আমি এখন খুব ভালো মারামারি করতে পারি। একটা ঘুষি দিয়ে আমি একজনকে মাটিতে ফেলে দিতে পারি।
নাজনীন কাঁপা গলায় বলল, তুমি কী বলতে চাইছ?
যাওয়ার আগে আমি আপনাকে দুইটা ঘুষি মারব যেন বাকি জীবন আপনার আমার কথা মনে থাকে। প্রথম ঘুষিটা আমার ভাইকে আমার থেকে আলাদা করে দেওয়ার জন্য! আর দুই নম্বর ঘুষিটা আমাকে পুলিশের কাছে দেওয়ার জন্য–
বিজলীর চোখ থেকে আগুন বের হতে থাকে। সে হিংস্র মুখে এক পা এগিয়ে যায়।
নাজনীন পিছিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, ভীত মুখে বলল, কী বলছ। পাগলের মতো–
এর জন্যে আবার যদি আমায় জেলে যেতে হয় আমি জেলে বিজলী আরো এক পা এগিয়ে গেল, এবারে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে সে এই রাক্ষুসীর মুখে ঘুষি মারবে, তার নাকটা ভেঙে গল গল করে রক্ত বের হয়ে আসবে। সে হাত উপরে তুলল।
ঠিক তখন নাজনীন ধপ করে নিচে পড়ে বিজলীর পা ধরে ফেলল, বলল, প্লিজ! প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও। মাফ করে দাও–আল্লাহর কসম লাগে–
বিজলী বিস্ফারিত চোখে নাজনীনের দিকে তাকিয়ে রইল। একটু আগেও এই মহিলাটি একজন মানুষ ছিল। এখন সে একটা তেলাপোকার মতো, একটা কেঁচোর মতো, একটা কেন্নোর মতো। বিজলী ইচ্ছা করলেই তাকে এখন পা দিয়ে পিষে ফেলতে পারবে। সে একটা মানুষকে পিষে ফেলতে এসেছিল, তেলাপোকা কিংবা কেঁচোকে কিংবা কেন্নোকে পিষে ফেলতে আসেনি। ঘেন্নায় হঠাৎ তার সারা শরীর ঘিন ঘিন করতে থাকে।
বিজলী নিজের পা ছাড়িয়ে পেছনে সরে এল। কয়েক সেকেন্ড মাটিতে পড়ে থাকা কুৎসিত প্রাণীটার দিকে তাকিয়ে থেকে দরজা খুলে সে বাইরে বের হয়ে আসে। সেলিনা জাহান তার জন্যে করিডোরে অপেক্ষা করছে। তাকে দেখে বলল, কথা হয়েছে?
হ্যাঁ। হয়েছে।
কোনো সমস্যা?
না।
চলো তাহলে যাই।
চলেন।
সেলিনা জাহান নিচু গলায় বলল, বিজলী, তোমাকে যেদিন চর থেকে তুলে এনেছিলাম তোমাকে কী বলেছিলাম মনে আছে?
বিজলী সেলিনা জাহানের দিকে তাকালো, মাথা নেড়ে বলল, কী বলেছিলেন?
বলেছিলাম খোদা তোমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন কেন জান? কারণ তোমাদের দিয়ে অনেক বড় কোনো কাজ করাবেন।
বিজলীর মনে পড়ল। সে মাথা নাড়ল।
তাই তুমি খুব বড় কিছু করার জন্য রেডি হও। বুঝেছ? তোমাকে আবার স্কুলে যেতে হবে। লেখাপড়া করতে হবে। ঠিক আছে?
বিজলী মাথা নাড়ল, বলল, ঠিক আছে।
.
খোকন আর বিজলীকে নিয়ে ছোট দলটি হেঁটে যেতে থাকে। বিজলী দেখল একটু পরে পরে খোকন হি হি করে হাসছে। কী নিয়ে হাসছে কে জানে!
বিজলী নিজেও হেসে ফেলল! কেন হাসছে সেও জানে না। সব সময় সবাইকে সবকিছু জানতে হবে কে বলেছে?