মনে হয় যে চলে গেছে তাকে আরেকবার দেখতে চাচ্ছে।
তাহলে পুলিশ কেন তাকে আসতে দিচ্ছে না?
বাইরের কাউকে ভিতরে আসতে দেয়ার নিয়ম নাই তো, সে জন্যে।
ছোট ছেলেটা সবকিছু বুঝে ফেলেছে এরকম ভঙ্গি করে গম্ভীর মুখে বলল,
টুম্পা ফ্যাকাসে মুখে বাচ্চার হাত ধরে রাখা মহিলাটির দিকে তাকিয়ে বলল, মানুষটা কী ফর্সা? নীল রঙের ফতুয়া পরে আছে? জিন্স?
মহিলাটি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল তার আগেই টুম্পা ঘুরে পিছনে তাকালো তারপর একরকম ছুটে বের হয়ে গেল। গেটে দাঁড়িয়ে থাকা একজন মানুষ তাকে কিছু একটা বলার চেষ্টা করল, টুম্পা তাকে কোনো সুযোগ দিল না। ছুটতে ছুটতে সে বের হয়ে আসে–এক কোণায় মানুষের জটলা, দুজন পুলিশকে দেখা যাচ্ছে, টুম্পা ভীড় ঠেলে ভেতরে ঢুকে যায়। হ্যাঁ, তার আব্বু মেঝেতে বসে হাঁটুর মাঝে মাথা রেখে আকুল হয়ে কাঁদছেন। কান্নার দমকে তার শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে।
টুম্পা ছুটে গিয়ে আব্বুকে জড়িয়ে ধরে ডাকলো, আব্বু।
আব্বু সাথে সাথে মুখ তুলে তাকালেন। টুম্পার দিকে তাকিয়ে কাতর গলায় বললেন, টুম্পা! তুই আমাকে ফেলে রেখে যাস নে মা!
টুম্পা ফিস ফিস করে বলল, যাব না আবু। আমি তোমাকে ফেলে যাব না।
সত্যি?
সত্যি আবু। সত্যি।
আব্বু তখন টুম্পাকে জড়িয়ে ধরলেন। কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশটা সবার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনারা এখানে ভীড় করেছেন কেন? যান। যান, নিজের কাজে যান। ভীড় করে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো তখন সরে যেতে থাকে।
টুম্পা আব্বুর হাত ধরে যখন এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল তখন কে একজন বলল, আপনি বোর্ডিং কার্ড নিয়েছেন–আপনি তো এভবে চলে যেতে পারেন না–আপনার লাগেজ?
টুম্পা তার কথা না শোনার ভান করে বাইরে বের হয়ে এল। এয়ারপোর্টের বড় বারান্দায় দাঁড়িয়ে টুম্পা দেখলো আকাশ কালো করে মেঘ জমেছে। মাঝে মাঝে বিজলি চমকাচ্ছে তার নীলাভ আলোতে সবকিছু কেমন যেন ঝলসে উঠচে।
আব্বু বললেন, বৃষ্টি আসছে।
টুম্পা মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ আব্বু।
অনেক বৃষ্টি।
হ্যাঁ আব্বু, অনেক বৃষ্টি। তুমি বৃষ্টিতে ভিজবে আব্বু?
তুই ভিজবি।
হ্যাঁ।
চল তাহলে?
বড় বড় ফোঁটায় যখন বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে তখন সবাই অবাক হয়ে দেখলো ফুটফুটে একটা মেয়ে তার বাবার হাত ধরে রাস্তায় নেমে এসেছে। ঝমঝমে বৃষ্টিতে দুজনকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তার মাঝে দুজন একজনকে আরেকজনকে ধরে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকে।
পাশ দিয়ে একটা গাড়ি ছুটে যাবার সময় একটা ছোট ছেলে বলল, বাবা দেখো দেখো ঐ মানুষটা আর মেয়েটা কী সুন্দর বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে যাচ্ছে।
বাবা মাথা ঘুরিয়ে দেখলেন, বললেন, হ্যাঁ বাবা।
কেন তারা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে যাচ্ছে?
মনে হয় তাদের মনে অনেক আনন্দ।
আমাদের মনে যদি অনেক আনন্দ হয় তাহলে কী আমরাও বৃষ্টিতে ভিজব?
হ্যাঁ বাবা তাহলে আমরাও বৃষ্টিতে ভিজব।
ছোট ছেলেটি যতক্ষণ পারল ততক্ষণ টুম্পা আর তার আব্বুর দিকে তাকিয়ে রইল। আনন্দের কিছু দেখতে তার খুব ভালো লাগে।