আমি কিছু বলার আগেই বলল, এক হাজার ডলার করে দেবে। পাঁচটা কিনবে! কী মনে হয় তোর?
টুম্পা হাসল, বলল, আমি জানি না। তুমি ছোটখালুর সাথে কথা বলে ঠিক করো।
ছোটখালা বললেন, সেটাই ভালো।
ছোটখালা ভীড়ের মাঝে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। টুম্পা তার আব্বুকে খুঁজে বের করার জন্যে এদিক–সেদিক তাকালো, তার এই আব্বুটিকে সে আবিষ্কার করেছে। সে একা–আর কেউ নয়। এই আব্বুটিও এখন শুধু তার একার। আর কারো নয়।
১৩. বৃষ্টি
ছোট খালা বললেন, টুম্পা তোর টেলিফোন। তোর আম্মু আমেরিকা থেকে।
টুম্পা অনেকগুলো খবরের কাগজ নিয়ে বসেছিল, আব্বুর এক্সিবিশান নিয়ে যে খবর বের হয়েছে সেগুলো সে কেটে কেটে রাখছে। কাচিটা রেখে সে টেলিফোন ধরতে গেল, কানে লাগিয়ে বলল, হ্যালো।
অন্য পাশ থেকে আম্মুর গলা না শুনে সে শুনলো লিটনের গলার স্বর। চিৎকার করে বলছে, আপু! তোমাকে আমরা টেলিভিশনে দেখেছি! টেলিভিশনে দেখেছি!
তাই নাকি!
হ্যাঁ আপু! তুমি কথা বলছ! অনেক মানুষ–সেখানে। কী সুন্দর ইশ আপু, তুমি আমাকে নিয়ে গেলে না কেন?
পরের বার তোকে নিয়ে আসব আমি, দেখবি কী মজা হবে। এখানে যা মজার বৃষ্টি হয় তুই না দেখলে বিশ্বাস করবি না–
আমাদের এখানেও বৃষ্টি হয়েছে আপু–লিটন এরপর সেখানকার অনেক খুটিনাটি খবর দিতে শুরু করল। লিটনের কথা সহজে শেষ হতো বলে মনে হয় না মাঝখানে আম্মু টেলিফোনটা নিয়ে টুম্পার সাথে কথা বলতে শুরু করলেন, টুম্পা তোর কী খবর?
ভালো আম্মু।
তোকে আমরা টেলিভিশনে দেখেছি। আমি জানতাম না তুই তোর আব্বুকে খুঁজে পেয়েছিস।
হ্যাঁ আম্মু।
আমাকে তো কিছু বলিস নি–
কীভাবে বলব বুঝতে পারছিলাম না। অনেক কিছু হয়েছে এখানে, তাই ঠিক করেছিলাম এসে বলব। তোমরা যে টেলিভিশনে দেখে ফেলবে বুঝি নি আম্মু!
হ্যাঁ। আজকাল সব দেখা যায়। আম্মু একটু অপেক্ষা করে বললেন, কেমন আছে বুলবুল? টেলিভিশনে তো ভালোই দেখলাম–
এখন ভালোই আছেন। প্রথম যখন খুঁজে পেয়েছিলাম তখন খুব ভয়ংকর অবস্থা ছিল। তুমি চিন্তা করতে পারবে না!
আম্মু বললেন, আমি জানি। আসলে—
আসলে কী?
মানুষটাকে ছেড়ে চলে আসা ঠিক হয় নি। সমস্যা ছিল আমি সেটা ফেস করার সাহস পাই নি। ভয় পেয়েছিলাম–
তুমি কোনোদিন আমাকে কিছু বল নি।
বলি নি। কী বলব? বলতে খারাপ লাগতো, লজ্জা লাগতো–তখন বয়স কম ছিল, কী করতে হবে বুঝি নাই– আম্মুর গলা হঠাৎ ভেঙে গেল।
টুম্পা বলল, আম্মু! তুমি আপসেট হয়ো না। প্লিজ–
এখন মনে হচ্ছে আমার আরেকটু চেষ্টা করা উচিৎ ছিল। আমি করি নাই। ছেড়ে চলে এসেছি। সেলফিশের মতো কাজ করেছি।
থাকুক আম্মু। এসব নিয়ে পরে কথা বলব।
ঠিক আছে। আম্মু একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, তোর তো চলে আসার সময় হয়ে গেছে!
হ্যাঁ আম্মু আর দুই দিন।
তুই চলে এলে বুলবুল একটু মন খারাপ করবে না?
টুম্পা বলল, আমি সেই কথাটা এখন চিন্তা করতে চাই না আম্মু।
টুম্পা আরো কিছুক্ষণ তার আম্মুর সাথে কথা বলল, ফোন রেখে দেবার আগে আম্মু বললেন, তোর সেই টিচার সেদিন ফোন করেছিল। মিসেস হেনরিকসন।
কেন আম্মু?
জানি না। তোকে খুঁজছে, খুব নাকী দরকার। তোর ছোটখালার নম্বর নিয়েছে–ফোন করবে মনে হয়। তার নাম্বারটাও দিয়েছে। লিখে নিবি?
আমার কাছে মিসেস হেনরিকসনের নাম্বার আছে।
ঠিক আছে তাহলে। খোদা হাফেজ।
খোদা হাফেজ আম্মু।
পরদিন রাতে মিসেস হেনরিকসন ফোন করলেন। টুম্পা অবাক হয়ে বলল, কী খবর মিসেস হেনরিকসন। তুমি বাংলাদেশে আমাকে খুঁজে বের করে ফেলেছ?
মিসেস হেনরিকসন বললেন, এখন পৃথিবীটা কতো ছোট হয়ে গেছে! বাংলাদেশ আর আমেরিকা এখন কী দূরে নাকি? পুরো পৃথিবী এখন একটা দেশের মতো। যে কোনো মানুষ যে কোনো দেশে থাকতে পারে।
টুম্পা ভদ্রতা করে বলল, তুমি ঠিকই বলেছ।
এখন সব সময় উচিৎ এক দেশের মানুষের অন্য দেশে যাওয়া। অন্য দেশে থাকা। তাহলে পৃথিবীর সব মানুষ মিলে একটা জাতি হতে পারবে।
টুম্পা আবার ভদ্রতা করে বলল, তুমি ঠিকই বলেছ মিসেস হেনরিকসন!
যাই হোক, আমি অবশ্যি তোমার সাথে ফিলোসফি নিয়ে আলাপ করার জন্যে এই দুপুর রাতে ফোন করি নি। অন্য একটা বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্যে ফোন করেছি।
কী বিষয় মিসেস হেনরিকসন।
এই এলাকায় সামারে থাকার জন্যে একজন আর্টিস্ট এসেছেন। মিস্টার কিম্বালী। খুব ভালো আর্টিস্ট, বিখ্যাত না কিন্তু ভালো। আমার সাথে কয়দিন আগে দেখা হয়েছিল–যারা ছবি আঁকতে পছন্দ করে তাদেরকে সময় দিতে রাজী হয়েছেন। নানারকম টেকনিক শেখাবেন–সত্যিকার আর্টিস্ট কেমন করে আঁকে, কেমন করে চিন্তা করে এই সব।
টুম্পা খুকখুক করে হেসে বলল, মিসেস হেনরিকসন! তুমি বিশ্বাস করবে এখানে কী হয়েছে!
কী হয়েছে?
আমি একজন বিখ্যাত আর ভালো আর্টিস্টের সাথে সময় কাটাচ্ছি। সে অনেকগুলো ছবি এঁকেছে, আমি দেখেছি। আমাকে একেবারে হাতে ধরে ছবি আঁকা শিখিয়েছে!
সত্যি?
তাহলে তো হলোই! তুমি তাহলে শুধু শুধু এখানে ফিরে আসতে চাইছ কেন। থেকে যাও।
টুম্পা বলল, আমার মাঝে মাঝে তাই ইচ্ছে করে, কিন্তু আসতে তো হবেই।
মিসেস হেনরিকসন আরো কিছুক্ষণ টেলিফোনে কথা বলে টেলিফোন রেখে দিলেন। সুমি বলল, তোমাদের টিচাররা কী সুইট, একেবারে আমেরিকা থেকে ফোন করে তোমার খোঁজ নেন!
সবাই না। শুধু মিসেস হেনরিকসন! মিসেস হেনরিকসন অন্যরকম টিচার।