.
নতুন বাবা বিকেলে যখন অফিস থেকে এলেন তখন তার মুখ অস্বাভাবিক গম্ভীর। রাগে থম থম করছে। কোনো কথা না বলে বসে বসে টেলিভিশনে হিস্ট্রি চ্যানেলে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের কাহিনী দেখতে লাগলেন, নতুন বাবা জন্মেও এই সব দেখেন না দেখেই বোঝা যাচ্ছে কোনো কিছু নিয়ে মেজাজ খারাপ। খাবার টেবিলেও কিছু না বলে খেতে লাগলেন, হাত ধুয়ে উঠে যাবার আগে আম্মুকে বললেন, টুম্পার একজন টিচার কালকে সকালে টুম্পাকে তুলে নিয়ে যাবে।
আম্মু বললেন, কোন টিচার?
নাম ভুলে গেছি।
কেন তুলে নেবে? কোথায় তুলে নেবে?
কী যেন একটা আর্ট কম্পিটিশনে।
আম্মু জিজ্ঞেস করলেন, আটলান্টিক সিটিতে?
নতুন বাবা থমথমে মুখে বললেন, হ্যাঁ। তারপর উঠে বেডরুমে ঢুকে গেলেন। লিটন আম্মুর পিছনে ঘুরঘুর করে বলতে লাগলো, আমি যাব আম্মু। আমিও আটলান্টিক সিটি যাব।
.
খুব ভোর বেলা একটা বড় ভ্যানে করে মিসেস হেনরিকসন টুম্পাদের বাসায়। হাজির হলেন। দুবার চাপা স্বরে হর্ন দিতেই টুম্পা তার ব্যাগ নিয়ে নিচে নেমে এল, মিসেস হেনরিকসন চোখ নাচিয়ে বললেন, কী খবর আমাদের আর্টিস্ট? কম্পিটিশনের জন্যে রেডি?
টুম্পা একটু হাসির ভঙ্গি করে মাথা নাড়ল। মিসেস হেনরিকসন দরজা খুলে দিয়ে বললেন, নাও, ওঠো।
টুম্পা মিসেস হেনরিকসনের পাশে বসলো, সাথে সাথে মিসেস হেনরিকসন ভ্যান ছেড়ে দিলেন। টুম্পা সিট বেল্ট বেঁধে নিয়ে বললো, তুমি আমার বাবাকে কী বলেছিলে মিসেস হেনরিকসন?
আমাকে তোমার সাথে যেতে দিচ্ছেন–এটা অসম্ভব একটা ব্যাপার। তাছাড়া–
তাছাড়া কী?
তাছাড়া কাল রাতে আমার বাবার মেজাজ অসম্ভব খারাপ ছিল। মনে হচ্ছিল আমাকে ধরে কাঁচা খেয়ে ফেলবেন। তুমি কী বলেছিলে?
মিসেস হেনরিকসন হাত নেড়ে পুরো ব্যাপারটা উড়িয়ে দেবার ভঙ্গি করে বললেন, বিশেষ কিছু বলি নাই। শুধু একটু আইনের ভয় দেখিয়েছি।
আইনের ভয়?
হ্যাঁ।
সেটা কী রকম?
বলেছি যে একজন ছেলে বা মেয়েকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বাসায় আটকে রাখা আইনত দণ্ডণীয় অপরাধ। আমি একজন সার্টিফাইড টিচার যদি এডুকেশান বোর্ডের কাছে অভিযোগ করি তাহলে স্টেট একশন নিতে পারে–এইসব আগডুম বাগডুম!
টুম্পা হি হি করে হেসে বলল, এগুলো কী সত্যি কথা?
আরে ধেৎ? মিসেস হেনরিকসন হাসলেন, স্টেট যদি এতো কাজের হতো তাহলে তো দেশের চেহারাই পাল্টে যেতো!
টুম্পা বলল, তুমি আমার বাবাকে খুব ভয় পাইয়ে দিয়েছ।
মিসেস হেনরিকসন বললেন, আসলে আমি এমন কিছু ভয় দেখাই নি, তোমার বাবা মানুষটাই ভীতু!
মিসেস হেনরিকসন ছোট রাস্তা থেকে একটু বড় রাস্তায় উঠে বললেন, টুম্পা তোমাকে একটা জিনিস বলে রাখি আমি যে অনেক হৈ চৈ করে তোমাকে এই কম্পিটিশনে নিয়ে যাচ্ছি সেটা থেকে তোমার যেন কোনো ভুল ধারণা না হয়।
কী ভুল ধারণা?
ছবি আঁকা হচ্ছে একটা ক্রিয়েটিভ কাজ, গল্প কবিতা লেখাও হচ্ছে ক্রিয়েটিভ কাজ। ক্রিয়েটিভ কাজের মাঝে কোনো কম্পিটিশন হয় না। কম্পিটিশন ব্যাপারটাই হচ্ছে এক ধরনের ছেলেমানুষী। আমি কম্পিটিশন পছন্দ করি না, কারণ কম্পিটিশনে একজন আরেকজনকে হারাতে চেষ্টা করে। আসলে একজন কখনোই আরেকজনকে হারাতে চেষ্টা করবে না, সব সময় আরেকজনকে জিতিয়ে দেবার চেষ্টা করবে, তাহলে সবাই জিতবে। আমি তোমাকে কিন্তু কম্পিটিশনে জেতার জন্যে নিয়ে যাচ্ছি না।
তাহলে কীসের জন্যে নিয়ে যাচ্ছ?
আমি তোমাকে কম্পিটিশনে অংশ নেবার জন্যে নিয়ে যাচ্ছি। এখানে অংশ নিলেই তুমি ঠিক তোমার মতো আরো অনেক শিল্পীদের দেখা পাবে। তাদের সাথে সময় কাটাতে পারবে, কথা বলতে পারবে। বুঝেছ?
বুঝেছি।
যদি কম্পিটিশনে জেতার চেষ্টা করো আর যদি না জেতো তা হলে মন খারাপ হবে। আর যদি শুধু অংশ নাও জেতার চেষ্টা না করো তাহলে আনন্দ পাবে। বুঝেছ?
টুম্পা আবার মাথা নাড়ল, বলল, বুঝেছি।
বড় রাস্তাটা ফ্রিওয়েতে উঠে যাচ্ছিল, মিসেস হেনরিকসন ফ্রিওয়েতে না উঠে তার পাশের বিশাল পার্কিং লটে ঢুকে গেলেন।
টুম্পা অবাক হয়ে বলল, এখানে ঢুকছ কেন?
অন্যেরা যারা যাবে তারা সবাই এখানে আসবে।
আর কারা যাবে?
তোমাদের ক্লাশের ছেলেমেয়েরা। আমি যখন বুঝতে পেরেছি তোমাকে তোমার বাবা মা বাসা থেকে বের হতে দেয় না তখন আমার মনে হয়েছে টিপিক্যাল আমেরিকান টিনএজাররা কীভাবে স্ফূর্তি করে তোমার সেটা দেখা দরকার। মিসেস হেনরিকসন চোখ মটকে বললেন, তুমি কী ভেবেছ শুধু তুমি আর আমি যাব বলে এতো বড় ভ্যান নিয়ে রওনা দিয়েছি?
কথা বলতে বলতে মিসেস হেনরিকসন তার ভ্যানটা একটা ছোট ঘরের সামনে দাঁড় করালেন এবং টুম্পা অবাক হয়ে দেখলো তার ক্লাশের অনেক ছেলে মেয়ে হৈ হৈ করতে এগিয়ে এল। মিসেস হেনরিকসন টুম্পার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন, এতোগুলো টিন এজারকে আমি একা নিয়ে যেতে সাহস করি নি, তাই আমার সাথে জেসিকার মাও যাচ্ছেন! জেসিকার মা মিসেস রবাটসন আমার পাশে বসবেন–তুমি যাও, পিছনে তোমার বন্ধুদের সাথে বস!
টুম্পা দরজা খুলে বের হয়ে এল এবং সব ছেলেমেয়ে তাকে ঘিরে চেঁচামেচি করতে লাগলো। জেসিকার মা মিসেস রবার্টসন বললেন, আমরা যাচ্ছি একটা কম্পিটিশনে, তোমাদের দেখে মনে হচ্ছে তোমরা যাচ্ছ ফুটবল খেলতে!
মাইকেল দাঁত বের করে হেসে বলল, আমরা তো আগে কখনো আর্ট কম্পিটিশনে যাই নাই তাই ফুটবল খেলার মতো করেই আর্ট কম্পিটিশন করে ফেলব।