শামলাসহ মাথা নুইয়ে মনোহর বললো–না, না, সার। কেন, সার, কী ভাবে, সার? ঈশ্বরের ইচ্ছা হবে কেন মিউটনি?
ডানকান বললো–ডেখো, মানোয়ার তুমি সব জানে না, ডেখো। ক্রিমিয়ায় মার খাইয়ে ব্রিটিশ আর্মসের লজ্জা হইয়েছে। ভালো লজ্জা। মিউটিনিতে লজ্জা ধুইয়া গেলো। কেমন, কীবল?
ডানকান হাত ধোয়ার ভঙ্গি করলো। ক্লারাটের বোতল উপুড় করে গ্লাস ভরে নিলো।
একটু ভেবে, প্লেটটাকে বুড়ো আঙুল দিয়ে একটু ঠেলে দিয়ে কীবল বললো–তাহলেও আমি রিফর্ম সম্বন্ধে কিন্তু এখনো কেউ ভাবছে না, হোয়াইট। এটা দরকার, যদিও মিস্ নাইটিঙ্গেলই সেদিকে হয়তো একদিন দৃষ্টি দেবে। আর তাহলে তা হবে, অন্ড বাই ডাব কুইক মার্চেস। বিস্মিত কেট বললো–ক্রিমিয়ায় কি এর মধ্যে যুদ্ধ হয়ে গেলো নাকি? সংবাদটা যে তার কাছে নতুন সে বিষয়ে সন্দেহ রইলো না।
বিস্ময়টা বাগচীরও। তার ভ্রূ উঠলো। ক্রিমিয়া সম্বন্ধে ভাসা ভাসা কিছু সে শুনেছে, কিন্তু সেখানে কি বড়ো যুদ্ধ হয়েছে! কী হয়েছে সে যুদ্ধে? একবার কীবল আর একবার ডানকানের মুখের দিকে চাইলো সে। পরে হেসে বললো–দেখো, ডার্লিং, কেমন আছি আমরা। যুদ্ধের এসব খবর ও আমাদের কানে পৌঁছায় না। আমরা ঘড়ির বিপরীত গতিতে চলছি না তো?
ডানকান বললো–এইটা কি সত্য অজানিত ছিলো? স্ট্রেঞ্জ! ভালো আমার ধারণা ফরাসীরা জানিত। যেমন সেই ওয়ালি ফক্স পিয়েত্রো ফর উয়ান। এবং তাহাদের কাছে। মারাঠীরা এবং দিল্লীর সেই বুড়া শয়তান। নিশ্চয়ই তাহারা সেকালে জানে আমরা ক্রিমিয়ার বেকায়দা পড়ি, ভালো বেকায়দা। আর তখন তাহারা মিউটিনি করে।
কীবল হেসে বললো–এখন আর বেকায়দা নেই হোয়াইট। আর তোমার পেগান গডেস পূজার কথাও অনেক লোক জানে না। কিন্তু তুমি যে বলছিলে এখানে কি সত্যি স্কুল আছে। অর্থাৎ যাকে ইংরেজিতে স্কুল বলে?
ডানকান বললো–আ, সার উইলিয়াম, নিশ্চয়। এখানে এই হৃদলালের স্কুল। আমি তাকে সাহায্য করিব তুমি ডেখো। এটা হৃদলালেরই থিয়োরি যে এইসব স্কুল আমাদের বিপদে আমাদের পাশে দাঁড়াবে। এই থিয়োরিতে কিছু আছে। হুঁ হুঁ। দি জেন্টস ইন ক্যালকাটা গেভ আস মর্যাল সাপোর্ট।
কীবল বললো–দেয়ার্স নাথিং রং উইথ স্যার উইলিয়াম জোনস। ইজ দেয়ার? আমি বাস্তবিক স্কুলের ব্যাপারে ইনট্রেস্টেড। এবং সাংস্ক্রিট পড়িতে চাই।
হরদয়াল প্লেটের উপরে কাটা-চামচ শুইয়ে রেখেছিলো। এবার প্লেটটাকে মৃদুভাবে ঠেলেও দিলো। তার মুখ যেন বিরস, কিন্তু হেসে বললো– সে-আসুন একদিন স্কুলে। জাস্ট এ বিগিনিং দো।
বাবুর্চিরা সম্ভবত হরদয়ালের ভঙ্গির উপরেই চোখ রাখছিলো, তারা প্লেট বদলাতে শুরু করলো।
নতুন কোর্সের সঙ্গে আলাপটা ঝুঁকলো আজকের উৎসব শিবলিঙ্গ স্থাপনের কথায়। ততক্ষণে প্রত্যেকের প্লেটের সামনে একাধিক পানীয়ের গ্লাস জমেছে। কারো বেশি, কারো কম। বোঝা যাচ্ছে তারা প্রায় প্রত্যেকেই নানারকমের পানীয়ের স্বাদ নিয়েছে; কেউ হয়তো একই পানীয় গ্লাস বদলে একাধিকবার, অন্য কেউ বা একই গ্লাসে একাধিক পানীয় মিশিয়ে।
কীবল বললো–মিস্টার হৃদলাল, ধর্ম নিয়ে কথা বললে আশা করছি এ টেবলে কেউ দুঃখ পায় না। আজ যা দেখিলাম তা হয় অর্থোডক্স পেগানিজম, পাথরপূজা, না? আর। আমাদের হোয়াইট হয়তো রিফর্মড পেগানিজমের উপাসক হয়।
ডানকান পোর্ট ঢেলে নিয়েছে এক গ্লাসে, অন্যটিতে শ্যাম্পেন। যেন তা মাপ করে মিশালে নতুন কিছু হয়। সে হোয়া হোয়া করে হাসলো। বললো–সইত্য। এ, মানোয়ার, তোমার আইডল ছিলো। দ্যাট ব্ল্যাক নেকেড গ্যাল, ওয়েলফমড় দো। শি ওঅজ অ্যান আইফুল, আই বেট। মনোহর তাদেরই একজন যারা নিজের জ্ঞান সম্বন্ধে সচেতন। সে বললো–এটাও একরকমের আইডল, সার, তবে একে বরং ফ্যালাস অর্শিপ বলতে হবে।
কীবল যেন শিউরে উঠলো। বললো–আক্ গশ।
বাগচীর মুখে কী একটা হাড়ের কুচি পড়েছিলো? কিছু সময় যেন সেজন্যই বিব্রত রইলো। কিন্তু হঠাৎ সে বললো–বাট মাচ অব ইট ইজ সিম্বলিজম। অ্যান্ড ইন এভরি। রিলিজিআন দেয়ার আর সিম্বলস দ্যাট ক্যান বি মিসইন্টারপ্রিটেড। (ইহার অনেকাংশই প্রতীক ব্যবহার। সব ধর্মেই প্রতীক ব্যবহার হয় যার কদর্য ব্যাখ্যা করা সম্ভব)।
কীবল বললো–ইন পেগানিজম ডু ইউ সে।
বাগচী হাসতে হাসতেই বললো–হোয়াই, মাচ অব আওয়ার স্যাক্ৰামেন্ট ইজ সিম্বলিক। হাউ ডু ইউ ইন্টারপ্রেট ইউক্যারিস্ট ওয়েফার? (কেন, স্যাক্রামেন্টের অনেকটা সিম্বলিক। ইউক্যারিস্টের রুটির কী ব্যাখ্যা হবে)?
কীবলের মুখ লাল হয়ে উঠলো। স্যাক্রামেন্ট-ইউক্যারিস্টকে লিঙ্গোপাসনার মতো অপবিত্র বিষয়ের সঙ্গে তুলনা? সে বেশ শক্ত গলায় জিজ্ঞাসা করলো, মিস্টার বাগচী তালে ক্রিশ্চিয়ান নয়?
বাগচী কাঁটা-চামচ রাখলো।
ডানকান চোখ দিয়ে ইশারা করলো কীবলকে। এমনকী স্পষ্ট করেই বললো–নাও মিট হিম। অবশ্যই ইতিপূর্বে কীবলকে বাগচী সম্বন্ধে কিছু বলছে সে, আর এখন তা মিলেও যাচ্ছে যেন।
হেসে হরদয়াল বললো–বাগচী বলে থাকেন এখনো ক্রিশ্চিয়ান হতে পারলাম না।
বাগচী হাসলো। বললো–দেওয়ানজি,কথাটা মিথ্যাও নয়। লাখনাউ কিংবা দিল্লী কিলিং কোনটাকেই অন্তর থেকে ক্ষমা করতে পারিনি। এ রকম আর আছে?
ডানকান যেন চেয়ার ঘুরিয়ে বসলো। ঝাঁজের সঙ্গে বললো–হোয়াট ডু ইউ মিন–দিল্লী কিলিং!