মনোহর সিং বললো–ভগবানের কী সুবিচার। ইংরেজদের পক্ষেই এমন আবিষ্কার সম্ভব।
সে যে ইতিমধ্যে নতুন এক জমিদারবংশ স্থাপনের স্বপ্ন দেখছে তা ভিত্তিহীন নয়।
বাগচী কেটের দিকে অবাক হয়ে চেয়ে রইলো। বললো–এও যদি সত্যি, বিস্ময় বলতে আর কিছু রইলো না।
মৃদুস্বরে কেট বললো–আশ্চর্য, ইউ নেভার ক্যান টেল।
বাগচী বললো– মানুষ হয়তো শূন্যপথেও চলবে আর ইঞ্জিনই তা পারবে।
কেট হেসে বললো–তা কি সম্ভব যে মানুষ এঞ্জেল হবে? উই আর নট অব দি এয়ার। স্টিম, তার শক্তি, ইংরেজদের স্বজাতি-প্রীতি, মনোহরের ইংরেজ প্রশংসা নিয়ে আলাপ জমে উঠলো। তখন তৃতীয় কোর্স চলেছে।
কিন্তু কেউ কেউ থাকে যাদের শৈশবেনাক টিপে ধরে নিঃশ্বাসে সমতা রাখতে শেখানো হয়েছে। মৃদু হেসে হরদয়াল বললো, বাট দি ওয়াইন উইল চাইড! সে একটা নতুন গ্লাসে ক্লারাট ঢেলে কেকে এগিয়ে দিলো। নিজের গ্লাসটা পূর্ণ করে নিয়ে বললো–লেটস ড্রিঙ্ক টু হিউম্যান উইজডম অ্যান্ড বিউটি।
টেবলের দু-তিনটি গ্লাস শূন্যে চিনক করে উঠলো।
লাঞ্চের ভার তার নিজের বাবুর্চির উপরেই যদিও তাকে সাহায্য করতে পিয়েত্রোর বাবুর্চি বন্দাকে পাওয়া গিয়েছিলো। তার বাবুর্চি নিশ্চয়ই তার পদ শেষের ইঙ্গিত বোঝে। তখন তাদের রোস্টবিরিয়ানি নিয়ে আসতে দেখা গেলো।
ডানকান বললো–হৃদলাল, মাই ফ্রেন্ড হিয়ার ইজ এ সোলজার, এ সায়েন্টিস্ট অ্যান্ড এ সেন্ট অল ইন উয়ান। ইউ উইল লাভ টু নো হিম।
কীবল হাসিমুখে বললো–এ সোলজার ইয়েস,এ সায়েন্টিস্ট মে বি, বাট হাউ এ সেন্ট?
এইস্ট ইউ উয়ান অব দোজ এভানজেলিস্ট?
এই রসিকতা করতে পেরে ডানকান আত্মপ্রীতিতে হু হু করে হেসে উঠলো।
কীবল দুএক মুহূর্ত যেন এই রসিকতাটাকে অনুভব করলো, তারপর আলাপের ধারাটা বদলে নিলো। বললো, নিমন্ত্রণের কথায় সে আশঙ্কা করেছিলো কী ভয়ঙ্কর টেবলম্যানার্সের মধ্যে না পড়তে হয় কিন্তু এখানে ভয় পাওয়ার মতো কিছু নেই। ইটস এ রিলিফ। বোঝা গেলো সে লাঞ্চটাকে প্রকৃতপক্ষে উপভোগ্যই মনে করছে।
হরদয়াল চিন্তা করলো একই টেবলে বসে অন্যের টেবলম্যানার্স নিয়ে আলোচনা করা ইংরেজ আভিজাত্য কিনা তা ঠিক তার জানা নেই। যদিও ও ছোকরার ইংরেজিটা উচ্চারণে ও শব্দ বাছাইতে ভালো। কিন্তু তার কোনো কোনো চিন্তা জিহ্বায় ধারালো না হয়ে চোখের কোণে ঝকঝক করে।
বাগচীও তখন কিছু সমস্যায় পড়লো। মনস্তত্ত্বগত কারণ হয়তো কীলের কথা এবং কীবলের কথার মূলেও হয়তো মনস্তত্ত্বগত এই কারণ ছিলো যে সদ্য বিলেত-আগত তার চোখে এখানকার টেবলম্যানার্স ঠিক বিলেতীনয়। বাগচী ভাবলো টেবলের মাথায় সে, যদিও এটা তার বাড়ির ভোজ নয়। সে কি প্রথম ছুরি বসাবে রোস্টে?
সমস্যার সমাধান করলো ডানকান। সেই প্রথম ছুরি বসালো বাদামী করে ভাজা পিগলেট রোস্টে। মরেলগঞ্জ ইন্ডিগোর ম্যানেজার হিসাবে সেই কি এদিকের সব আসরের হেড নয়।
যেন এটাকে, ডানকানের এই ম্যানার্স বিচ্যুতিকে ঢাকতেই বাগচী বললো– তাড়াতাড়ি–এটা উৎসব বটে, কিন্তু আমাদের স্বীকার করতেই হবে মরেলগঞ্জের সেই উৎসবের তুলনায় এটা কিছু নয়।
খুশী ডানকান বললো–কোনটে মনে করছে বাগচী?
–লোকে যাকে এখনো হোআইট সাহেবের কালীপূজা বলে।
কীবল বিস্ময়ে ভ্রূ তুলে জিজ্ঞাসা করলো কী বললেন, কী পুজো?
বাগচীর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে মনোহর সিং বললো–সে যে কী নাচ গান, কী পুজো আর কত হাউই তুবড়ি।
–এঃ! কীবল বিস্ময়ে থই পাচ্ছে না।
মনোহর বললো–শট অনলি বেঙ্গল লাইটস সার, রকেটস, বুমবুম, থাউজান্ড রুপি ড্যান্সিং ফাউন্টেন্স অব ফায়ার। সে এই জায়গায় হাউই ও তুবড়ির উৎক্ষেপ বোঝাতে হাত ও আঙুলের যথোচিত ভঙ্গি করতে ছাড়লো না।
কীবলের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটলো। -সব্লাড ওঅজ ইট এ পেগান গড হোয়াইট?
ডানকান হাসলো-দি হেল ইট ওঅজ। এ গডেশ দো। সাম টাইমস ইউ হ্যাভ টু ইল্ড টু দা নাইট।
কৌতুক বুঝে কীবল বললো–অ্যান্ড হিয়ার ইন ইন্ডিয়া নাইট হ্যাজ হার ওয়ে। কি, এসব কি মিউটিনির পরে ঘটিয়া থাকে?
ডানকান বললো– (তার স্বরবর্ণকখনো কখনো বিশেষ চওড়া)-ওয়াল, সব পেগান ভালো না আছে। মানোআর এখানে ভালো পেগান হয়। ওয়াল তুমি কি জানো তাহার তিন ইস্ত্রি থাকে। সব ছোটোটি তেরো হবে। সি মাস্ট হ্যাভ হার ওন সুইটস।
কীবল কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু থমকে গিয়ে বললো–উই আর এ মিক্সড কোম্পানি, হোয়াইট। সে কেটের দিকে তাকালো। তার ইচ্ছা অনিচ্ছাকে কেয়ার না করে সেই রূপ তার ভাল লাগলো। সে বললো–ডেলিশাস। ইজ ইট পোলট্রি দো? হরদয়াল কেটকে। সাহায্য করে বললো–নো, ফ্রম এ হান্টার্স ব্যাগ।
কিন্তু ডানকান বললো–হঃ।
কিন্তু যেন সে মত বদলালো। কেটের উপস্থিতিকে মর্যাদা দিলো। ইতিমধ্যে কি তার মন টেবিলের সময়ের চাইতে ধীরে চলছে? বললো, কিন্তু মনোআর রাজপুট আছে। রিঅ্যাল রাজপুট। দে হেল্পড আস দা রাজপুটস। ইউ নো।
সে যেন সোৎসাহে পাশে দাঁড়ানো খানাবরদারকে ক্লারাট দিতে ইঙ্গিত করলো। কীবল বললো–কিন্তু এসবে তোমার পেগান গডেস পূজা করার আগুমেন্ট নেই। হোয়াইট, এখানে কি পিওর স্টিকিংএর সুবিধা আছে ডেওয়ানজি?
ক্লারাটটা হাতে নিয়ে ডানকান বক্তৃতার ঢঙে বললো–আনঅ্যালোয়েড পেগানরা ভালো হয় যাহারা ক্যালিকে মাদার বলে। অবশ্যই বিঅতিক্রম আছে। হৃদলাল এথা, আমি টোমাকে আবার ধন্যবাদি হৃদলাল, তোমার স্কুল ভালো চলে তো? এবং প্রিন্স! ইহাদের মতো না থাকিলে, জানো, এ জেলাতেই লাখনাউ হইয়া যেতো। দ্যাট ব্ল্যগর্ড শন অব এ বিচ পিয়েত্রো। কিন্তু ভালো খুবই ভালো। অ্যাডোলেসেন্স পার হওয়া কলে ঘটে। মিউটিনি ওঅজ গডসেন্ট।