সার রাজচন্দ্র বারান্দায় এলো। সারাদিন ট্রেনে চলার পরে এখন বিছানার কথা মনে হচ্ছে বটে। বারান্দা দিয়ে চলতে চলতে কুমারনারায়ণের কথা বলার ভঙ্গিটাকেই আবার ভাবলো। কেউ কি এমন করে ঘুরিয়ে বলে কথা আর হাসির আড়ালে চিরকাল লুকিয়ে থাকতো? হতে পারে, এই ছেলেটির জননী প্রবাসী বাঙালি পরিবারের মেয়ে। সে তো আমাদের রানীমাও ছিলেন। হয়তো সিপাহী বিদ্রোহের সমসাময়িক কালে ওসব দেশের কোনো রাজপুত্র অথবা সামন্তপুত্রকে ভালোবেসেছিলো। তারপর ছাড়াছাড়ি। এরকম হয়। পাশাপা। দুটো আলোকোজ্জ্বল ঘর থেকে পর্দার ফাঁক দিয়ে আলো এসে পড়েছে বারান্দায়। দুইটি আলোর চিত্রের মাঝখানে কোমল অন্ধকারটায় সার রাজচন্দ্র থেমে দাঁড়ালো। তারপর আলোকোজ্জ্বল ড্রয়িংরুম পার হয়ে তার পাশের ঘরটায় ঢুকলো।
সেটা শোবার ঘর। কিন্তু শয্যা থেকে অদূরে বসবার বন্দোবস্ত। টিপয়ের উপরে আলোয় হীরার মতো ঝকঝকে দুটি হুইস্কির গ্লাস। পাশে একটি হুইস্কির বোতল। প্ল্যাটিনাম ব্লোন্ড হৈমী টিপয়টার সম্মুখে বসে। সার রাজচন্দ্রকে ঢুকতে দেখে সে বললো–ঘুমোতে হবে, না কী?
রাজচন্দ্র টিপয়টা অন্যদিকে বসলো। গ্লাস দুটোকে হুইস্কিতে পূর্ণ করলো। একবার ভাবলো, কুমারনারায়ণ রায়ের কথা বলবে। কিন্তু বললো, আচ্ছ হৈমী, হিন্দুরা কি সচরাচর সোনার মল পরে? কী একটা সংস্কার আছে না?
সোনা পায়ে পরা লক্ষ্মীকে অপমান? হৈমী জিজ্ঞাসা করলো, তাই বলছো? এত রাতে?
এমন হতে পারে, হৈমী, তা সত্ত্বেও কোনো শেঠানী যদি তা পারে, তাহলে কি এই প্রমাণ হয় সে খুব দাম্ভিকা? খুবই দাম্ভিকা? শুধু ধনের দম্ভ নয়–
ঘুমোবে না আজ? আমার ঘুম পায়, বাপু।
হুইস্কির গ্লাসটাকে এক চুমুকে প্রায় শেষ করলো রাজচন্দ্র। বললো–নিশ্চয় নিশ্চয়। চলো, এবার আমরা ইউরোপ ঘুরে আসি। যাবে? তুমিও তো ঘুরতেই ভালোবাসো। বেশ এটাই কথা রইলো।