রেখা বললে, কাঁদছো কেন?
আবদুল খালেক বললে, কি জানি, আজকাল আমার এই রকম হয়। আগে কখনো হতো না। আগে কখনো এভাবে ভাবি নি। এভাবে মনে পড়ে নি। এখন মনে পড়লেই এরকম হয়। তুমিই বলো না, কেন এরকম হয়?
রেখা হাত বুলিয়ে দিল আবদুল খালেকের মাথায়। আবদুল খালেক বললে, সেই বোধহয় প্রথম তার ছিঁড়ে গেল সবকিছুর, সে তার আর কখনো জোড়া লাগলো না। আর কখনো জোড়া লাগবে না। মনি ভাইজান পারে নি, পারতে চায় নি। যদি পারবে, তাহলে ওভাবে মরতে গেল কেন। মার সামান্য একটা কথায় অতোগুলো ঘুমের বড়ি খেতে যাবে কেন, তা না হলে? তুমি পারতে? ঐ ছেঁড়া তার জুড়ে দিতে? স্টিমারে সারারাত আমরা দাঁড়িয়ে কাটিয়েছিলাম। সারাক্ষণ আমি মনি ভাইজানের পাশে সারাক্ষণ। এক একটা ঘাট আসে, তারপাশা, ভাগ্যকুল, ষাটনল, মনি ভাইজান হু-হু করে কাঁদতে থাকে। বলতে থাকে, তারপাশা তোকে আমি মারবো, ভাগ্যকুল তোকে আমি মারবো, নদী-তোকে আমি মারবো, শেষ মারা আর শেষ হয় না কিছুতেই–
রেখা বললে, থাক, তুমি চুপ করো, ঘুমোও, তুমি যে কী—
আর কোনো কথা বললে না আবদুল খালেক। এক সময় বোধহয় তার তন্দ্রা এলো। ঘুমোবার আগে রোজ যা হয়, সেই হাত-পা মুড়ে, হাঁটু দ-করে টুকুর মতো এই এতোটুকু হয়ে গেল সে। তারপর এক সময় হাতড়ে হাতড়ে রেখার একটা পায়ের ওপর হাত রেখে সে বললে, আমাকে কোলে নাও মাধুরী–