অনু আমতা আমতা করে বললে, আমি কিন্তু তোমাকে অতোসব বকাবকি করতে পারবো না!
দূর বোকা! খিস্তি-বিখিস্তি না করলে, মেরে গতর চুরিয়ে না দিলে, তোর মাগী কি ঠিক থাকবে নাকি? ভাতারের কিল না খেলে মাগীরা যে নাঙ ধরে তা-ও জানিস না বুঝি? আমাদের ঋষিপাড়ায় শিউশরণের সেবার কি হলো! বৌয়ের ওপর ভোদা মেনিমুখোঁটার অগাধ বিশ্বাস, ঝোপ বুঝে কোপ মেরে মাগীটা চোখে ধুলো দিতে শুরু করলো ঐ ভালোমানুষির সুযোেগ নিয়ে। রোজ রাত্তিরে শিউশরণ যখন নেশার ঘোরে আধমরা, মুখে কুকুরে মুতে দিলেও বোঝার যো নেই, রাক্ষসী বারোভাতারীটা তখন অন্য নাগরের সঙ্গে পা টিপে টিপে পিরিত করতে বেরিয়ে যায়। শেষে ধরা পড়লো একদিন। ঘরের দাওয়ায় বসে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো আঁটিচোষা কেলেভূতটা, আর ওর মাগীটা তোর ঘর করবো না এই ঊনপাঁজুরে মিনসে তোর ঘর আর করবো না বলে মুখ ঝামটা দিয়ে তেজ দেখাতে লাগলো সমানে।
ওসব বাদ দাও! অনু বিরক্ত হয়েই বললে।
সরুদাসী তার দিকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকালো, তারপর হেসে লুটিয়ে পড়ে বললে, বুঝেছি বুঝেছি, তুই অন্য কথা বলবি ঐ সময়, পেটে পেটে এতো–-ওরে বজ্জাত কম না তো তুই। ওরে তিলেখচ্চর–
ধরো হরিয়া যদি আমাদের সঙ্গে শয়তানি করে?
লাথি না! অতো খ্যামাতা থাকলে তো! সে আমি একাই সামলাবো, তোকে অতোসব ভাবতে হবে না। যেমন বেটা তেমনি বাপ। হরিয়ার মড়াখেগো বাপটা দিনরাত গাঁজা-চরসে মশগুল হয়ে থাকে, আর ওর মড়াঞ্চে পোয়াতি মাটা একমুনে ধামার মতো পেট নিয়ে দোরে দোরে ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে শুধু নাকিসুরে কাঁদুনি গেয়ে বেড়ায়।
অনু হাবার মতো হাঁ করে নীরবে শুনতে থাকে।
তোকে একটা কথা বলা হয় নি, প্যানপ্যান করে নাকিসুরে কাঁদুনি গাইলে কি হবে ওর মা মাগীটাও কম নচ্ছার না, নটঘট লাগাবার ওস্তাদনী যাকে বলে। ঐ যে শিউশরণের কথা বললুম তোকে, ব্যাপারটা হয়েছিলো ওর থুথুড়ি মাকে নিয়ে। একশো তিরিশ বছর বয়েস বুড়ির। বাবুদের বাগানে ঝুরিওলা বট আর অশথগুলো বয়সে বুড়ির নাতজামায়ের চেয়ে ছোট হবে। বাঁ গালে এক মস্ত তিল ছিলো বুড়ির, তিলের গায়ে ছিলো কয়েকটা চোঁচের মতো লোম। হরিয়ার মা মাগী ঘুমন্ত বুড়ির ঐ তিলের নোম চুরি করে বেচে দেবে না, সে এক হুলস্থুল ব্যাপার। তাড়ির ফেনার মতো মুখে গাঁজলা তুলে হাত-পা টেনে খিচে খিচে বুড়ি তো পটল তুললো, পাড়াসুদ্ধ সবাই মিলে মেরে তুলোধােনা করে ছাড়লো মাগীকে। তবু কি এখনো শিক্ষা হয়েছে মাগীর, টোটকা-ফোটকা এখনো চালায় মৌকা। পেলে। চুল কাটা, শাড়ির আঁচল কেটে আনা, পান-সুপুরি চালান করা, শতেক বিদ্যের জাহাজ মাগী। হাতযশও ছিলো একসময়; বাড়ি বাড়ি থেকে রীতিমতো ডাক আসতো। ওর ওই কূটকচালে নষ্ট স্বভাবই ওকে ডুবিয়েছে। এখন আর কেউ বিশ্বাস তো করেই না, বরং ওর নাম শুনলে লোকে ক্ষেপে যায়, বলে মাগী জ্যান্ত ডাইনী, পেটে বাণ মেরে বাচ্চা নষ্ট করতে না পারলে ওর নাকি ঘুমই আসে না চোখে।
প্রায় আপন মনে, কেউ শুনলো কি শুনলো না তার ভ্রক্ষেপ না করেই অনর্গল কথার তুবড়ি ফোটাতে থাকে সরুদাসী; একটা স্রোত—তোড়ের মুখে সবকিছু খড়কুটোর মতো ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চায়।
অবাক হয় অনু। সরুদাসী নিজেই আশ্চর্য রূপময় এক জগৎ। তার সবকিছুই কমবেশি আকর্ষণীয়। গল্প বলার ভঙ্গি, হাত পা নাড়া, ঠোঁট উল্টানো, চোখ বড় বড় করে তাকানো, সবকিছুর সঙ্গেই বুঝিবা মখমলের (মালীরা কখনো দূরে যায়?) সুন্দর কোমলতা জড়িয়ে আছে। স্বপ্নের ভেতরে নিজেকে দোল খাওয়াচ্ছে সরুদাসী,—নিঃসঙ্কোচ, অনর্গল, সহজ, তীব্র, আবার আচ্ছন্ন।
বাঞ্ছারামপুরের কথা মনে পড়লো অনুর। রানিফুফুও কখনো কখনো অনর্গল কথা বলে, কিন্তু তার ভেতরে সত্যিই যেন প্রাণ নেই। খুব ভোরে উঠে ফজরের নামাজ শেষ করে এই যে মুখে কথার খৈ ফোটাতে শুরু করে সারাদিন তার আর কোনো অন্ত নেই। সকলে কাজে ঢিলে দিচ্ছে, ফাঁকি দিচ্ছে, সংসারের ক্ষতি করছে এক ধরসে সবাই, একপাল কাজের মানুষের বিরুদ্ধে অন্তহীন তার অভিযোগ। চোখের সামনের জিনিস খুঁজে না পেয়ে তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠা, কারণে-অকারণে পরচর্চায় জুবড়ে পড়ে থাকা, রানিফুফু বলতে এই-ই বোঝায়। রানিফুফু বিধবা বলে মুখ নিচু করে সবাই নীরবে সবকিছু মেনে নিতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। রানিফুফু যখন তুচ্ছ একটা কারণে এইরে ঘরদোর নোংরা করে ফেললি কিংবা এ বাড়িতে অনেক বৌ শোবার সময় একটা করে কুলোয় না এইসব ঝাড়তে থাকে তখন রীতিমতো অসহ্যই মনে হয় সকলের কাছে। অন্যের দোষ ধরতে জুড়ি নেই ফুফুর, ভুলেও কখনো প্রশংসা করে না কাউকে, এক অন্য ধাতের মানুষ। তুলনা চলে না সরুদাসীর সঙ্গে, অনু মনে মনে হিশেব-নিকেশ করলো বহুভাবে।
একসময় তার বাঁ হাতের কনুয়ের কাছে একটা গেঁয়ো পিঁপড়ে কামড়ে দিলো। জায়গাটা ফুলে লাল হয়ে উঠলো প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই। তাকে চুলকাতে দেখে সরুদাসী বললে, চুলকাচ্ছে বুঝি? ঠাকুর-দেবতা মানবি না তো হবে না ঐসব! ঠিক আছে, আমি ঘন্টাকন্নের কাছে প্রার্থনা করবো তোর জন্যে, দেখিস সব চুলকানি সেরে যাবে। জানিস, আমার বাবার মায়ের দয়া হয়েছে। লোহাগাড়িয়া বের হয়েছে সারা গায়ে। আমাদের খু-উ-ব চিন্তা।
হাসপাতালে যায় না কেন?
কেন, আমাদের কি ঠাকুর-দেবতা নেই নাকি? তুই না একটা জ্যান্ত বুন্ধু! তোকে শিখিয়ে-পড়িয়ে মানুষ করে নিতে গিয়ে আমার নিজের মাথাটাই না শেষ অব্দি খারাপ হয়ে যায়। তাতে অসুবিধে নেই, তুই খুব তাড়াতাড়ি সব শিখে যাবি। নচ্ছার হরিয়াটা কি বলে জানিস? বলে খেলতে খেলতেই তো মানুষ সব শেখে।