এরই মধ্যে একদিন রাত্তিরে হঠাৎ অধ্যাপক মিস থাম্পির বাড়ি গিয়ে হাজির।
মিস থাম্পি কিছুমাত্র অবাক না হয়ে শ্লেষের সুরে বললেন, হঠাৎ কি মনে করে আমার কাছে?
অধ্যাপক ঘুমের ঘোরে উত্তর দিলেন, তুমি যে আমায় ডাকলে।
–আমি ডাকলাম? মিস থাম্পি হেসে উঠলেন। তারপর বললেন, যদি ডেকেই থাকি তাহলেও কি আমার মতো নগণ্য একটা মেয়ের বাড়িতে এই রাত্তিরে আপনার মতো এক জন বিশিষ্ট অধ্যাপকের আসা উচিত?
অধ্যাপক এর উত্তর দিতে পারেন নি। তাঁর দুচোখ তখন ঘুমে জড়িয়ে আসছিল।
এমনিভাবেই মিস থাম্পি এক নিরীহ অধ্যাপককে সম্মোহিত করে নিষ্ঠুর খেলায় মেতে উঠলেন। প্রায় প্রতিদিন গভীর রাত্রে অধ্যাপককে ডেকে নিয়ে আসেন। এক বিকৃত ভোগের খেলায় মেতে থাকেন তিনি। তাকে খুশি করেই অধ্যাপক ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম ভাঙলে তার আর কিছুই মনে থাকে না। তিনি শুধু অবাক হয়ে যান। মিস থাম্পির বিছানায় শুয়ে আছেন দেখে তিনি ভীষণ লজ্জা পান। ছিঃ ছিঃ এ কী করে সম্ভব বলতে বলতে ছুটে পালিয়ে যান।
মিস থাম্পি এতে এক ধরনের আনন্দ পান বটে কিন্তু ঠিক সুখ পান না। এ যেন জোর করে কৃত্রিম উপায়ে পুরুষসঙ্গ আদায় করা। তা তো তিনি চান নি। তিনি চেয়েছিলেন ভালোবাসা।
তবু তিনি অধ্যাপককে ছাড়তে পারেন নি। বেঘোর অবস্থাতেও যদি মানুষটা দুটো ভালোবাসার কথা বলেন, যদি কাছে টানেন তাহলে সেইটুকুই লাভ। রক্তমাংসের ঐ দেহটা যে কিছুক্ষণের জন্যেও তাঁরই–অন্য কারও নয়–এইটুকু মনে করেই তাঁর আনন্দ।
একদিন মিস থাম্পি একটা ফন্দি আঁটলেন। অন্য দিনের মতোই অলক্ষ্যে থেকে হিপনোটাইজ করে অধ্যাপককে ডেকে আনলেন। সম্মোহিত অধ্যাপক যখন মিস থাম্পির হাতটা নিজের হাতে নিয়ে প্রেমের কথা বলে যাচ্ছিলেন তখন থাম্পি অধ্যাপকের হাতে একটা কাগজ আর কলম গুঁজে দিয়ে বললেন, আপনি যেসব কথা বলছেন, তা এই কাগজে লিখুন।
সঙ্গে সঙ্গে অধ্যাপক লিখলেন–I love you dearly and want to have you as my life-partner by marriage.
লেখাটুকু পড়ে মিস থাম্পির বৃথাই রোমাঞ্চ হল। তবু বললেন, নিচে সই করুন।
অধ্যাপক সই করলেন।
তারিখ দিন।
অধ্যাপক তারিখ বসালেন।
মিস থাম্পি কাগজটি যত্ন করে রেখে দিলেন।
মাস ছয় পর।
মিস থাম্পি লক্ষ্য করলেন দিন দিন অধ্যাপকের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ছে।
তা তো পড়বেই। অমন সম্মানের চাকরিটা গেল। বেকার জীবন। লোকে তাকে দেখলে হাসাহাসি করে। বলে–পাগলা প্রফেসার।
এ যন্ত্রণা কে আর কতদিন সহ্য করতে পারে?
এদিকে যে মেয়েটির সঙ্গে তার বিয়ের কথা–মিস থাম্পি খবর নিয়ে জানলেন সেই মেয়েটির বাড়ির লোকরাও পাগলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতে রাজী নন। মেয়েটি কান্নাকাটি করছে।
অধ্যাপকের শরীর আর মনের অবস্থা দেখে মিস থাম্পি চিন্তায় পড়লেন। সম্মোহনের সাহায্যে তাকে আবার চাঙ্গা করা যায়। কিন্তু সে তো সাময়িক। তাছাড়া একজনের ওপর বার বার সম্মোহন প্রয়োগ করলে বিশেষ ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা।
তখন একদিন তিনি প্রফেসারকে ডেকে বললেন, আপনি কি রকম লোক যে একটা কলেজ থেকে চাকরি গেছে বলে অন্য কোথাও চেষ্টা করছেন না?
অধ্যাপক ম্লান হেসে বললেন, সবাই যে বলে আমি অসুস্থ। অসুস্থ লোককে কেউ চাকরি দেয়?
মিস থাম্পি বললেন, না, আপনি অসুস্থ নন। আমি বলছি আপনি সম্পূর্ণ সুস্থ। লোকে শত্রুতা করে আপনার বিরুদ্ধে লেগেছিল।
অধ্যাপক বললেন, চাকরি করেই-বা কি হবে? আমার জীবনে আর কোনো আনন্দ নেই। আমার সব আশা শেষ হয়ে গেছে।
মিস থাম্পি বললেন, না, কিছুই শেষ হয় নি। আমি বলছি সব ঠিক আছে।
এই বলে শহরের বাইরে একটা কলেজের ঠিকানা দিলেন। এখানে একজন ফিলজফির প্রফেসার দরকার। আপনি অ্যাপ্লাই করুন।
মিস থাম্পির প্রেরণায় অধ্যাপক দরখাস্ত করলেন। তারপর দুমাসের মধ্যে সেই কলেজে চাকরি পেয়ে গেলেন। আর সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর পাণ্ডিত্যে আর অধ্যাপনার গুণে ছাত্ররা মুগ্ধ হয়ে গেল। কিছুদিনের মধ্যেই অধ্যাপক তার সুনাম আর সম্মান ফিরে পেলেন। অধ্যাপক সুস্থ হয়ে উঠলেন।
মিস থাম্পি সব খবরই রাখেন। যেদিন শুনলেন তাঁর প্রাণপ্রিয় অধ্যাপককে সম্বর্ধনা দেওয়া হচ্ছে সেদিন তিনি গোপনে একটু হাসলেন। কিন্তু তিনি আর কোনো দিন প্রফেসারকে সম্মোহন করে ডাকেন নি।
না ডাকলেও একদিন অধ্যাপক নিজেই হাসিমুখে মিস থাম্পির সঙ্গে দেখা করতে এলেন। এলেন প্রায় এক বছর পর। তবে একা এলেন না। সঙ্গে সুন্দরী একটি মেয়ে। অধ্যাপক আলাপ করিয়ে দিলেন–এরই নাম এলিশ। এর সঙ্গেই আমি engaged ছিলাম। সামনের মাসে আমাদের বিয়ে।
মিস থাম্পি এলিশকে সাদর অভ্যর্থনা করলেন। ওরা চলে যাবার সময়ে মিস থাম্পি প্রফেসারকে বললেন, আপনার সঙ্গে আমার বোধহয় আর দেখা হবে না।
প্রফেসার অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কেন?
–আমি সব ছেড়ে এখান থেকে চলে যাচ্ছি।
–কোথায়?
–তা এখনো ঠিক করি নি।
–তুমি যেখানেই থাক আমায় চিঠি দিও।
মিস থাম্পি তার কোনো উত্তর দেন নি। শুধু একটু হেসেছিলেন।
তারপর সুযোগমতো প্রফেসারকে আলাদা করে ডেকে তাঁর হাতে একটা খাম দিয়ে বললেন, এটা পড়ে দয়া করে ছিঁড়ে ফেলে দেবেন। দেখবেন যেন অন্য কারো হাতে না পড়ে।
চিঠিতে মিস থাম্পি সব কথাই খুলে লিখেছিলেন। অকপটে স্বীকার করেছিলেন তাঁর অপরাধের কথা। শেষ দুটি ছত্র এইরকম–কোনো প্রত্যাখ্যাতা মেয়ের মর্মযন্ত্রণা উপলব্ধি করার ক্ষমতা যদি আপনার থাকে তাহলে নিশ্চয়ই তাকে আপনি ক্ষমা করবেন।