সোয়ানা-ফুয়ানা নিয়ে তুমি যে টেনশন ফ্রী হয়েছ এটা তোমাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে এবং খুবই ভাল লাগছে। তোমাকে মায়াবতী লাগছে। তবে তোমার ম্যানেজার বলছিল তুমি নাকি মায়াবতীর সঙ্গে সঙ্গে গ্যাসোবতী হয়েছ। গ্যাস ছেড়ে আসার জন্যে সিঙ্গাপুর যাচ্ছ।
খালা গম্ভীর গলায় বললেন, গ্যাসোবতী হয়েছি মানে — কি ধরনের কথা বলছিল। গুরুজনদের সঙ্গে কথা বলার সময় সম্মান রেখে কথা বলবি না? আমি তোর খালা না? আমি কি তোর ইয়ার-বান্ধবী?
অবশ্যই তুমি আমার খালা। ধন্যবতী খালা। আমাকে ডেকেছ কেন বল?
তাড়াহুড়া করছিস কেন? বলব। তোকে খুব জরুরী কাজে ডেকেছি। গুছিয়ে না। বললে তুই বুঝবি না। সময় নিয়ে বলতে হবে। তুই তো একেবারে কাকের মত হয়ে গেছিস, খুব রোদে রোদে ঘূরিস?
হুঁ, ঘুরি।
আজকের জন্যে ঘোরাঘুরি বাদ দে। বাড়িটা নতুন করে ঠিকঠাক করেছি। ঘুরে ফিরে দেখ, মজা পাবি। সপ্তাহখানিক পরে এলে সোয়ানা পাবি। আর্কিটেক্ট ডেকে সোয়ানা বানাতে বলে দিয়েছি। রোজ রোজ গুলশানে গিয়ে পোষায় না।
ভাল করেছ।
সোয়ানাটা বানানো হলে তোর যখন ইচ্ছা করে সোয়ানা নিয়ে যাবি। দারোয়ানকে বলে দেব— আমি না থাকলেও ঢুকতে দেবে।
থ্যাংক য়ু।
একটা সুইমিং পুল দেবার ইচ্ছা ছিল। আর্কিটেক্ট বলল, সম্ভব না। জায়গা নেই। ছাদের উপর যে করব সে উপায়ও নেই। সুইমিং পুলের লোড নেয়ার মত স্টাকচারাল ষ্টেংগথ বাড়ির নেই।
নতুন বাড়ি করছ না কেন?
নতুন বাড়ি করার কথা মাঝে মাঝে মনে হয়। বাড়ি করা কোন ব্যাপার না। জলশানে তোর খালু জায়গা কিনে রেখেছিল। ভাবলাম কি দরকার পুরানো বাড়িতে তো ভালই আছি। তাছাড়া তোর খালুর এই বাড়িতে আছে। মানুষটা তো হারিয়েই গেল, তার স্মৃতিটা থাক। কি বলিস?
ঠিকই বলছি।
আমার ম্যানেজার কেমন দেখলি?
স্যুট পরা ম্যানেজার?
আমিই বলেছি স্যুট পরতে। স্মার্ট লাগে। পায়জামা-পাঞ্জাবী পরা একটা লোকের কথায় মানুষ যতটা গুরুত্ব দেয় স্যুট পরা মানুষের কথায় তারচে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়।
মানুষটা কে তার উপরেও কিছুটা নির্ভর করে। নেংটি পরা মানুষের কথাও লোকজন খুব গুরুত্ব দিয়ে শুনে, যদি মানুষটা হয় মহাত্মা গান্ধী।
ফালতু কথা বলিস না তো হিমু, মহাত্মা গান্ধীকে আমি ম্যানেজার হিসেবে পাব। কিভাবে? আমি যা পেয়েছি। তাই ভাল। খুব চালাক চতুর ছেলে। মাছির মত চারদিকে চোখ। সব দেখছে। সমস্যা হলে নিজেই ডিসিশান নিচ্ছে, তেমন প্রয়োজন হলে আমাকে জানাচ্ছে। কোটি কোটি টাকার ব্যাপার বুঝতেই তো পারছিস।
টাকা এখনো খরচ করে শেষ করতে পারনি?
কি বলছিস তুই? তোর কি ধারণা, হাতে টাকা পেয়ে দুই হাতে উড়াচ্ছি? খুব ভুল ধারণা। খরচ তো অবশ্যই করছি। টাকা তো খরচের জন্যেই। ব্যাংকে জমা রেখে টাকার ডিম পাড়ানোর জন্যে না। তবে খরচ-টরিচ করেও তোর খালু যা রেখে গেছে সেটাকেও বাড়িয়েছি। গুলশানের এত বড় জায়গা শুধু শুধু ফেলে রেখেছিল –রিয়েল এষ্টেট কোম্পানিকে দিয়ে দিয়েছি। আমাকে চারটা ফ্ল্যাট দিচ্ছে, প্লাস এক কোটি টাকা ক্যাশ — বুলবুলই সব ব্যবস্থা করেছে।
বুলবুল তোমার ম্যানেজার?
হুঁ, ভাল নাম রকিবুল ইসলাম। ডাকনাম বুলবুল। আমি বুলবুলই ডাকি।
বুলবুল সাহেব তাহলে তোমার ডান হাত?
তা বলতে পারিস— খুব ওস্তাদ ছেলে। হঠাৎ করে তোর খালুর এক আত্মীয় সেদিন বের হল, সৎ বোন। সম্পত্তির ভাগ নিয়ে হৈচৈ শুরু করল। ছোট আদালতে মামলাও করে দিল। বুলবুল তাকে এমন প্যাচে ফেলেছে যে তার চৌদ্দটা বেজে গেছে। এখন কেঁদে কুল পাচ্ছে না। আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। আমি তামান্নাকে বললাম, বলে দাও আমার সঙ্গে দেখা হবে না। তারপরেও যাবে না। শুরু করেছে। কান্নাকাটি। আমি তামান্নাকে বললাম, যেভাবে পার ঐ মহিলাকে বিদায় করা। একবার বলেছি দেখা করব না –দেখা করব না।
তামান্না আবার কে?
ও আচ্ছা, তামান্নার কথা তো তোকে বলা হয়নি—আমার পি.এ। বুলবুল যেমন শক্ত, তামান্না তেমনি নরম। উঁচু গলায় কাউকে কোন কথা বলা তার পক্ষে সম্ভব না। তুই তার সঙ্গে একটু কঠিন হয়ে কিছু বলবি ওমি দেখবি মেয়ের চোখ ছলছল করছে।
তামান্নাকে দেখছি না তো।
দেখবি। আজ রোববার তো, ওর আসতে দেরি হবে। রোববার সে তার সংসারের জন্যে বাজার করে। সংসার মানে ভাই-বোন, মা-বাবার সংসার। আমরা বিয়ে করেনি। বিয়ে করবেই বা কিভাবে ঘাড়ে এত বড় সংসার। যাই হোক, ওকে নিয়ে আর তোকে নিয়ে আমার একটা প্ল্যান আছে।
আমি ঘাবড়ে গিয়ে বললাম, এই জন্যে তুমি আমাকে আনিয়েছ?
খালা হাসিমুখে বললেন, তোকে আনিয়েছি। অন্য কারণে। সেটা এখন না, পরে বলব। তার সঙ্গে তামান্নার সম্পর্ক নেই। যাই হোক, তুই তামান্নাকে দেখ। তার সঙ্গে কথাবার্তা বল। সারাজীবন পথে পথে ঘুরবি নাকি? হিমুগিরি তো অনেকদিন করলি, আর কত।। ঘর-সংসার করবি না? মুসলমান ধর্ম, হিন্দু ধর্ম না –সংসার ধর্মই আসল ধর্ম।
মেয়েটা দেখতে কেমন?
সাধারণ বাঙালি মেয়ের মত। সাধারণের চেয়ে একটু ডাউনও হতে পারে। তবু খুব বেশি ডাউন না। চলে। আর তুই নিজেও তো বাগদাদের রাজপুত্র না। চেহারা করেছিস কাকের মত, চাকরি নেই, কিছু নেই। কাকের মতই এটোকাটা কুড়িয়ে খাচ্ছিস। যে মেয়ে তোকে বিয়ে করতে রাজি হবে বুঝতে হবে তার ব্ৰেইনে সমস্যা।
তামান্না তো তাহলে রাজি হবে না।
সেটা আমি দেখব। তুই একটা কাজ কর, হাত-মুখ ধুয়ে মোটামুটি ভদ্র ভাব ধরার চেষ্টা কর। এখনও খালি পায়ে থাকিস?