আমি আপনাকে চিনতে পেরেছি। আপনি খুব উঁচু পদের একজন মিলিটারী অফিসার না?
আমি সেনাবাহিনীর একজন ব্রিগেডিয়ার। স্ত্রী কন্যাদের নিয়ে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছি।
অনেককাল আগে আপনি আমাকে একটা লিফট দিয়েছিলেন। এক প্যাকেট সিগারেট দিয়েছিলেন। মনে পড়ছে?
ও আচ্ছা হ্যাঁ, মনে পড়েছে।
আমি সেই ব্যক্তি। আমার খুব ইচ্ছা ছিল আবার যেন আপনার সঙ্গে দেখা হয়। দেখা হয়েছে।
আমি কি আপনার নাম জানতে পারি?
জানতে পারেন। কিন্তু নাম জানার দরকার আছে কি? আমি আপনার নাম জানি না। আপনিও আমারটা জানেন না। আমরা না হয় আমাদের নাম নাই জানলাম। রাত অনেক হয়ে গেছে। আপনারা রওনা হয়ে যান।
আমি ব্যাঙচিকে নিয়ে শালবনে ঢুকলাম। দুজনে এগুচ্ছি –ক্ৰমেই ঘন বনে ঢুকে যাচ্ছি। ব্যাঙচিকে বললাম, কি রে ভয় লাগছে?
ব্যাঙচি বলল, একটু লাগছে।
ক্ষিধে লাগছে?
হ্যাঁ।
আজ তুই জোছনা খেয়ে পেট ভরাবি।
জোছনা কি করে খাব?
ভাত মাছ যেভাবে খায় সেভাবে খাবি। হা করবি, মুখে চাঁদের আলো পড়বে। সেই আলো কোৎ করে গিলে ফেলবি। তারপর দেখবি আর কোনদিন কিছু খেতে ইচ্ছা! করবে না। তোর ক্ষিধে রোগ সেরে যাবে।
সত্যি?
হ্যাঁ সত্যি।
বনভূমিতে মোটামুটি একটা ফাঁকা জায়গা পাওয়া গেল। জায়গাটা চাঁদের আলোয় ভরে গেছে। আমি আমার দীর্ঘ জীবনে এমন আলো দেখিনি। ব্যাঙাচির দিকে তাকালাম। সে চাঁদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর পর মুখ বন্ধ করে জোছনা খাবার ভঙ্গি করছে। ব্যাঙচি এক ধরনের খেলা খেলছে। কিন্তু –সে জানে না। এই খেলা তার রক্তে ঢুকে যাচ্ছে। বাকি জীবনে সে আর এই খেলা থেকে মুক্ত হতে পারবে না।
ব্যাঙচি হঠাৎ অবাক গলায় বলল, হিমু কি ব্যাপার বল তো? আমি চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছি হঠাৎ দেখি ধাপ করে চাঁদটা অনেকখানি নিচে নেমে এসেছে। হচ্ছেটা কি?
আমি কিছু বললাম না। শুধু যে চাঁদ নিচে নেমে আসছে তানা। আমরা যে জায়গাটায় দাঁড়িয়ে আছি সেটাও বড় হতে শুরু করেছে। একসময় তা বিশাল এক খোলা প্ৰান্তর হয়ে যাবে। সেখানে থৈ থৈ করবে অবাক জোছনা। চাঁদ নেমে আসবে হাতের কাছে। হাত বাড়ালেই চাঁদ স্পর্শ করা যাবে। আমি অপেক্ষা করে আছি।
(সমাপ্ত)