আমি বললাম, আমাদের জন্যে ব্যস্ত হবেন না। আমরা অপেক্ষা করব। আপনার মনে হয় শরীর ভাল না। আপনি বিশ্রাম করুন।
আমার শরীর আসলেই বেশ খারাপ। গায়ে জ্বর আছে। আপনাদের একা বসিয়ে রাখতে খুব খারাপ লাগছে— কিন্তু উপায় নেই।
ব্যাঙচি বলল, বাসায় টেলিফোন নেই?
টেলিফোন আছে। দুদিন ধরে ডায়ালটোন নেই। আমার এক ভাইকে থানায় খোঁজ নিতে পাঠিয়েছি। আপনারা দয়া করে পায়েস খান।
আমি পুরোবাটি পায়েস একাই খেয়ে ফেললাম। ব্যাঙচি খেল না, সে ক্ষুধা নষ্ট করবে না। সে ফিসফিস করে একবার বলল, বারোটা পাঁচশ বাজে হোটেল তো সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
আমি বললাম, তুই হোটেল বন্ধ নিয়ে দুশ্চিন্তা করিস না। ওসি সাহেব কাচা কাজ করবেন না। তিনি খাবারের অর্ডার আগেই দিয়ে রেখেছেন।
রাত একটায় রীনা ভাবীর ভাই থানার খবর নিয়ে ফিরল। ওসি সাহেবের ষ্ট্রোকের মত হয়েছে। তাকে সোহরাওয়ার্দিতে নেয়া হয়েছে। অবস্থা ভাল না।
ওসি সাহেবের স্ত্রী চিৎকার করে কাঁদছেন। আর ঘরে বসে থাকা যায় না। আমি ব্যাঙচিকে নিয়ে বের হয়ে এলাম। ব্যাঙচি ফিসফিস করে বলল, পায়েসটা না খাওয়া বিরাট বোকামী হয়েছে।
চাইনীজ রেস্টুরেন্টগুলির ব্যবসা
আজকাল মনে হয় চাইনীজ রেস্টুরেন্টগুলির ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে— খালি পায়ে আমাকে ঢুকতে দিতে আপত্তি করল না। রেস্টুরেন্টের বেয়ারা আমার নগ্নপদযুগলের দিকে তাকাল। খুব বিস্মিত হল বলেও মনে হল না কিংবা কে জানে তার হয়ত বিস্মিত হবার ক্ষমতা চলে গেছে।
চাইনীজ রেস্টুরেন্টে ঢুকলেই অন্ধকার কোণা খুঁজে বসতে ইচ্ছা করে। চট করে। কেউ দেখতে পারবে না। আর দেখলেও চিনবে না। আলো থাকবে কম।— কি খাচ্ছি। তাও পরিষ্কার বোঝা যাবে না। ভাতের মাড়ের মত ঘন এক বস্তু এনে দিয়ে বলবে স্যুপ। চামচ দিয়ে সেই স্যুপ মুখে তুলতে তুলতে বলতে হবে এই রেস্টুরেন্টের চেয়ে ঐ রেস্টুরেন্ট সুপটা ভাল বানায়। এই কথা থেকে অন্যরা ধারণা করে নেবে যে এই লোক নভিস। কেউ না, চাইনীজ রেস্টুরেন্ট সে চষে বেড়ায়।
আমাদেরকে (আমাদের বলছি কারণ তামান্না আছে) ফাতেমা খালা আমাদের দুজনকে চাইনীজ খেতে পাঠিয়েছেন। চাইনীজ খাবারের মাধ্যমে বিবাহ পূর্ব প্রেম গজাবে এই বোধহয় তার ধারণা। এক টেবিলের দুদিকে দুটা চেয়ার। সব চাইনীজ রেক্টরেন্টে একটা অংশ থাকে প্রেমিক-প্রেমিকদের জন্যে।
তারা আসে দুপুর বেলা। অতি সামান্য খাবারের অর্ডার দিয়ে এসি ঘরে বসে থাকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। মেয়েটি সারাক্ষণ অভিমান করতে থাকে। ছেলেটির প্রধান কাজ হয়। অতিমান ভাঙ্গনে। ছেলেটা হয়ত আয়েশ করে সিগারেট ধরিয়েছে মেয়েট মুখ অন্ধকার করে বলবে, তুমি না বললে সিগারেট ছেড়ে দেবে?
ছেলেটা বলবে, বলেছি নাকি?
কি বলেছ তাও তুলে গেছ? আমার নাম মনে আছে তো। নাকি নামটাও ভুলে গেছ।
হুঁ, কি যেন তোমার নাম?
তোমাকে আমি এমন চিমটি দেব?
ও আচ্ছা, তোমার নাম মনে পড়েছে –তোমার নাম চিমটি রানী।
একি তুমি আমাকে তুলিয়ে-ভালয়ে সিগারেট ধরিয়ে ফেলেছি? তোমার শয়তানী বুদ্ধি দেখে আমি অবাক হচ্ছি। ফেল বললাম সিগারেট।
ছেলেটা তৎক্ষণাৎ এসট্রেতে সিগারেট ফেলে দেবে। মেয়েটা চোখ বড় বড় করে বলবে, দেখি সিগারেটের প্যাকেট আমার কাছে দাও। দাও বললাম।
সিগারেটের প্যাকেট দেয়া হবে। মেয়েটা সেই প্যাকেট তার ব্যাগে রাখতে রাখতে বলবে, এখন থেকে তোমার যদি সিগারেট খেতে ইচ্ছা করে আমার কাছে চাইবে। আমি যদি দেই। তবেই সিগারেট খাবে। না দিলে না।
ও-কে।
আচ্ছা যাও, আজ চাইনীজ খাওয়া উপলক্ষে তোমাকে একটা সিগারেট খাবার অনুমতি দেয়া হল। পুরোটা খেতে পারবে না। হাফ খাবে।
ও-কে ৷
একটু পর পর ও-কে ও-কে করছ, কেন?
ঘন্টা খানিক এই প্ৰসঙ্গ নিয়েই কথা চলবে। কথার অভাব কখনো হবে না।
তামান্নাকে নিয়ে প্রেমিক-প্রেমিকদের জন্য সংরক্ষিত আসনে বসেছি। আরো কিছু জোড়া দেখা যাচ্ছে যারা সমানে কথা বলে যাচ্ছে। আমি কথা খুঁজে পাচ্ছি না। তামান্না খুবই গম্ভীর হয়ে আছে। তার বোধহয় খুব তাড়াও আছে। সে একটু পর পর ঘড়ি দেখছে। আমি অবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য বললাম, তামান্না তুমি কি খাবে?
তামান্না অবাক হয়ে বলল, তুমি কি খাবে মানে? আমাকে তুমি করে বলছেন কেন?
দুদিন পর বিয়ে হবে, এখন তুমি বলতে অসুবিধা কি? খালা বলেছেন তুমি রাজি।
আমি বিয়েতে রাজি এমন কথা কখনো বলিনি। আমি হ্যাঁ-না কিছুই বলিনি।
খালা তোমাকে বিয়ে না দিয়ে ছাড়বে বলে মনে হয় না। তুমি তাকে অখুশীও করতে পারবে না। চাকরি চলে যাবে।
চাকরি চলে গেলে চলে যাবে। চাকরির জন্যে আমি যাকে তাকে বিয়ে করব?
সেটাও একটা কথা। বিয়ের মত একটা বড় ব্যাপার— সামান্য চাকরির জন্যে তোমায় বিয়ে করা ঠিক হবে না।
আশ্চর্য কান্ড এখনো তুমি তুমি করছেন। আপনি কি জানেন। আপনি খুবই নির্লজ্জ ধরনের মানুষ।
এত রেগে যাচ্ছ কেন? তোমার চেঁচামেচি শুনে সবাই আমাদের দিকে আগাচ্ছে— তারা ভাবছে আমরা বোধহয়, প্রেমিক-প্রেমিকা না। স্বামী-স্ত্রী। এমন চোঁচামেচি স্বামীস্ত্রীরাই করে।
প্লীজ আর কথা বলবেন না। খাবারের অর্ডার দিন। খেয়ে চলে যাই। সুপ অর্ডার দেবেন না। আমি খাই না।
টাকা এনেছেন তো?
তামান্না বিস্মিত হয়ে বলল, আপনি কি সত্যি সত্যি টাকা আনেননি?
না।
তামান্না গম্ভীর গলায় বলল, আমার কাছে টাকা আছে। আপনি খাবারের অর্ডার দিন।