বাজে প্যাঁচাল পারবেন না। আপনাকে একটা কথা বলতে এসেছি— বলে চলে যাব।
বলুন।
আপনাকে একটা রেপ কেসের কথা বলেছিলাম মনে আছে?
মনে আছে।
মিথ্যা আসামী দেয়ার কথা ছিল . . . .?
দিয়েছেন?
জ্বি না, আসল আসামী ধরেছি। ফাইনাল রিপোর্ট দিয়েছি।
আপনাকে এখনো নিঝুম দ্বীপে বদলি করেনি?
এত অল্প শাস্তি এরা আমাকে দেবে না। আমার জন্যে অনেক বড় শাস্তি অপেক্ষা করছে।
ভয় পাচ্ছেন?
ভয় পাচ্ছি না।
আমার কাছে এসেছেন কি জন্যে খবরটা দেয়ার জন্য?
না। আমি এসেছি আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করার জন্যে। ঠিক করে বলুন তো আপনার কি কোন আধ্যাত্মিক ক্ষমতা আছে?
না।
আপনি নিশ্চিত যে আপনার কোন ক্ষমতা নেই?
মোটামুটি নিশ্চিত।
আমার ধারণা আছে। ঘটনাটা বলি–আমি মিথ্যা আসামীকে ধরে নিয়ে এসেছিলাম। সারারাত জেগে মামলা সাজিয়েছি। ঘুমুতে গেছি ফজরের আজানের পরে। অনিয়ম করেছি। তো, ঘুম আসছে না। ঝিামাচ্ছি। এপাশ-ওপাশ করছি। হঠাৎ তন্দ্রার মত এল। মনে মনে আপনাকে স্বপ্নে দেখলাম। আপনি আমাকে বললেন-ওসি সাহেব আপনাকে আমি এত স্নেহ করি আর এটা আপনি কি করলেন। নিরপরাধ কয়েকটা মানুষকে আপনি এমন এক কুৎসিত মামলায় জড়ালেন। আপনার জন্যে ভয়াবহ বিপদ কিন্তু অপেক্ষা করছে। দশ নম্বর মহা বিপদ সংকেত। এখনো সময় আছে। তখন ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। দেখি ঘামে শরীর ভিজে গেছে।
ওসি সাহেব ঠান্ডা সর পড়া চায়ের কাপে নিজের ভুলে চুমুক দিয়ে মুখ বিকৃত করলেন। আমি বললাম, ওসি সাহেব, আপনার মত জাঁদরেল লোক স্বপ্ন দেখে বিভ্রান্ত হন। কি করে? এই স্বপ্লের ব্যাখ্যার জন্যে ফ্রয়েড লাগে না। কুতুবুদ্দিন মিয়া টাইপ মানুষজনও ব্যাখ্যা দিতে পারবে। আমি আপনাকে বলেছিলাম মিথ্যা মামলায় না যেতে। ঐ জিনিসটা আপনার মাথায় থেকে গেছে বলেই স্বপ্ন।
তা না।
তা না মানে?
ওসি সাহেব। আবার ঠাণ্ডা চায়ের কাপে চুমুক দিলেন আবারো মুখ বিকৃত করলেন। রুমাল দিয়ে ঠোঁট মুছতে মুছতে বললেন, স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙ্গার পর আপনি যে ব্যাখ্যাটা দিলেন সেই ব্যাখ্যাটা আমার মাথায়ও এল। আমি স্বপ্নটা মোটেই পাত্তা দিলাম না। হাত মুখ ধুলাম। খবরের কাগজ হাতে নিয়ে রীনাকে বললাম, রীনা চা দাও। রীনা হল আমার স্ত্রী। আমি বরান্দায় বসে কাগজ পড়ছি রীনা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ঢুকল। টেবিলে চায়ের কাপ নামিয়ে রাখতে রাখতে বলল, এই শোন, আমি শেষ রাতে ভয়ংকর একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছি। তুমি চোরাবালিতে আটকা পড়েছি। একটু একটু করে ডুবে যােচ্ছ। বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছ, কেউ শুনছে না। তখন একটা ছেলে ছুটে এল। তার গায়ে হলুদ রঙের পাঞ্জাবী। সে পাঞ্জাবী খুলে তোমার দিকে ধরেছে। তুমি পাঞ্জাবী ধরলে সে তোমাকে টেনে তুলবে। কিন্তু তুমি কিছুতেই পাঞ্জাবী ধরতে পারছ না। যতই ধরতে চেষ্টা করছি ততই চোরাবালিতে ডেবে যাচ্ছ।
বুঝলেন হিমু সাহেব, রীনার কথা শুনে আমি সাত হাত পানির নিচে চলে গেলাম। কারণ আপনার কথা আমি আমার স্ত্রীকে কিছু বলিনি। স্বপ্নটা কি এখন আপনার কাছে রহস্যময় মনে হচ্ছে?
না।
যাই হোক, আমার কাছে মনে হয়েছে। আমার স্ত্রী শুধু শুধু কেন স্বপ্নে দেখবে আমি চোরাবালিতে পড়েছি।
আপনি পুলিশ বিভাগে বিপজ্জনক চাকরি করেন। আপনার স্ত্রী আপনাকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করেন। কাজেই এ ধরনের স্বপ্ন দেখা খুবই স্বাভাবিক। আপনি আপনার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন যে আপনাকে নিয়ে তিনি প্রায়ই দুঃস্বপ্ন দেখেন।
আর হলুদ পাঞ্জাবীর ব্যাপারটা?
হলুদ পাঞ্জাবীর ব্যাপারটা ঠিক না। স্বপ্ন সব সময় শাদা-কালো হয়। স্বপ্নের আলো হল রাতের আলো। চাঁদের আলোয় রঙ দেখা যায় না বলে স্বপ্ন শাদা-কালো।
ওসি সাহেব উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললেন, হিমু সাহেব, এই কাগজটা আপনি রাখেন?
কি কাগজ?
এখানে আমার বাসার ঠিকানা লেখা আছে। আপনি চারটা ডাল-ভাত আমার এখানে খাবেন। আমি দেখতে চাই রীনা আপনাকে দেখে চিনতে পারে কিনা। স্বপ্লের হলুদ পাঞ্জাবী পরা মানুষ আর আপনি যে একই ব্যক্তি আমার ধারণারনা সেটা ধরে ফেলবে।
কবে আসতে বলছেন?
আজই আসুন। রাতে খান। আমি আপনাকে পাংগাশ মাছ খাওয়াব। পাংগাশ মাছ রীনা খুব ভাল। রাঁধতে পারে।
পাংগাশ মাছ এর মধ্যে জোগাড় হবে?
তা হবে।
ওসি সাহেব আমি কি কয়েকজন বন্ধুবান্ধব নিয়ে আসতে পারি? ভাল খাওয়া একা খেয়ে আরাম পাওয়া যায় না, দলবল নিয়ে খেতে হয়।
কজন বন্ধু আসবে?
এই ধরুন চারজন। আমাকে নিয়ে পাঁচ। পাঁচ হল ম্যাজিক নাম্বার। এই জন্যেই পাঁচজন আসতে চাচ্ছি।
আসুন, পাঁচজনই আসুন। পাংগাশ মাছ ছাড়া আর কি মাছ খেতে চান?
গলদা চিংড়ি?
আর কিছু??
বড় কাতল মাছের মাথা জোগাড় করতে পারবেন?
আর কিছু?
আর কিছু না!
রাত আটটার দিকে চলে আসবেন।
ওসি সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। তিনি কেমন যেন ইতস্তত করছেন। কিছু বলতে চান বলতে পারছেন না এমন ভাব। আমি বললাম, স্যার কিছু বলবেন?
না, কিছু বলব না। আপনারা আটটার দিকে চলে আসবেন। দেরি করবেন ন?
জ্বি আচ্ছা। স্যার আপনি সিগারেটের প্যাকেট ফেলে যাচ্ছেন।
ওসি সাহেব সিগারেটের প্যাকেট পকেটে ঢুকালেন। অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে ঘর থেকে বেরুতে গিয়ে তিনিও অবিকল সরফরাজ আলি খাঁর মত কপালে ব্যথা পেলেন। সরফরাজ আলি খাঁ ব্যথা পেয়ে কপালে হাত দিয়ে বসে পড়েছিল, ওসি সাহেব তা করলেন না। তিনি প্রচন্ড শব্দে দরজায় লাথি মারলেন। দরজার উপরের কজা সত্যি সত্যি খুলে গেল।