আমি বললাম, হ্যাঁ বৃষ্টিতে ভিজে কমলা হয়ে গেছে।
বুঝতে পারছি। দূর থেকেই নিউ মদিনী হাউস দেখা যায়। এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিলেন কেন?
গরম চা খুঁজছি।
হুঁ। হয়েছে। গরম চা। পেমেন্ট নিয়ে যান। ঘরে ঢুকেন।
আমি ঘরে ঢুকলাম। লোক গলা খাকারি দিয়ে বলল, আমার নাম আতর মিয়া। আপনার সঙ্গে আগে মুখোমুখি দেখা হয় নাই। আজ দেখা হলো। আপনাদের সঙ্গে ব্যবসা করে আরাম পেয়েছি। এই প্যাকেটে দুই লাখ পঁচিশ আছে। আমি গুনে দিয়েছি তারপরেও শুনে নিন।
আমি টাকা গুনতে পারি না। আপনি গুনেছেন এই যথেষ্ট। বেশি গুনালে টাকা কমে যায়।
আতর মিয়া বলল, টাকার প্যাকেটটা পলিথিন দিয়ে মুড়ে দেই। পকেটে রেখে দিন, বৃষ্টিতে ভিজিবে না।
আমি বললাম, আমার পাঞ্জাবির পকেট নাই।
পকেট নাই কেন?
পকেট থাকলেই পকেটে টাকা-পয়সা রাখতে হয়। দিগদারি। আমি দিগদারি পছন্দ করি না।
করেন দিগদারির কাম আর দিগদারি পছন্দ করেন না?
আমি বললাম, গরম এক কাপ চা খাওয়ান আমি চলে যাব। টাকা থাকুক আপনার কাছে।
টাকা নিবেন না?
না।
কবে নিবেন?
টাকা আমার না, আমি নিব না। যার টাকা সেও নিবে না। সে ধরা খেয়েছে। এটা আমার অনুমান।
টাকা আপনার না?
সাংকেতিক কথা গরম চা কীভাবে বলেছেন?
এমনি বলেছি। মনে এসেছে বলেছি।
গায়ে হলুদ পাঞ্জাবি গরম চা বলেন কী? পিয়েন্টে পয়েন্টে মিলে গেছে।
আতর মিয়া বিম ধরে গেল। আতর মিয়া একটি কথাও বলল না। চা আনল। চা শেষ করে উঠে দাঁড়ালাম। তখন তার মোবাইলে একটা টেলিফোন এল। সেইশারায় আমাকে দাঁড়াতে বলল। আমি দাঁড়ালাম। টেলিফোন শেষ করে আতর বলল, আপনার কথা সত্য। উনি ধরা খেয়েছেন।
আমি বললাম, পুরুষের জন্মই হয়েছে ধরা খাওয়ার জন্য। কেউ স্ত্রীর হাতে ধরা খায়, কেউ পুত্র-কন্যার হাতে ধরা খায়। কেউ ধরা খায় প্রেমিকার কাছে। আবার কেউ কেউ র্যাবের কাছে ধরা খায়।
আতর মিয়া বলল, আপনি কই থাকেন? আপনার ঠিকানা কী?
কেন?
যোগাযোগ রাখতাম।
কোনো প্রয়োজন নাই। হঠাৎ হঠাৎ আপনার সঙ্গে দেখা হবে সেটাই তো ভালো।
আতরের সঙ্গে পরে আরও দুইবার দেখা হয়েছে। শেষবার দেখা হয় মধ্যরাতে।
মধ্যরাত খুবই বিস্ময়কর সময়। তখন পেত্নী মারে ঢ়িল। মধ্য দুপুর থাকে ভূতের হাতে, মধ্য রাত পেত্নীর হাতে।
পেত্নী টিল মারতে থাকুক আমি ঘটনাটা বলি। কাওরান বাজারের সামনে দিয়ে আসছি। মাছের আড়াতে এক বেচারি বলল, হিমু ভাই না? যান কই?
আমি বললাম, কোথাও যাই না। হাঁটতে বের হয়েছি।
একটা ইলিশ মাছ নিয়া যান। আজ ভালো ইলিশ আসছে। দেড় কেজি, দুই কেজি।
ইলিশ মাছ দিয়ে আমি করব কী?
ভাইজা খাবেন আর কী করবেন। টাটকা ইলিশ। এমন টাটকা ইচ্ছা করলে কঁচাও খাইতে পারেন। কঁচা ইলিশ কোনোদিন খাইছেন?
না।
আমার অনুরোধ রাখেন, একটা পিস হইলেও কাঁচা খায়া দেখেন। লবণের ছিটা দিবেন, কাগজি লেবু চিপ্যা লেবুর রস দিবেন। কচকচায়া খাবেন। এই হিমু। ভাইরে সবচেয়ে বড় মাছটা গাঁইথা দে।
আমি বিশাল এক ইলিশ হাতে নিয়ে হাঁটছি। আমার পেছনে পেছনে দুটা কুকুর আসছে। রাজধানীর কুকুর বলশালী হয়। এরা যথেষ্ট বলশালী। হাঁটার মধ্যে জংলিভাব আছে। আমি দাঁড়িয়ে পড়লে ওরাও খানিকটা দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে পড়ে। আমি বললাম, তোরা কি কাঁচা ইলিশ খাবি?
দুজনই ঘড়ঘড় শব্দ করল। কুরের ভাষা বুঝত না পারার কারণে কী বলল বুঝতে পারলাম না।
আরও খানিকটা এগুতেই মাইক্রোবাসের লেখা পেলাম। মাইক্রোবাসের ইঞ্জিনের কোনো সমস্যা হয়েছে। ড্রাইভার বনেট খুলে ইঞ্জিন ঠিক করার চেষ্টা করছে।
ড্রাইভারের পাশে চিন্তিত মুখে শুটিকা টাইপের এক লোক টর্চ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। টর্চ একটু পরপর নিভে যােচ্ছ। আমি তাদের পাশে দাঁড়ালাম। কুকুরের ঘড়ঘড় শব্দ শুনে দুজনই ফিরে তৃ কাল।
মাইক্রোবাসের ভেতর অত্যন্ত বলশালী একজ বসা। সে ঘাড় সোজা করে বলল, এই লোক কী চায়?
আমি বললাম, আমি কিছু চাই না। আপনার গাড়ি থেকে কড়া আতরের গন্ধ আসছে। আমার কুকুর দুটা আ ক্লার গন্ধে অস্থির হয়ে গেছে।
কুকুর দুটা একসঙ্গে কলজে, শুকিয়ে যাওয়ার মতো আওয়াজ করল। টর্চ হাতে ড্রাইভারের পাশের লোক হঠাৎ দৌড় দিল। তার দেখাদেখি ড্রাইভার। কেউ দৌড়ালে জংলি কুকুর তার পেছনে পেছনে যাবে। এটাই স্বাভাবিক। দুটা কুকুরই ছুটে গেল। একজন শুটকা লোক কে কামড়ে ধরলে, আরেকজন ড্রাইভারকে। তাদের চিৎকার শুনলাম, বাঁচান আমাদের বাঁচিন।
আমি ডাকলাম, তোরা ফিরে আয়। শুটিকা লোক ফুটপাতে পড়ে রইল। কুকুর দুটা ফিরে এল।
মাইক্রোবাসে বসা লোক ভীত গলায় বলল, আপনি কী চান?
আমি বললাম, আপনি গাড়ি; বস্তাভর্তি করে কাউকে নিয়ে যাচ্ছেন। যাকে নিয়ে যাচ্ছেন তার গা থেকে আতরের গান্ধ বের হচ্ছে। আমার ধারণা তার নাম আতর মিয়া। আপনার পরিকল্পনা কী? বস্তা বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ বীজ থেকে পানিতে ফেলা? বস্তায় ইট কি ভরা আছে? আপনি তো ভগাই বিরাট ঝামেলায় আছেন। গাড়ি নষ্ট। লোকবলও কমে গেল। সঙ্গে মোবাইল ফোন আছে না? টেলিফোন করে লোক আনবার ব্যবস্থা করুন। অন্য গাড়ি আনুন। এই ধরনের জটিল কাজে সবসময় ব্যাকআপ ব্যবস্থা থাকতে হয়।
গাড়ির ভেতর থেকে ভোঁ ভোঁ শব্দ পাওয়া গেল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে টহল পুলিশ আসতে দেখা গেল। আমি মাইক্রোবাসে বসা লোকটার দিকে তাকিয়ে বললাম, ভাইসাহেব, পুলিশ আসতেছে। আমার মনে হয় আপনার উচিত দৌড় দিয়ে পালানো। আতর মিয়াকে ধরার অনেক সুযোগ পাবেন।