ঠিক বলেছেন। পড়াশোনা কতদূর করেছেন?
এসএসসি পাস দিয়েছিলাম। অংকে কত পেয়েছিলাম শুনলে ফাল দিয়ে পানিতে পড়ে যাবেন।
কত পেয়েছিলেন?
৭৮। আর দুই পেলে লেটার হয়ে যেত। আমার সামনে সিটি পড়েছিল। সলিলের। ক্লাসের ফাস্ট বয়। তার খাতা দেখে দেখে লিখেছি। একটা অংক, সে আর দেখায় না। আমি বললাম, মালাউনের বাচ্চা, খাতা দেখা। না যদি দেখাস ভুঁড়ি গলায়ে ফেলব।
খাতা দেখায়েছে?
না।
খাতা জমা দিয়ে বাড়ি চলে গেছে।
তার ভূঁড়ি গালানোর ব্যবস্থা করেছিলেন?
না, মাফ দিয়েছি। ৭৮ তো কম না। লেটারের কাছাকাছি। বিয়ারিং লেটার বলা যায়।
সলিলের কোনো খোঁজ জানেন?
ইন্ডিয়া চলে গেছে। ওদের যাওয়ার জায়গা আছে। ঝামেলা হলেই ইন্ডিয়া। আমাদের কোনো উপায় নাই। আফসোস। সাংবাদিক ভাই, দেখেন না আমার কোনো ফুডের ব্যবস্থা করা যায় কি না।
লঞ্চ তো কিছুক্ষণের মধ্যে ড়ুবেই যাবে। খাওয়া নিয়ে চিন্তা করে লাভ কী? আপনি তো সাঁতারও জানেন না যে কিছুক্ষণ সাঁতরাবেন।
আমি সাঁতার জানি না। আপনারে কে বলেছে?
অনুমানে বলছি।
আপনার অনুমান ঠিক আছে। একবার পুসকুনির পানিতে পড়ে মরতে বসেছিলাম। কে জীবন বাঁচায়েছে অনুমান করুন তো!
সলিল।
আপনার অনুমান সঠিক হয়েছে। মালাউনের বাচ্চা না থাকলে সেই দিনেই সব শেষ হতো।
সেটা কিন্তু খারাপ হতো না। তখন আপনি মারা যেতেন স্কুলের ছাত্র হিসাবে। এখন কলঙ্ক নিয়ে মারা যাবেন। ছিনতাইকারী হিসাবে মারা যাবেন।
সাংবাদিক ভাই আমি আপনার সঙ্গে আর কথা বলব না। নো টক। আপনার সঙ্গে কথা বলার আর সার্থকতা নাই।
পীর কুতুবি
নদী সাঁতরানোর কারণে উনার অবস্থা এখন কাহিল। জিকির শুরু করে দিয়ে উনি এখন হয় করে ঘুমুচ্ছেন। তার মুখের সামনে স্বাস্থ্যবান দুটা মাছি ভিনভন্ন করছে। দুটা মাছির মধ্যে একটার মতলব ভালো না। সে মনে হয় যে-কোনো মুহুর্তে কুতুবির মুখে ঢুকে যাবে। ওসি সাহের কুতুবির পাশেই শুয়ে আছেন। তিনি কি এখনো অচেতন নাকি চেতনা ফিরেছে তা বোঝা যাচ্ছে না। দুজনের গায়ের ওপর কম্বল। এক কম্বলের নিচে দুজন দৃশ্যটা দেখতে ভালো লাগছে।
ড. জিল্লুর খানের ছাত্রী সীমা
ক্যামেরা মুখের সামনে ধরলে সীমা পালিয়ে যাবে ভেবেছিলাম। সীমা চোখমুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে রইল।
আমি : সীমা কেমন আছ?
সীমা : (নিচুপ)
আমি : তুমি কি শুধু স্যারের সঙ্গেই প্রমোদ ভ্ৰমণে যাও, নাকি অন্যদের সঙ্গেও যাও?
সীমা : (চাপা অর্থহীন শব্দ করল)
আমি : বলা হয়ে থাকে প্রসটিটিশন বাংলাদেশে নেই বলে ট্যুরিজমে আমরা পিছিয়ে আছি। ট্যুরিজমকে এগিয়ে নিতে তুমি এবং তোমার মতো মেয়েরা কী করতে পার এটা বলো। দেশের জন্যে সবার কাজ করতে হবে, তাই না?
সীমা দাঁড়ানো অবস্থা থেকে বসে পড়ল। ইন্টারভ্যুর এখানেই সমাপ্তি।
আনসার বাহিনী প্ৰধান
আব্দুল খালেক
(জাতীয় ক্রীড়া প্ৰতিযোগিতায় পোলভল্টে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত)
আমি আব্দুল খালেক। জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। এখন আমার অবস্থা দেখেন ছাতার এক ভাঙা লঞ্চে ডিউটি পড়েছে। কারণ কী জানেন? আনসার এডজুটেন্টের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছে। উনি আমার সম্মানটা দেখলেন না, লঞ্চে ডিউটি দিয়ে এমন বিপদে ফেলেছেন। জীবন নিয়ে ফিরব তা মনে হয় না। নিজের হাতে ছিনতাইকারী ধরে এতগুলি টাকা উদ্ধার করেছি। সেই ঘটনা কেউ জানবে না।
না জানাই তো ভালো। ছিনতাইয়ের টাকা আপনারা ফেরত দেন নাই। আপনাদের হাত থেকেও টাকা ছিনতাই হয়েছে। আপনাদের একটা রাইফেলও পানিতে পড়ে গেছে বলে শুনেছি।
এইসব উড়া খবর কার কাছ থেকে পেয়েছেন?
আমরা সাংবাদিক মানুষ, খবর সংগ্ৰহ করাই আমাদের কাজ। শুনেছি আপনার রাইফেলাটাই নাকি মিসিং।
কে বলেছে?
আপনার রাইফেল কই?
সেই কৈফিয়োত আপনাকে দিব কেন? রাইফেল সেফ কাস্টডিতে আছে। ক্যামেরা বন্ধ করেন প্লিজ। আপনার সঙ্গে আর কথা বলব না।
শেষ একটা কথা শুধু বলুন। জাতীয় ক্ৰীড়া প্রতিযোগিতায় আপনি স্বর্ণপদক বিজয়ী। তরুণ খেলোয়াড়দের উদ্দেশে কিছু বলুন।
আব্দুল খালেক গম্ভীর গলায় বললেন, খেলোয়াড়কে হতে হবে শারীরিকভাবে ফিট। তাকে সবসময় অনুশীলনের মধ্যে থাকতে হবে। হারজিৎ নিয়ে মাথা ঘামালে চলবে না। জয় এবং পরাজয় দুটাই হাসিমুখে গ্ৰহণ করতে হবে। তাদের মনে রাখতে হবে, জীবন হলো জয়-পরাজয়ের ফুল দিয়ে গাঁথা এক মালা।
আমি বললাম, মুখস্থ বলেছেন বলে মনে হচ্ছে।
হ্যাঁ। এক ফটো সাংবাদিক ভাই আমার জন্যে লিখে দিয়েছিলেন। মুখস্থ করে রেখেছি। টেলিভিশনেও একই কথা বলেছি। চ্যানেল আইয়ের খেলাধুলা অনুষ্ঠানে দুবার দেখায়েছে। বিকাল চারটায় একবার পরদিন সন্ধ্যাবেলায় আরেকবার।
স্বর্ণপদকটা কোথায়?
এটার কথা ভাই আর বলবেন না। বিরাট ঝামেলা হয়েছে। ক্যামেরাটা বন্ধ করেন। তারপর বলি।
আমি ক্যামেরা বন্ধ করলাম।
আব্দুল খালেকের মুখ এখন উজ্জ্বল। চোখ চকচক করছে।
আমার ছোট শ্যালিকার নাম রেশমা। সে আমার বিশেষ ভক্ত। আমি তাকে ছোটবোনের মতো স্নেহ করি। এর বেশি কিছু না। আমার স্ত্রী আবার অত্যন্ত সন্দেহ বাতিকগ্রস্ত মহিলা। আমরা দুজন একসঙ্গে নরমাল গল্পগুজব করছি দেখলেও সে উত্তেজিত হয়ে যায়, বোনকে অকথ্য ভাষায় গালাপালি করে।
স্বর্ণপদক নিয়ে বাসায় ফিরেছি, আমার স্ত্রী দাঁত তুলতে ডেনটিক্টের কাছে গিয়েছে। ঘরে আমি আর রেশমা। রেশমাকে স্বর্ণপদকটা দেখালাম। সে পদক হাতে নিয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলল। ঘটনাটা দেখে এত আনন্দ পেলাম! রেশমাকে বললাম, এটা তুমি রেখে দাও। তোমাকে দিলাম।