গ) তার সুখাদ্য প্রীতি আছে। ভালো ভালো রেস্টুরেন্টে তাকে আয়োজন করে খেতে দেখা যায়।
ঘ) বেশিরভাগ সময়ই তাকে একা চলাফেরা করতে দেখা যায়। বডিগার্ড ধরনের কাউকে তার আশেপাশে কখনো দেখা যায় নি।
ঙ) সুষমার দেওয়া তথ্য অনুসারে তার ভয়াবহ মাইগ্রেনের ব্যথা আছে। ব্যথার প্রকোপ উঠলে এক নাগাড়ে দুই থেকে তিনদিন সে ছটফট করে। নানান চিকিৎসাতেও এই ব্যথা সারে নি। সে না-কি ঘোষণা দিয়েছে, যে তার মাইগ্রেনের ব্যথা সারিয়ে দেবে প্রয়োজনে তার জন্যে সে জীবন দিয়ে দেবে।
চ) তার রহস্যপ্রিয়তা আছে। মানুষকে হতভম্ব করে সে মজা পায়। এই মজাটা বেশিরভাগ সময় সে করে পুলিশের সঙ্গে। সার্জেন্ট জহিরুলের কাহিনীটি উল্লেখ করা যেতে পারে।
সার্জেন্ট জহিরুল বিজয় সারণীর কাছে ডিউটিরত ছিলেন। এই সময় জনৈক সুদৰ্শন সানগ্লাস পরা ভদ্রলোক তাকে এসে বিনীত গলায় বললেন, মোটর সাইকেলে করে তাকে কি রাস্তা পার করে দেয়া সম্ভব? ট্রাফিকের জন্যে তিনি রাস্তা পার হতে পারছেন না। তার রাস্তার ওপাশে যাওয়া অসম্ভব জরুরি। ট্রাফিক সার্জেন্ট তাকে রাস্তা পার করে দেন। সানগ্রাস পরা ভদ্রলোক তখন তাকে
আন্তরিক ধন্যবাদ দেন। এবং বলেন, আমাকে কি আপনি চিনেছেন? আমি আয়না মজিদ। ইচ্ছা করলে আপনি আমাকে অ্যাপ্লেষ্ট করতে পারেন। অ্যারেক্ট করলেই এক লাখ টাকা পুরস্কার এবং প্রমোশন পাবেন।
ঘটনার আকস্মিকতায় ট্রাফিক সার্জেন্ট হতভম্ব হয়ে পড়েন। এই সুযোগে আয়না মজিদ ভিড়ের মধ্যে মিশে যায়।
আয়না মজিদ প্রসঙ্গে আরেকটি বিশেষ তথ্য। তার কুকুর ভীতি প্রবল। রাস্তার অনেক কুকুরকে সে গুলি করে হত্যা করেছে। কুকুর হত্যার মোটিভ সম্ভবত কুকুর ভীতি।
আয়না মজিদ নৌকায় থাকতে পছন্দ করে। বুড়িগঙ্গ্য তার নিজের নৌকা আছে। যেখানে সে রাতে বাস করে। অনেক চেষ্টা করেও নৌকা শনাক্ত করা যায় নি।
আমি আছি বাদলদের বাড়িতে
আমি আছি বাদলদের বাড়িতে।
এ বাড়িতে বাস করা দূরের কথা, বাদলের ৫০ হাজার গজের মধ্যে থাকাই আমার জন্যে নিষেধ ছিল। কোনো এক কারণে পরিস্থিতি ভিন্ন। খালু সাহেব আমাকে দেখে হাসিমুখে বলেছেন, আরো তুমি! কেমন আছ?
জি ভালো।
অনেকদিন পরে তোমাকে দেখলাম। এসেছ যখন কয়েকদিন থাক।
আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, জি আচ্ছা।
খালু সাহেব আনন্দিত গলায় স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন, এই শুনছ, হিমু। কিছুদিন থাকবে আমাদের সঙ্গে। গেষ্টরুমটা খুলে দাও। বাথরুমে সাবান, টাওয়েল আছে কি-না দেখা।
খালাও গালভর্তি করে হাসলেন।
যাকে বলে। লালগালিচা অভ্যর্থনা। আমি বাদলকে আড়ালে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ব্যাপার কী রে! আমাকে নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে।
বাদল গলার স্বর কাঁপা কাঁপা অবস্থায় নিয়ে বলল, তুমি তো টানাটানি করার মতোই মানুষ। সাধারণ কেউ তো না।
তোর কাছে টানাটানির মানুষ। খালু সাহেব বাঁ খালার কাছে না। তাদের কাছে Father driven, Mother broomed.
এর মানে কী?
Father driven মানে বাপে খেদানো। Mother broomed মানে মায়ের ঝাড়ু দিয়ে বিতাড়ন।
বাদল বলল, মানে টানে নিয়ে আমি মাথা ঘামাচ্ছি না। তুমি গেষ্টরুমে থাকতে পারবে না। তুমি থাকবে আমার সঙ্গে। খাটে ঘুমাবে, আমি মেঝেতে কম্বল পেতে ঘুমাব। সারারাত গল্প করব। ছবি দেখব।
গুড।
তুমি যে কয়দিন থাকবে আমি ইউনিভার্সিটিতে যাব না। চব্বিশ ঘণ্টা তোমার সঙ্গে থাকব। আমাকে কেউ হাতি দিয়ে টেনেও তোমার কাছ থেকে সরাতে পারবে না।
কাঁঠালের আঠা হয়ে যাবি?
অবশ্যই।
আমাকে বিস্মিত করে খালা এসে জানতে চাইলেন, দুপুরে কী খাবি?
আমি বললাম, যা খাওয়াবে তাই খাব।
তোর কী খেতে ইচ্ছা করে বল? পথেঘাটে থাকিস, আত্মীয়স্বজনদের বাসায় এসে ভালোমন্দ খাবার ইচ্ছা হতেই পারে। হিমু, দশ পনেরো দিনের আগে নড়ার নামও নিবি না।
আমি বললাম, ঠিক করে বলে তো তোমাদের সমস্যাটা কী?
এর মধ্যে তুই সমস্যা খুঁজে পেয়ে গেলি? আমি তোর খালা না?
বাদলের ঘরে টেলিভিশন ছিল না। সে গেষ্টরুম থেকে টিভি নিয়ে এলো। আমার হাতে টিভির রিমোট ধরিয়ে বলল, শুয়ে শুয়ে টিভি দেখবে। টেবিলের উপর খবরের কাগজ।
আমি টিভি দেখি না। খবরের কাগজও পড়ি না।
এখন টিভি দেখবে, খবরের কাগজ পড়বে। অনেকদিন পর এই কাজটা করবে তো–আনন্দ পাবে। চা খাবে? চা দিতে বলি?
আমি বললাম, দে।
খবরের কাগজ পড়ে বিশেষ আনন্দ পেলাম। সেকেন্ড হেডলাইন— সর্ষেতে ভূত। পুলিশের হেফাজত থেকে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী আয়না মজিদের পালিয়ে যাওয়ার কাহিনীর চমৎকার বর্ণনা।
সর্ষেতে ভূত
(নিজস্ব প্রতিবেদক)
শীর্ষ সন্ত্রাসী আয়না মজিদ পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়েছে। তার পলায়ন নিয়ে নানান ধরনের রহস্য দানা বাঁধতে শুরু করেছে। পুলিশ যে ভাষ্য দিচ্ছে তা কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে না।
পুলিশ বলছে, সকাল আটটা বিশ থেকে আয়না মজিদকে একটি বিশেষ কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে স্বীকার করে যে, সে-ই আয়না মজিদ। তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী লম্বু খোকন এবং তার কুকর্মের বান্ধবী সুষমা রানী বিষয়েও সে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়। তথ্যগুলি যাচাইবাছাইয়ের জন্যে তদন্তকারী কর্মকর্তা কিছুক্ষণের জন্যে জিজ্ঞাসাবাদের বিরতি নেন। আয়না মজিদকে হাতকড়া বাধা অবস্থায় ঘরে রেখে তিনি ঘর তালাবন্ধ করে দেন। ফিরে এসে দেখেন আয়না মজিদ হাতকড়া খুলে জানালার গ্রীল কেটে পালিয়ে গেছে।