তুই কী মনে করে দশ কেজি টক দৈ আনলি, এটা আমাকে বল।
তুমি না আনতে বললে?
আমি দশ কেজি আনতে বলেছি গাধা ছেলে? এত দৈ দিয়ে আমি কী করব!
গোসল করবে। দধিস্নান। দধিস্নান খুবই ভালো জিনিস। আমোঘা দধিস্নান করতেন।
আমোঘাটা কে?
মহর্ষি শান্তনুর স্ত্রী। দধিস্নান করে তিনি গর্ভবতী হন। সমস্যাটা কি জানো? সন্তান প্রসব করতে গিয়ে তিনি একগাদা পানি প্রসব করলেন। তার স্বামী সেই পানিকেই পুত্র হিসাবে গ্রহণ করলেন। পুত্রের নাম দিলেন ব্ৰহ্মপুত্র। আমাদের ব্ৰহ্মপুত্র নদের এটাই ইতিহাস।
চুপ কর গাধা! বানিয়ে বানিয়ে কথা বলেই যাচ্ছে। তুই কি ভাবছিস আমি বোকা?
অবশ্যই তুমি বোকা। অতিরিক্ত রূপবতীরা বোকা হয়, এটা জগতের স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম। তুমি যে বোকা তার আরেকটা প্রমাণ হচ্ছে রূপের প্রশংসা করায় তুমি আনন্দে আটখানার জায়গা এগারোখানা হয়ে গেছ। আরো প্রমাণ লাগবে?
লাগবে।
এতক্ষণ আমার সঙ্গে কথা বলছি, এখনো আমাকে চিনতে পার নি।
তোকে চিনেছি। চিনব না কেন! নামটা মনে আসছে না। নামটা বল তো?
বলব না।
টেলিফোন বেজে উঠল। শোভা আপু আনন্দে ঝলমল করতে করতে বললেন, ও টেলিফোন করেছে। ঠিক দুপুর বারোটায় সে একবার টেলিফোন করে!
তোমাদের প্রথম টেলিফোনে কথা হয়েছিল ঠিক দুপুর বারোটায়?
হয়েছে। তোর তো বুদ্ধি ভালো।
আপু, আমার কথা দুলাভাইকে বলবে না। আমি তাকে একটা সারপ্রাইজ দিতে চাই।
অবশ্যই বলব না। তুই আমাকে যতটা বোকা ভাবছিস তত বোকা আমি না। এই শোন, টেলিফোন নিয়ে আমি আড়ালে চলে যাব, তুই কিছু মনে করিস না।
বিয়ের পরেও প্ৰেম চালিয়ে যাচ্ছ?
হুঁ। শোভা আপুর টেলিফোন কথোপকথন দীর্ঘস্থায়ী হলো না। তিনি মুখ অন্ধকার করে আমার কাছে ফিরে এলেন। প্রায় কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন, তোর দুলাভাই তো বিরাট বিপদে আছে।
কেন?
আয়না মজিদকে সে অ্যারেক্ট করেছিল, তোকে বলেছিলাম না? সে পালিয়ে গেছে। তোর দুলাভাই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছিল। এই সময় পালিয়ে যায়। কেউ কেউ ধারণা করছে তোর দুলাভাই টাকা খেয়ে তাকে ছেড়ে দিয়েছে।
বলো কী?
তুই তো তোর দুলাভাইকে চিনিস। তুই বল সে কি টাকা খাওয়ার মানুষ?
প্রশ্নই ওঠে না।
টাকা খেলে তো অনেক আগেই সে আমার চিকিৎসা করত।
আপা, তুমি এখন কাঁদতে শুরু করবে না-কি?
অবশ্যই কাঁদব। তোর দুলাভাইকে ওরা সাসপেন্ড করেছে। তদন্ত কমিটিও না-কি হচ্ছে। সে বলেছে দুপুরে খেতে আসতে পারবে না।
তোমাকে যে চিঠি লেখার কথা সেটা কি লিখেছে?
লিখেছে নিশ্চয়ই। জিজ্ঞেস করি নি। টেলিফোন করে জিজ্ঞেস করব?
একটু পরে কর। পরিস্থিতি ঠান্ডা হোক। আর খাবার গরম কর। ক্ষিধে লেগেছে। স্বামীর শোকে তুমি ভাত খাবে না, এটা বুঝতেই পারছি।
গোসল করে আয় তারপর খাবি। বাথরুমে তোর দুলাভাইয়ের ধোয়া লুঙ্গি আছে। গামছা আছে।
শোভা বেচারি অসম্ভব মন খারাপ করেছে। তার মন ঠিক করার জন্যে ছোট্ট Tricks করলাম। এই ধরনের ট্রিকসে বোকা মেয়েরা অসম্ভব খুশি হয়। বুদ্ধিমতীরাও যে হয় না, তা না। আমি মুখ কাচুমাচু করে বললাম, আপু, খুব লোভ হচ্ছে তুমি দুলাভাইকে চিঠিতে কী লিখেছ সেটা পড়তে। পড়তে দেবে?
থাপপড় খাবি। (আপুর মুখে এখন আনন্দ।)
বিয়ের এত দিন পরেও কী ভালোবাসি করছ জানতে ইচ্ছা করছে।
চিঠি একটা ব্যক্তিগত ব্যাপার। তোকে পড়তে দেব কেন?
চিঠি পড়তে না দিলে কিন্তু আমি ভাত খাব না।
তুই কিন্তু এখন আমাকে রাগিয়ে দিচ্ছিস। (আপুর চোখে রাগের চিহ্নও নেই। তিনি আনন্দে ঝলমল করছেন।) তোর মতলবটা এখন বুঝতে পারছি। তুই চিঠি নিয়ে বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিবি। আমার চিঠি যদি পানিতে ভিজে তাহলে কিন্তু তোর খবর আছে।
কী করতে হবে আপু বলে দিয়েছেন। আমি তাই করলাম। চিঠি নিয়ে অতি দ্রুত বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করলাম। আপু দরজায় ধাক্কা দিয়ে বললেন, চিঠির প্রথম চার লাইন পড়বি না। তোকে আল্লাহর দোহাই লাগে।
প্রথম চার লাইনে কী আছে?
যাই থাকুক, তুই কিন্তু পড়বি না।
আমি তো পড়ে ফেলেছি। তোমার চিঠির মূল হচ্ছে প্রথম চার লাইন।
তোর মাথা!
প্ৰথম চার লাইনে লেখা—
এই যে, বাবু সাহেব!
গুটগুটি মুটিমুট টেংটেং। শোন, তুমি কিন্তু ব্যাং। করো খ্যং খ্যাং। আমি রাগ করেছি। এত ছোট চিঠি কেন লেখা? আমি কি বাচ্চা মেয়ে? সাতদিন পর একটা চিঠি। ইকি মিকি পিকি। লেক্কা পেক্কা।
শোভা আপু আদর্শ বঙ্গ ললনাদের মতো যত্ন করে আমাকে খেতে দিলেন। মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে, তারপরেও তিনি একটা খবরের কাগজ ভাঁজ করে হাতে নিয়ে আমার পাশে বসেছেন। খবরের কাগজ দিয়ে গরম ভাতে হাওয়া দিচ্ছেন। আমি বললাম, শোভা আপু, টেলিভিশনে তো খবর দিচ্ছে। ঘণ্টায় ঘণ্টায় খবর প্রচার হয়। তারপরেও খবরের কাগজ টিকে থাকবে। কেন বলো তো?
জানি না, কেন? একটাই কারণ–খবরের কাগজ দিয়ে বাতাস দেয়া যায়। টেলিভিশন দিয়ে
বাতাস দেয়া যায় না।
শোভা আপু সামান্য রসিকতাতেই হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে পড়ে যাবার উপক্রম করলেন। অতি কষ্টে হাসি থামিয়ে বললেন, তুই এত দুষ্ট কেন?
আমি বললাম, তুমিও তো দুষ্ট্র। প্রেমের চিঠিতে লিখছ— গুটিগুটি মুটিমুট টেংটেং। তোমার সব চিঠির শুরুই কি এরকম?
হুঁ। বাবু সাহেবের সঙ্গে ফাজলামি করি। ফাজলামি করলে ও রেগে যায়। ওকে ব্লাগাতে ভালো লাগে। রাগলে তোতলামি শুরু হয়। তখন আমাকে শোভা ডাকতে পারে না। আমাকে ডাকে–শো শো শো.। আমি আরো রাগাবার জন্যে বলি— কো কো কো।