বলেন কী!
পত্রিকা পড় না? অনেক নিউজ বের হয়েছে। তবে আসল নিউজ কেউ সাহস করে ছাপছে না।
আসল নিউজটা কী?
পেঁয়াজ কাচামরিচের দাম বেড়েছে। পাওয়া যাচ্ছে না, এই নিউজ আছে। কিন্তু অ্যালকোহল যে পাওয়াই যাচ্ছে না। এই নিউজ নাই। আমি চিন্তা করেছি বেনামে পত্রিকায় একটা চিঠি লিখব। লেখা উচিত কি-না তুমি বলে।
অবশ্যই উচিত।
হেডিং হবে বিষাক্ত নকল মদ থেকে জাতিকে রক্ষা করুন। হেডিংটা কেমন?
ভালো।
সেখানে কিছু সাজেশন থাকবে। যেমন, সরকারি পরিচালনায় ন্যায্যমূল্যের মদের দোকান। যে-কেউ সেখান থেকে মদ কিনতে পারবে না, শুধু লাইসেন্সধারীরা পারবে।
আপনার লাইসেন্স আছে?
অবশ্যই আছে। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে দেয়া লাইসেন্স। দেখবে?
দরকার নেই।
অবশ্যই দরকার আছে। তুমি ভেবে বসে আছ আমি বিনা লাইসেন্সে মদ খাচ্ছি। তা-না। আমি যখন নিজের বাড়ির ছাদে বসে মদ খাই তখনো সঙ্গে লাইসেন্স থাকে।
ভালো তো।
খালু সাহেব হাতের গ্লাস দ্রুত শেষ করে চতুর্থটা নিলেন। তৃপ্তির একটা শব্দও করলেন–আহা! সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললেন, তোমাকে ছোট্ট একটা কাজ করে দিতে হবে হিমু। পারবে না?
অবশ্যই পারব।
জটিল কোনো কাজও অবশ্যি না। একজনকে কিছু টাকা পৌঁছে দেয়া। দুই লাখ টাকা।
এখন দিয়ে আসব?
কাল সকালে নিয়ে যাও। ঠিকানা দিয়ে দেব। সেই ঠিকানায় যাবে। দরজায় টোকা দেবে। যে দরজা খুলবে তাকে বলবে, কাচাবাজারের খবর কী?
কিসের খবর কী?
কাচাবাজারের খবর কী কিংবা বাজারের খবর কী? বাজার শব্দটা থাকলেই হবে। যে দরজা খুলবে সে তোমাকে বসাবে। কিছুক্ষণ বসে থাকবে। পাঁচ মিনিট হতে পারে, আবার ধর এক ঘণ্টাও হতে পারে। যতক্ষণ উনি না। আসছেন। ততক্ষণ বসে থাকবে। উনি এলে তার হাতে প্যাকেটটা দেবে।
উনিটা কে?
উনি কে তোমার জানার প্রয়োজন নাই।
এতগুলি টাকা কাকে দিচ্ছি জানব না? তার কাছ থেকে রশিদ আনব না?
তোমাকে এইসব কিছু করতে হবে না। তুমি টাকা দিয়ে চলে আসবে। ঘরে ঢোকার password হলো বাজার। বাজার শব্দটা শুধু মনে রাখবে। বাজার না বলে তুমি যদি মার্কেট বলো তাহলে কিন্তু তোমাকে ঘরে ঢুকাবে না।
ডিটেকটিভ উপন্যাসের মতো মনে হচ্ছে। ব্যাপারটা কী খোলাসা করুন তো খালু সাহেব। ঝেড়ে কাশুন।
খোলাসা করব না। ঝেড়েও কাশব না।
খালু সাহেব এক টানে চতুর্থ শেষ করে পঞ্চমে গেলেন এবং হড়বড় করে পুরো ব্যাপারটা খোলাসা করলেন। কাকে টাকা দিতে হবে জানা গেল। কাকতালীয় হোক বাঁ কোকিলতালীয় হোক, ঘটনার মূল নায়ক আমাদের আয়না মজিদ। এই সন্দেহ আমার গোড়া থেকেই হচ্ছিল।
ঘটনা হলো।— দিন দশেক আগে দুপুরবেলা খালু সাহেব একটা টেলিফোন পেলেন। টেলিফোনের ওপাশ থেকে বিনয়ী গলায় কেউ একজন বলল, স্যার ভালো আছেন?
খালু সাহেব বললেন, ভালো আছি, আপনি কে?
আমাকে চিনবেন না। আমি আপনার প্রতিবেশী। নতুন গাড়ি কিনেছেন দেখে ভালো লাগল। আলফার্ভে না?
জি।
চমৎকার গাড়ি। এরচে ভালো মাইক্রোবাস হয় বলেই আমার মনে হয় না।
কালো রঙ পেলেন না?
খোঁজ করেছিলাম, পাই নি।
মেরুন রঙটাও খারাপ না।
খালু সাহেব বললেন, আপনাকে চিনতে পারছি না। আপনার পরিচয়টা?
আমার নাম মজিদ। সবাই আয়না মজিদ হিসেবে আমাকে চেনে। আপনিও নিশ্চয়ই চিনেছেন। স্যার, আমি সামান্য সমস্যায় পড়েছি। আমাকে একটু সাহায্য করতে হয়। একটা ঠিকানা লিখুন তো।
খালু সাহেব ভড়কে গেলেন। যন্ত্রের মতো ঠিকানা লিখলেন। আয়না মজিদ বলল, এই ঠিকানায় স্যার পরশুর মধ্যে এক লাখ টাকা পাঠিয়ে দেবেন। প্রতিবেশী যদি প্রতিবেশীকে না দেখে তাহলে কে দেখবে? প্রতিবেশী যদি প্রতিবেশীকে না। চেনে তাহলে কে চিনবে? বাইবেলে আছে know thy neighbours. স্যার রাখি?
হতভম্ব খালু সাহেবের ব্লাড প্রেসার আকাশে উঠে গেল। শরীর ঘামতে লাগল। মাথা চক্কর দিতে লাগল। তিনি পুলিশের কাছে পুরো ঘটনা বললেন। পুলিশ ঐ ঠিকানায় উপস্থিত হয়ে দেখে বিধবা এক স্কুল শিক্ষিকা দুই বাচ্চা নিয়ে ঐ বাড়িতে থাকেন। তিনি পুলিশের কাছে ঘটনা শুনে কেঁদেকেটে অস্থির।
খালু সাহেব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। তার ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক হলো। তিন দিন পর আবার আয়না মজিদের টেলিফোন।
স্যার, কেমন আছেন? চিনতে পারছেন তো? আমি আয়না। শুরুতে একটা ভুল ঠিকানা দিয়েছিলাম, কারণ আমি ধরেই নিয়েছিলাম। আপনি পুলিশের কাছে যাবেন। এখন আসল ঠিকানা দিচ্ছি। কাগজ-কলম নিন। পুলিশে খবর দিয়েছেন বলে এখন এক লাখ টাকা বেশি দিতে হবে। কাউকে দিয়ে দু লাখ টাকা যে ঠিকানা দিচ্ছি। সে ঠিকানায় পাঠাবেন। দরজায় সে কড়া নাড়বে। তার পাসওয়ার্ড হচ্ছে বাজার। বলবে বাজার। ঠিক আছে? আপনাকে সময় দিচ্ছি। সাত দিন। সাত দিন চিন্তা-ভাবনার সময় পাবেন।
সাতদিন তিনি এক নাগাড়ে চিন্তা-ভাবনা করেছেন। অফিসেও যান নি। এখন সিদ্ধান্তে এসেছেন দুলাখ টাকা দিয়ে ঝামেলামুক্ত হবেন।
হিমু, কটা খেয়েছি তোমার কি মনে আছে?
না।
সাতটা খেয়ে ফেললাম না-কি? বমিভাব হচ্ছে।
ভাব হলে বমি করে ফেলুন। আরাম পাবেন।
আমার আরামের দরকার নাই। আগামীকাল সাত দিন শেষ হবে, ওই চিন্তাতেই সব আরাম হারাম।
আমি বললাম, চিন্তার কিছু নাই। কাল ভোরে টাকা নিয়ে চলে যাব। কলিংবেল বাজিয়ে বলব, কাচা বাজার এনেছি।
থ্যাংক য়্যু। হিমু! At the end of the day you are a good person. তুমি যে good person এই সম্মানে লাষ্ট একটা খাওয়া যাক।