গোপন জায়গাটায় ছাদের সিঁড়িঘর দিয়ে যেতে হয়। সিঁড়িঘরের সঙ্গের যে বাথরুম সেই বাথরুমের ফলস সিলিং হলো টগরের গোপন জায়গা। ফলস সিলিং বানানো হয়েছিল। টুকিটাকি জিনিস রাখার জন্য। টগর সব পরিষ্কার করেছে। কাউকে কিছু না জানিয়ে সে জায়গাটা সুন্দর করে সাজিয়েছে। ছাদের মতো জায়গাটায় চাদর বিছানো আছে। বালিশ আছে। পানির বোতল, চিপস সবই আছে। অনেক গল্পের বই আছে। গুজ বামের দশটা বই, হেরি পটারের দুটো। অনেকগুলো লেগোর সেট আছে। একটা আছে মেকানো সেট। ছবি আঁকার জন্য খাতা আছে, পেনসিল আছে।
এসব ছাড়াও কার্ডবোর্ডের একটা বাক্স আছে। বাক্সটার ওপরে লাল মার্কার দিয়ে লেখা :
THIEF BOX
চোরবাক্স
এই বাক্সে টগর কিছু চুরি করা জিনিস অল্প কিছু দিনের জন্য লুকিয়ে রাখে। যেমন তার বাবাকে কে যেন একটা লাইটার দিয়েছিল। বোতাম টিপলেই আগুন বের হয় এবং বাজনা বাজে। এই লাইটারটা টগর চুরি করে এনে তার থিফ বক্সে রেখে দিল। কিছু দিন লাইটার নিয়ে খেলে আবার একসময় বাবার কোটের পকেটে রেখে দিল। টগরের বাবা খুবই অবাক হয়ে বললেন, আশ্চর্য কাণ্ড, লাইটারটা পাওয়া গেছে। কাজের বুয়া দুজনকে খামাখা সন্দেহ করেছি। ছি-ছি! আমার পকেটেই ছিল।
চোরবাক্সে কোনো জিনিসই টগর বেশি দিন রাখে না। শুধু দাদিয়ার দাঁতের পাটি এক সপ্তাহ রেখে দিয়েছিল। চারদিকে এমন হৈচৈ শুরু হলো! সবার এক কথা, দাঁত কে নেবে? দাঁত কি চুরি করার জিনিস? দাঁত কে নিল। এই বিষয়ে অনেক থিওরি বের হলো। টেগরের বাবা বললেন, ইঁদুরের কাণ্ড। ইঁদুর নিয়েছে। এই শুনে সুলতানা বললেন, এত বড় দাঁত কি ইঁদুরের মুখে লাগবে? ইঁদুর কেন নেবে।
টগরের বাবা সুলতানার কথা শুনে রেগে গিয়ে বললেন, আমার সঙ্গে রসিকতা করবে না। প্লিজ।
সেই দাঁত এক সপ্তাহ পর টগর রেখে দিল বড় চাচার টেবিলের ড্রয়ারে। এই নিয়েও কম হৈচৈ হলো না। ড্রয়ারে দাঁত এল কোথেকে? নানা গবেষণা, নানা আলোচনা। গুজগুজ ফিসফিস মিটিং। বাড়িতে হৈচৈ হলে টেগরের ভালো লাগে। তবে সে খুব ভালো করেই জানে তার পাপ হচ্ছে। এই পাপ কাটান দেয়ার জন্য তাকে পুণ্য করতে হবে। সে তখন পুণ্য করে।
পাপ-পুণ্যের হিসাব রাখার জন্য তার একটা খাতা আছে। খাতার নাম পাপ-পুণ্য খাতা। খাতায় পাপগুলো লেখা থাকে লাল মার্কারে। পুণ্যগুলো সবুজ মার্কারে।
টগর জানালার শিকে পা রেখে তার গোপন জায়গায় ওঠে, সিলিংয়ের দরজা লাগিয়ে দেয়। একবার ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে দিলে কারোর বোঝার সাধ্যও থাকে না যে এখানে কেউ আছে। জায়গাটা একটু অন্ধকার। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই অন্ধকার চোখে সয়ে যায়।
টগর তার গোপন জায়গায় বসে আছে। তার হাতে বড় একটা খাতা। এটা ‘পাপ-পুণ্য খাতা’ না, অন্য খাতা। এই খাতায় তাদের বাড়ির প্রতিটি সদস্য সম্পর্কে কিছু লেখা আছে। লেখাগুলো টগরই লিখেছে। কিছু দিন পর পর সে লেখাগুলো পড়ে। সামান্য কাটাকাটি করে। আজ খাতাটা সে নিয়েছে আরো নতুন কিছু তথ্য যোগ করার জন্য। ছোট মামা যে গত সপ্তাহে হিমু হয়ে গেছে, এই কারণে আজ তার বিচার হবে এই তথ্য খাতায় লেখা নেই। টগর খাতার লেখা পড়তে শুরু করল। সে পড়াশোনায় খুব ভালো।
সব পরীক্ষায় A পায়। বড় হয়ে সে Mad Scientist হবে।
টগর
It is me,
Standard six student.
খুব বুদ্ধিমান ছেলে। অতি ভালো। মিষ্টি স্বভাব। সে সবাইকে ভালোবাসে। তার কোনো খারাপ গুণ নেই। সপ্তাহে একদিন সে আঁ আঁ করে সবাইকে বিরক্ত করে। কারণ ঐ দিন তার গানের টিচার আসেন। হারমোনিয়াম বাজিয়ে তাকে গান শেখান।
নীলু
My sister
Standard seven student
বুদ্ধি নেই। মন্দ। ঝগড়াটে স্বভাব। তার কোনো ভালো গুণ নেই।
দাদিয়া
My Grandma
Age: 75
Name : Fatima Begum
VERY GOOD LADY
দাদিয়া খুব ভালো। She is A+। দাদিয়া ছোটদের কখনো বকা দেন না। খুবই খারাপ। সবার ধারণা, উনি বেশি দিন বাঁচবেন না। কিন্তু আমি জানি দাদিয়া অনেক দিন বাচবেন। তবে দাদিয়া যেদিন মারা যাবেন সেদিন এই বাড়িতে মজার একটা ঘটনা ঘটবে। দাদিয়া যে লেপ গায়ে দিয়ে ঘুমান সেই লেপ টুকরা টুকরা করে কেটে সবাইকে এক টুকরা করে উপহার দেয়া হবে। ঘটনাটা খুব অদ্ভুত লাগলেও অদ্ভুত না। কারণ দাদিয়ার লেপে আছে টাকা। তিনি যখনই টাকা পেয়েছেন, লেপের ভেতর সেলাই করে রেখে দিয়েছেন। সবাই মনে করে এই লেপে কম করে হলেও এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা আছে। কাজেই লেপের একটা টুকরা পাওয়া মানে অনেকগুলো টাকা পাওয়া। আমি যে টুকরা পাব সেখান থেকে টাকা বের করে লেগো কিনব।
বড় চাচা
My uncle
Name: Chowdhury Ajmol Hossain
VERY ANGRY PERSON
আমার বড় চাচা খুবই রাগী। রাগের জন্য নোবেল প্রাইজ দেয়ার ব্যবস্থা থাকলে তিনি অবশ্যই নোবেল প্রাইজ পেতেন। He is A+ in hot temper। তবে তিনি যে রাগী তা তাকে দেখে বোঝা যায় না। কারণ তিনি সব সময় হাসি হাসি মুখ করে থাকেন।
বড় চাচা বাসায় যতক্ষণ থাকেন। ততক্ষণ বই পড়েন। তিনি থাকেন এই বাড়ির দোতলায়। এ জন্য ছোটরা কেউ দোতলায় যায় না। তিনি বিয়ে করেননি। ভাগ্যিস বিয়ে করেননি। বিয়ে করলে তার ছেলেমেয়ে হতো। সেই ছেলেমেয়েরা তাকে ভয় করত। এই পৃথিবীতে ভয় পাওয়া ছেলেমেয়ের সংখ্যা বেড়ে যেত।
টগর এই পর্যন্ত পড়ে খাতা নামিয়ে পাপ-পুণ্য খাতাটা নিল। আড়াল থেকে বড় চাচার কথা শুনে যে পাপ করা হয়েছে, সেটা লিখে ফেলা দরকার।