কী ভূত?
হিমুর তৃত।
তারে কি ভূতে ভর করছে? মুনশি—মওলানা ডাইক্যা আন। ভূতের চিকিৎসা করব মুনশি-মওলানা।
সেই ভূত না মা, অন্য ধরনের ভূত। আপনি বুঝবেন না।
আমি বুঝব না কী জন্যে? না বুঝলে বুঝাইয়া দে। তাঁরা বুঝদার মানুষ। ভূত-পেতনি এই বাড়িতে যে আছর করছে, এইটা সত্য। আমার পান-ছোঁচনি নিয়া গেল। আবার ফিরত পাইলাম। মাগরেবের নামাজের ওয়াক্তে দেখি আমার চাদরের নিচে তিনটা সাগর কলা।
আপনার চাদরের নিচে তিনটা কলা?
এইগুলা কিছু না। এইগুলা ভূতের মজাক। মানুষ যেমন মজাক করে, ভূত-পেরতও করে। আইজ রাখছে কলা, কাইল রাখব। অন্য কিছু।
ভূত বলে কিছু নাই মা। এই যন্ত্রণাগুলো মানুষই করছে। কে করছে, কী জন্য করছে। আমি সেটা বের করে ফেলব।
ভূত-পেত-জিন-পরী এইগুলা নাই?
না, মা।
দুই পাতা বই পইড়া বিরাট লায়েক হইছস? কত আচানক ঘটনা চাইরিদিকে ঘটে, সব আপনা-আপনি ঘটে?
সব আচানক ঘটনারই ব্যাখ্যা আছে। এমন কিছু এই পৃথিবীতে ঘটে না, যার ব্যাখ্যা নাই।
বাপরে বাপ, তুই তো বিরাট জ্ঞানী হইছস!
আজমল হোসেন মায়ের ঠাট্টার একটা জবাব দিতে যাচ্ছিলেন, তার আগেই নীলুর বিকট চিৎকার শোনা গেল। সে এক চিৎকারে বাড়িঘর কাঁপিয়ে ছুটে এসে দাদিয়ার ঘরে ঢুকল। তার বাম কান দিয়ে ফোটা ফোটা রক্ত পড়ছে। বাম কানে একটা স্ট্র্যাপলারের পিন লাগানো। ষ্ট্যাপলারের পিন শক্ত হয়ে কানের লতিতে লেগে আছে।
আজমল হোসেন কঠিন গলায় বললেন, কে করেছে এই কাজ? কে কানে ষ্ট্যাপলার মেরেছে, টগরি? নিশ্চয়ই টগরের কাজ।
নীলু। ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, না।
তাহলে করেছেটা কে?
আমি চুপচাপ বসে গল্পের বই পড়ছিলাম, হঠাৎ দেখি কাণে স্ট্যাপলার।
আশপাশে কেউ ছিল না?
না, বড় চাচা।
নীলুর দাদিয়া বললেন, আলাপ-আলোচনা পরে কর। আগে এই জিনিস কান থাইক্যা বাইর কর। এইটা যে জিন-ভূতের কাজ, তুই বুঝস না? অত বোকা তো তুই ছোটবেলায় ছিলি না।
মৌন দিবস
আজ শুক্রবার।
টগরের বড় চাচার মৌন দিবস। টগরের জন্য বিরক্ত দিবস। কারণ বাড়ির প্রধান ব্যক্তি যদি গভীর মুখে কথা বন্ধ করে বসে থাকেন তখন অন্যদের কথা কম বলতে হয়। টগর যদি একটু উচু গলায় কথা বলে আমনি মা এসে বলবেন, চুপ। চুপ।।
শুক্রবার ছুটির দিন। কার্টুন চ্যানেলে কার্টুন দেখা যায়। সেই কার্টুনও দেখতে হয় লো ভল্যুমে। ছুটির দিন হৈচৈ শব্দ ছাড়া কার্টন দেখে কোনো মজা আছে।
তবে আজ ভিন্ন কিছু হতে পারে। টগরের ছোট মামা এখনো চৌবাচ্চায়। এমন বিরাট ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে কি বড় চাচা তার মৌন দিবস পালন করতে পারবেন। তা মনে হয় না।
শুভ্রর ঘটনাও চারদিকে ছড়িয়ে গেছে। আত্মীয়স্বজনরা দেখতে আসছেন। তাদের সঙ্গে ছোট বাচ্চাকাচ্চা যারা আসছে তারা কাছে যেতে ভয় পাচ্ছে। টগরের দায়িত্ব বাচ্চাকাচ্চাদের ভয় ভাঙিয়ে কাছে নিয়ে যাওয়া। বড়রা আগ্ৰহ নিয়ে অনেক প্রশ্ন-ট্রশ্নও করছেন। কিছু কিছু প্রশ্নের জবাব টগর দিচ্ছে। যেমন শুভ্রের দূর সম্পর্কের এক খালা বললেন, পানিতে ছয়-সাত দিন পড়ে থাকলে লাভ কী?
এই প্রশ্নের উত্তরে টগর বলেছে, এটা হিমুদের সাধনা। এই সাধনা করলে হিমুরা পাওয়ার পায়।
পাওয়ার পায় মানে কী?
টিভিতে দেখেন না। সুপারম্যানদের পাওয়ার আছে। এই রকম পাওয়ার।
আকাশে উড়তে পারবে?
পারতেও পারে। আত্মীয়স্বজন যারা দেখতে আসছেন তাদের বেশির ভাগই এত বড় ঘটনা নিয়ে ঠাট্টা—তামাশা করছেন। কেউ কেউ আজেবাজে রসিকতাও করছেন। যেমন এক ভদ্রলোক বললেন, তা হিমু বাবাজী পিসাব-পায়খানা কোথায় করছে? চৌবাচ্চাতেই। পানির রঙও মনে হল পাঞ্জাবির রঙের মতো হলুদ!
সুলতানা বাবার বাড়ি থেকে চলে এসেছেন। তার রাগ পড়ে গেছে। এখন তিনি রান্নাঘরে। আত্মীয়স্বজন আসছে নতুন ধরনের কোনো আইটেম রান্না করলে তারা আগ্রহ করে খাবেন। তিনি বানাচ্ছেন মিষ্টি চটপটি। চটপটির সব আইটেম থাকবে সঙ্গে তেঁতুলের রসের বদলে টেবিল চামচে।কয়েক চামচ মধু দিয়ে দেবেন। তেঁতুলের পানি আলাদা দেয়া থাকবে। যারা মধুর সঙ্গে তেঁতুল মেশাতে চান তারা তেঁতুল মেশাবেন।
টগরের বাবা আলতাফ সাহেবকে একটু পর পর টেলিফোন ধরতে হচ্ছে। পরিচিত অপরিচিত লোকজন টেলিফোন করে হিমু হবার বিষয়ে জানতে চাচ্ছে। তিনি সবার সঙ্গেই শুরুতে ভদ্র ব্যবহার করছেন। যেমন পত্রিকা অফিস থেকে একটা টেলিফোন এলো–
আমি দ্বিতীয় আলো পত্রিকা থেকে বলছি।
বলুন।
এটা কি শুভ্ৰদের বাড়ি?
জি।
আমরা খবর পেয়েছি শুভ্র গত এক বছর ধরে পানিভর্তি চৌবাচ্চায় বাস করছে।
ঘটনা কি সত্যি?
আংশিক সত্যি। আজ তৃতীয় দিন সে পানিতে আছে।
আমরা খবর পেয়েছি তিনি যে চৌবাচ্চায় বাস করছেন সেই চৌবাচ্চার পানি ছাড়া আর কোনো খাদ্য গ্ৰহণ করছেন না।
এই সব উদ্ভট খবর কোথে কে পাচ্ছেন?
আমরা তো নিউজ কালেকশন সিক্রেট আপনাকে বলব না। আমরা সত্য খবর ছাপাতে চাই। আপনি এ ব্যাপারে আমাকে সাহয্য করুন।
আমি আমার সাধ্যমতো সাহায্য করার চেষ্টা করছি। পুরো ব্যাপারটা ছেলেমানুষি খেলা ছাড়া আর কিছুই না।
আপনার সবাই মিলে কেন এই খেলাটা দেখছেন জানতে পারি। একটা শিশুকে তিন দিন ধরে পানিতে চুবিয়ে রেখেছেন।
শিশুকে পানিতে চুবোব কী জন্য?
তাহলে কাকে চুবিয়েছেন।
চুপ!
কী আশ্চর্য গালাগালি করছেন নাকি?
থাপ্পড় খাবি।
আপনি কি বলেছেন থাপ্পড় খাবি?
হ্যাঁ বলেছি। থাপ্লড় দিয়ে তোর দাঁত ফেলে দেব। বদমাশ।