পাপ নং ২১৫
আমি বড় চাচার দুপুরের খাবার গোপনে খেয়ে ফেলেছি। এতে পাপ হয়েছে। পাপ বেশি হয়েছে নাকি কম হয়েছে তা বুঝতে পারছি না।
পুণ্য নং ২১৫
বড় চাচার খাবার তাকে না বলে খেয়ে ফেলায় যে পাপ হয়েছে, খাবার খাওয়াতে পুণ্য হয়েছে। ছোটরা ফলমূল খেলে তাদের শরীর ভালো থাকে। শরীর ভালো রাখা পুণ্যের কাজ।
‘পাপ-পুণ্য খাতা’ বন্ধ করে টগর অন্য খাতা খুলল। এই খাতায় পুরো দিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা লেখা থাকে। দিন এখনো শেষ হয়নি, তবে ঘটনাগুলো অতি দ্রুত ঘটছে। সঙ্গে সঙ্গে লিখে না রাখলে অবশ্যই তালগোল পাকিয়ে যাবে।
হিমু মামা
হিমু মামা এখনো চৌবাচ্চায়। তিনি এখন পর্যন্ত তেইশ ঘণ্টা পার করেছেন। চব্বিশ ঘণ্টা পার হওয়ার পর তিনি চৌবাচ্চার পানিতে লবণ মেশাবেন। সমুদ্রের পানিতে যতটা লবণ থাকে তার চেয়েও বেশি লবণ দেওয়া হবে। তাতে পানির ঘনত্ব বেড়ে যাবে। তখন ভেসে থাকতে সুবিধা হবে। ড্রাইভার ইদারিসকে ৯২০ কেজি লবণ কিনতে পাঠানো হয়েছে। হিমু মামা হিসাব করে বের করেছেন, চৌবাচ্চায় ৯২০ কিউবিক ফিট পানি আছে। প্রতি কিউবিক ফিট পানির জন্য এক কেজি করে লবণ। কিউবিক ফিটের হিসাবটা আমি ছোট মামার কাছ থেকে জেনেছি। এক ফুট দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতার একটা কিউবে যতটা পানি থাকে তাকে বলে এক কিউবিক ফিট।
বড় চাচা
বড় চাচা আজ খুব চিন্তার মধ্যে পড়েছেন। কারণ, কে যেন তার দুপুরের খাবার খেয়ে ফেলেছে। কে খেয়েছে এটা বের করার তিনি অনেক চেষ্টা করেছেন। এখনো বের করতে পারেননি। তার ধারণা, কোনো বিড়াল এসে খেয়েছে। তবে বিড়াল কলা খায় না। বিড়ালের আঙুল নেই বলে সে কলার খোসাও ছাড়াতে পারে না। ঘটনা আসলে কী হয়েছে তা জানার জন্য তিনি প্ৰত্যেক ঘরের টেবিলে কলা এবং এক স্নাইস করে রুটি রেখেছেন। আমাদের সবার দায়িত্ব লক্ষ রাখা, কী হয়। তিনি নিজেও কিছুক্ষণ পর পর সব ঘরে গিয়ে দেখছেন, কী হয়। সফুরা বুয়ার ধারণা, আমাদের এই বাড়িতে জিনের আসর হয়েছে। সব কাণ্ডকারখানা জিন করছে। তাদের গ্রামের বাড়িতেও নাকি মাঝে মাঝে এ রকম জিনের আসর হয়। সেই জিন অতি দুষ্ট। তারা ক্ষেত থেকে মাটির চাক্কা তুলে মানুষের ওপর ছুড়ে মারে।
নীলুর ধারণা এটা কোনো জিন না। এসবের পেছনে আছে Playful ‘poltergiest’ অর্থাৎ মজার ভূত।
নীলু একটা মুভিতে দেখেছে, বাড়িতে এ রকম ভূতের উপদ্রব হয়। তখন Ghost Buster এনে ভূত তাড়াতে হয়।
দাদিয়ার ধারণা, এই বাড়িতে খারাপ বাতাস লেগেছে। খারাপ বাতাস কী তা আমি এখনো জানি না। একসময় দাদিয়াকে জিজ্ঞেস করে জানব।
টগর লেখা শেষ করে কিছুক্ষণ ট্যারা হওয়া প্র্যাকটিস করল। ট্যারা হওয়ার প্র্যাকটিস করার জন্য সে একটা আয়না রেখেছে। ছোট মামা বলেছেন, ট্যারা হওয়ার প্র্যাকটিস আয়না দেখে করতে হয়। টগরের ধারণা, সে এখন ট্যারা হতে পারে, তবে বেশিক্ষণ পারে না। ছোট মামা অনেকক্ষণ ট্যারা হয়ে থাকতে পারেন।
টগর তার গোপন আস্তানা থেকে নেমেই শুনল, রকিবউদ্দিন স্যার এসেছেন। স্টাডিরুমে বসে আছেন। রকিবউদ্দিন স্যারের এ সময় আসার কথা না। তিনি আসেন সন্ধ্যার পর, তাও সব দিন না। সপ্তাহে চার দিন। মাঝে মাঝে স্যার টাকা ধার করার জন্য অসময়ে আসেন। আজো মনে হয় এই জন্যই এসেছেন। তবে স্যার আজ টাকা পাবেন না, কারণ মা বাড়িতে নেই। স্যারকে টাকা ধার দেন শুধু মা। মা টাকা ধার দেন বলেই হয়তো মায়ের বানানো ভয়ঙ্কর খাবারগুলো স্যার খুব আগ্রহ নিয়ে খান এবং বলেন, অসাধারণ হয়েছে! শাহি খানা।
রকিবউদ্দিন ভূইয়া টগরকে দেখে ভুরু কুঁচকে বললেন, কেমন আছ টগর?
টগর, বলল, স্যার, ভালো আছি। মা বাড়িতে নেই। স্যার।
তোমার মায়ের কাছে আসিনি। অন্য একটা কাজে এসেছি। তোমার মামা কোথায়? তার সঙ্গে কিছু কথা ছিল।
স্যার, ছোট মামা পানিতে।
বলো কী, এখনো পানিতে! জ্বর আসে নাই?
না। ছোট মামা বরং অনেক ভালো আছেন।
তোমার মামার সঙ্গে গতকাল জলচিকিৎসা নিয়ে কথা বলে ভালো লেগেছে। ভাবলাম, আজ যেহেতু হাতে কোনো কাজ নাই, বিষয়টা নিয়ে ভালোমতো আলাপ করি। আমার বাতের ব্যথাও বেড়েছে।
স্যার, আপনি কি জলচিকিৎসা করবেন? মামার সঙ্গে পানিতে নামবেন?
আরে না। কী বলো তুমি! আমি পানিতে নামব কেন? আমার তো ভীমরতি হয়নি।
পানিতে এখন লবণ দেয়া হয়েছে। লবণ-পানিতে নামলে চিকিৎসা ভালো হবে স্যার।
রকিবউদ্দিন আগ্রহ নিয়ে বললেন, লবণ কেন দেয়া হয়েছে?
পানির ঘনত্ব যেন সমুদ্রের পানির ঘনত্বের মতো হয় সে জন্য। এতে শরীর ভেসে থাকবে।
হুঁ, আর্কিমিডিসের সূত্র। ভালো কথা, চৌবাচ্চার পানি কি ঠাণ্ডা?
মনে হয় না। পানি ঠাণ্ডা হলে মামা এতক্ষণ থাকতে পারতেন না।
তা ঠিক বলেছে। আমি একটা কথা অবিশ্যি ভাবছি।
কী কথা স্যার?
ধরো, আমি যদি ঘণ্টাখানেক জলচিকিৎসা করি, মানে, আমি যেখানে থাকি সেখানে চৌবাচ্চা নাই। জলচিকিৎসার জন্য চৌবাচ্চাটা জরুরি। তাই না?
অবশ্যই জরুরি। কোনো অসুবিধা নাই স্যার। জলচিকিৎসা করেন।
খালি গায়ে নামতে হয় কি না, তুমি জানো?
স্যার, আমি জানি না। জলচিকিৎসা তো আমি কখনো করিনি।
বলো দেখি, জলচিকিৎসার ইংরেজি কী?
জানি না। স্যার।
Water treatment. একটা কাগজে পঞ্চাশবার লেখো Water treatment। আমি যাই, তোমার ছোট মামার সঙ্গে কথা বলে দেখি। চৌবাচ্চায় দুজনের জায়গা হবে?