হুজুর বললেন, মন দিয়া কোরান মজিদ পাঠ করো নাই, এই কারণে বোকার মতো প্রশ্ন করলা। কোরান মজিদে আল্লাহপাক বলেছেন, ‘আত্মা হলো আমার হুকুম’। তার হুকুম মানুষের উপর যেমন আছে, মশামাছির উপরও আছে।
আমি বললাম, মশার কয়েল জ্বালানো তো তাহলে ঠিক হবে না। মশার আত্মাকে কষ্ট দেওয়া হবে।
হুজুর বললেন, প্যাচের প্রশ্ন করব না। আল্লাহপাক প্যাচ পছন্দ করেন না। উনার দুনিয়ায় কোনো প্যাচ নাই। প্যাচ যদি থাকত। হঠাৎ দেখতা আমগাছে কঁঠাল ফলে আছে। বর্ষাকালে বৃষ্টি নাই, শীতকালে বৃষ্টি ঝড় তুফান। নদীর মিঠা পানি হঠাৎ হয়ে যেত লোনা। আবার সাগরের পানি হয়ে যেত মিঠা। এ রকম কি হয়?
জি-না।
আমি বল্টু স্যারের পায়ের কাছে মশার কয়েল জ্বালালাম। তার মাথার নিচে বালিশ ছিল না, একটা বালিশ দিয়ে দিলাম। হুজুর বললেন, তোমার যদি বিড়ি-সিগারেট খেতে ইচ্ছা হয়, আমার দিকে পিছন ফিরে খেয়ে ফেলবা। নেশাজাতীয় খাদ্য খাওয়া ঠিক না। খাওয়ার পর পর বলবা, আস্তাগাফিরুল্লাহ। এতে দোষ কাটা যাবে।
জি আচ্ছা হুজুর। শুকরিয়া।
আমার মোবাইলটা তোমারে দিয়া দিলাম। তোমার বয়স অল্প। এইসব যন্ত্রপাতি তোমার প্রয়োজন। আমার না। আল্লাহপাকের মোবাইল নম্বর কি জানো?
জি-না। হুজুর।
উনার মোবাইল নম্বর হলো ২৪৪৩৪
বলেন কী?
এই নম্বরে মোবাইল দিলেই উনারে পাওয়া যায়। ২ হলো ফজরের দুই রাকাত ফরজ নামাজ, ৪ হলো জোহরের চাইর রাকাত ফরজ নামাজ, আরেক ৪ হলো আসরের চার রাকাত, ৩ হলো মাগরেবের তিন রাকাত, আর এশার চার রাকাতের ৪। এখন পরিষ্কার হয়েছে?
জি হুজুর।
প্রতিদিন একবার উনারে মোবাইল করবো। দেখবা সব ঠিক।
হুজুরের কাছ থেকে উপহার হিসাবে মোবাইল হাতে নেওয়ামাত্র রিং হতে লাগল।
আমি হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে তুতুরি বলল, হিমু।
আমি বললাম, গলা চিনে ফেলেছ?
তুতুরি বলল, চিনেছি। এই মুহুর্তে আপনি কী করছেন?
তোমার সঙ্গে কথা বলছি।
সেটা বুঝতে পারছি। কথা বলার আগে কী করছিলেন?
স্যারের মাথার নিচে বালিশ দিলাম। বালিশ ছাড়া ঘুমাচ্ছিলেন তো।
স্যার মানে কি পদার্থবিদ্যার হার্ভার্ড Ph.D.?
হ্যাঁ।
উনি মাজারে ঘুমাচ্ছেন?
হ্যাঁ।
আপনাদের ব্যাপার আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। উনি কি সত্যিই মাজারে ঘুমাচ্ছেন?
এসে দেখা যাও।
রাতে আসব না। সন্ধ্যার পর আমি ঘর থেকে বের হই না। ভোরবেলা আসিব। ততক্ষণ কি স্যার থাকবেন?
থাকার কথা।
আমি আপনাকে বিশেষ একটা কারণে টেলিফোন করেছি। আমার জন্য ছোট একটা কাজ করে দিতে পারবেন?
পারব। কী কাজ?
আপনি তো অনুমান করে অনেক কিছু বলতে পারেন। অনুমান করুন। আমি আপনার কাছে একটা জিনিস চাচ্ছি। জিনিসটার প্রথম অক্ষর ‘বি’?
বিচালি চাচ্ছ? বিচালি দিয়ে কী করবে?
বিচালি আবার কী?
ধানের খড়। গরু, যেটা খায়।
আপনি ইচ্ছা করে আমার সঙ্গে রসিকতা করছেন। আমি বিষ চাচ্ছি। বিষ। বিচালি না। Poison.
কী করবে? খাবে?
না, জহির স্যারকে খাওয়াব। পটাসিয়াম সায়ানাইড জোগাড় করে দিতে পারবেন?
কোথায় পাওয়া যায়?
কেমিষ্ট্রি ল্যাবরেটরিতে পাবেন।
বাজারে যে সব বিষ পাওয়া যায় তা দিয়ে হবে না? ইদুর মারা বিষ, ধানের পোকার বিষ?
না। এইসব বিষের স্বাদ ভয়ঙ্কর তিতা। মুখে দেওয়ামাত্র ফেলে দেবে। সায়ানাইডের স্বাদ মিষ্টি। আমি বইয়ে পড়েছি। তারচেয়ে বড় কথা, সায়ানাইড খেয়ে মারা গেলে কারও ধরার সাধ্য নেই বিষ খেয়ে মারা গেছে।
তোমার কতটুকু লাগবে?
অল্প হলেই চলবে। মনে করুন দুই গ্ৰাম। দুটা গ্লাসে শরবতের সঙ্গে মিশিয়ে দু’জনকে দেব। জহির স্যার আর তার বন্ধু পরিমল।
খাওয়াবে কোথায়? খাওয়ানোর পর তোমাকে দ্রুত পালিয়ে যেতে হবে।
আপনাদের মাজারে কি খাওয়ানো যায়?
কোন যাবে না? মাজারের তবারকের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে দেব। খেয়ে চিৎ হয়ে পড়ে থাকবে।
তুতুরি বলল, আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে আপনি পুরো বিষয়টা ঠাট্টা হিসেবে নিয়েছেন।
তুমি যদি সিরিয়াস হও তাহলে আমি সিরিয়াস। তোমাকে মোটেই সিরিয়াস মনে হচ্ছে না।
আমি যে সিরিয়াস তার প্রমাণ দেই? সায়ানাইড আমি জোগাড় করেছি। আপনাকে বাজিয়ে দেখার জন্যে সায়ানাইড জোগাড় করতে বলেছি।
কাজ তো তুমি অনেক দূর গুছিয়ে রেখেছি। তুমি সায়ানাইড দিয়ে যাও, আর দুই কালপ্রিটকে পাঠিয়ে দিয়ো।
আপনি এখনো ভাবছেন আমি ঠাট্টা করছি। সরি, আপনাকে বিরক্ত করলাম।
তুতুরি লাইন কেটে দিল।
তুতুরি
আমি সায়ানাইড কোথায় পাব? মিথ্যা করে বলেছি সায়ানাইড আছে। হিমু যেমন মিথ্যা বলছে, আমিও বলছি। সে কথায় কথায় ফাজলামি করে। আমিও কি তাই করছি? হতে পারে। সৎ সঙ্গে স্বৰ্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। আমার সর্বনাশ হতে দেরি নাই।
শুনেছি প্রেমিক-প্রেমিকরা একে অন্যের স্বভাব নিজের মধ্যে ধারণ করতে চায়, যাতে তারা আরও কাছাকাছি আসতে পারে। হিমু আমার কোনো প্রেমিক না! তার স্বভাব কেন আমি নিজের মধ্যে নিয়ে নেব? তবে এই ঘটনা ঘটছে। আমি হিমুর মতো কিছু কথাবার্তা বলতে শুরু করেছি। উদাহরণ দেই। আমি মাজেদা খালার বাড়িতে গিয়েছি। ইন্টেরিয়রের কাজ শুরু করব-এই নিয়ে কথা বলব, এস্টিমেট করব। বাসায় ঢুকে দেখি কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ। স্বামী-স্ত্রী পারলে একে অন্যের গলা কামড়ে ধরে।
স্বামী এক পর্যায়ে চোখ লাল করে আঙুল উচিয়ে স্ত্রীকে বললেন, এই মুহূর্তে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাও।