এই Ph.D.-ওয়ালার সঙ্গে আমার দেখা হয় আমার মায়ের স্কুলজীবনের বন্ধু মাজেদা খালার বাসায়। Ph.D.-ওয়ালার চেহারা ভাজা মাছ উল্টে খেতে পারি না।’ টাইপ। তিনি আমাকে বললেন, খুকি, তোমার নাম কী?
তরুণী মেয়েকে বয়স্করা ইচ্ছা করে খুকি ডাকে। খুশি করার চেষ্টা। আমি বললাম, তুতুরি।
তিনি চোখ বড় বড় করে কয়েকবার বললেন, তুতুরি! তুতুরি! নাম নিয়ে বাজনা বাজালেন। তারপর বললেন, নামের অর্থ কী?
আমি বললাম, অর্থ জানি না।
আমি তাকে মিথ্যা কথা বললাম। নামের অর্থ কেন জানিব না! অর্থ অবশ্যই জানি। তুতুরি। আমার নিজের দেওয়া নাম। ডিকশনারি দেখে বের করেছি। এর অর্থ সাপুড়ের বাঁশি। বাঁশি বাজলেই সাপ ফণা তুলে নাচবে। পুরুষ নামধারি সাপ নাচাতে আমার ইচ্ছে করে।
Ph.D.-ওয়ালা আমি নামের অর্থ জানি না শুনে বিচলিত হয়ে গেলেন বলে মনে হলো। তিনি বললেন, যিনি নাম রেখেছেন তিনি নিশ্চয়ই জানেন। তোমার বাবা কিংবা মা।
আমি বললাম, তারা দু’জনই মারা গেছেন, আমার বয়স যখন সাত তখন। তাদের নামের অর্থ জিজ্ঞেস করা হয় নি।
উনি আরও বিচলিত হলেন এবং বললেন, আমি নামের অর্থ বের করার চেষ্টা করব। তুমি আমার হোটেলের নম্বরে টেলিফোন করে জেনে নিয়ো।
এইবার থলের বিড়াল বের হতে শুরু করেছে। ‘হোটেলে টেলিফোন করে জেনে নিয়ো’ দিয়ে থলের মুখ খোলা হলো। এরপর বলবে, হোটেলে চলে এসো, গল্প করব। তারপর একদিন বলবে, জানো আজ আমার জন্মদিন। তুমি আজ রাত থেকে যাও, সারা রাত গল্প করব।
আমি একদিন পরই হোটেলে টেলিফোন করে বললাম, আমি তুতুরি। তিনি বললেন, তুতুরি কে?
এটা এক ধরনের খেলা। ভাবটা এরকম যেন নামও ভুলে গেছি।
আমি বললাম, আপনার সঙ্গে মিসেস মাজেদার বাসায় দেখা হয়েছিল। আপনি আমার নামের অর্থ জানতে চাইলেন, অর্থ বলতে পারলাম না।
ও আচ্ছা আচ্ছা। তুমি হলে ডিজাইনে গোন্ড মেডেল পাওয়া আর্কিটেক্ট। আমি তোমার নামে অর্থ বের করেছি। অর্থ হলো সাপুড়ের বাঁশি।
আমি বললাম, কী ভয়ঙ্কর!
উনি বললেন, ভয়ঙ্কর কিছু না। সুন্দর নাম! তোমার নাম থেকে আমি একটা আইডিয়া পেয়েছি, এটা শুনলে তোমার ভালো লাগবে। শুনতে চাও?
আমি উৎসাহে চিড়বিড় করছি এমন ভঙ্গিতে বললাম, অবশ্যই শুনতে চাই স্যার। (আমার নাম থেকে আইডিয়া পেয়েছে। বিরাট আইডিয়াবাজ চলে এসেছেন। আইডিয়া তো একটাই—মেয়ে পটানো আইডিয়া।)
উনি বললেন, তুতুরির সঙ্গে মিল রেখে নতুন একটা শব্দ মাথায় এল। ফুতুরি। আমি ভাবলাম শব্দটা বাংলা ভাষায় ঢুকিয়ে দিলে কেমন হয়। ফুতুরি হবে ফুঁ দিয়ে বাজানো হয় এমন সব বাদ্যযন্ত্রের কমন নেম’। আমি বাংলা একাডেমীর ডিজিকে এই বিষয়ে একটি চিঠি লিখলাম।
আমি অবাক হওয়ার মতো করে বললাম, ডিজি সাহেব কি চিঠির জবাব দিয়েছেন?
না। তবে উনি টেলিফোন করেছিলেন। উনি বলেছেন, নতুন এই শব্দটা কাউন্সিল মিটিংয়ে তোলা হবে। কাউন্সিল পাশ করলে বাংলা ভাষায় একটা নতুন শব্দ যুক্ত হবে।
আমি আনন্দে লাফাচ্ছি এমন ভঙ্গি করে বললাম, স্যার বলেন কী, বাংলা ভাষায় আপনার একটা শব্দ চলে আসছে! মনে মনে বললাম, আষাঢ়ে গল্প বলার জায়গা পাও নি? বাংলা একাডেমীর ডিজি শিশি খান? তুমি নতুন শব্দ দেবে। আর বাংলা একাডেমীর ডিজি তা নিয়ে নিবেন! তাহলে আমি বাদ যাব কেন? আমি একটা শব্দ দেই ‘বুতুরি’। বুতুরি হলো বন্দপুরুষ।
বাসায় ফেরার পথে ভাবলাম মাজেদা নামের বোকা মহিলার অবস্থাটা দেখে যাই, সে কি এখনো হাগুর ওপর দাঁড়িয়ে আছে? থাকলেই ভালো হয়, উচিত শিক্ষা। এই মহিলার কারণে তার স্বামী আমাকে পেত্নী বলার স্পর্ধা দেখিয়েছে, বাঁশগাছে পা বুলিয়ে বসে থাকতে বলেছে। মাজেদা নামের এই মহিলার উচিত সারা জীবন হাগুর ওপর দাঁড়িয়ে থাকা।
মাজেদা বেগম
আমি অনেক বাদ ছেলে দেখেছি, হিমুর মতো বদ এখনো দেখি নাই। ভবিষ্যতে কোনোদিন দেখব তাও মনে হয় না। আরে তুই দেখেছিস আমি হাগুর উপর দাঁড়িয়ে আছি। সাবান-পানি আনতে গিয়ে উধাও হয়ে গেলি? মেয়েটা তার সঙ্গে গেছে, আমি নিশ্চিত এখন হিমুর পিছনে পিছনে মেয়ে ঘুরছে। হিমু তাকে জাদু করে ফেলেছে।
হিমুর কাজই হলো জাদু করা। আমাকেও জাদু করেছে। জাদু না করলে তাকে আমি প্রশ্ৰয় দেই? রাজ্যের ধুলাবালি মেখে পথে পথে হাঁটে। এই নোংরা। পা নিয়ে আমার ঘরে ঢোকে। আমি তো কখনো বলি না, যা বাথরুম থেকে পা ধুয়ে আয়। বরং বলি, নাশতা খেয়ে এসেছিস; যা খাবার টেবিলে বোস। কী খাবি বল। দুধ-কলা দিয়ে পুষলেও কালসাপ কালসাপই থাকে।
আচ্ছা, বাংলাদেশের মানুষদের কি কাজকর্ম নাই? তোরা আমার চারদিকে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? একজন নোংরার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে—এটা দেখার কিছু আছে? তোরা কি জীবনে হাণ্ড দেখস নাই? প্রতিদিনই তো বাথরুমে যাস। নিজের হাগু দেখস না? ঠিক আছে দাঁড়িয়ে আছিস দাঁড়িয়ে থাক। চুপচাপ থাক। নানান রঙের কথা বলার দরকার কী? একজন চোখ-মুখ শুকনা করে পাশের জনকে বলল, ‘খালাম্মা! কচোপ্ত’র উপরে খাড়ায়া আছেন।’ আরে বদের বাচ্চা, কাচা গু পাকা গু আবার কী? থাপড়ানো দরকার।
আমি দাঁড়িয়ে আছি তো দাঁড়িয়েই আছি। হিমুর দেখা নাই, তুতুরিরও দেখা নাই। আমি এখন কী করব? শরীর উল্টিয়ে বমি আসছে। বমি করলে আমার চারপাশের পাবলিকের সুবিধা হয়। তারা মজা পায়। বাংলাদেশের মানুষদের মজার খুব অভাব।