জি-না।
আমি ইচ্ছা করলে পরির সাথে মুহাব্বতের ব্যবস্থা করে দিতে পারি। তবে জীন পরিদের কাছ থেকে দূরে থাকা ভালো। আল্লাহহুম্মা ইন্নী আউয়ুবিকা মিনাল খুবুসি আল খাবায়িত।
এর অর্থ কী?
অর্থ হলো, হে আল্লাহপাক! দুষ্ট পুরুষ জ্বীন এবং দুষ্ট মহিলা জীনের অনিষ্ট থেকে আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। পরি হলো মহিলা জ্বীন।
রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টিও বাড়তে লাগল। আরামদায়ক আবহাওয়া। হুজুর একমনে জিগির করতে লাগলেন। বৃষ্টির শব্দের সঙ্গে জিগিরের শব্দ মিলে অদ্ভুত এক পরিবেশ তৈরি হলো।
রাত তিনটা পর্যন্ত আমি হুজুরের সঙ্গে জিগির করলাম। হুজুর বললেন, জিগির তোমার কলবের ভেতর ঢুকায়ে দিব। দিনরাত জিগির হতে থাকবে, তোমার নিজের কিছু করতে হবে না। বিলো, আলহামদুলিল্লাহ।
আমি বললাম, আলহামদুলিল্লাহ।
হুজুর বললেন, তুমি আমার সঙ্গে থেকে যাও। দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা থাকো। দেখবা কী তোমারে দিব।
আমি বললাম, হুজুর অনুমতি দিলে ফ্রি-ল্যান্স কাজ করব।
সেটা আবার কী?
সময়-সুযোগমতো মাজারের কাজ করব। হুজুরের পা টিপব। পার্টটাইম চাকরি, ফুলটাইম না।
হুজুর উদাস গলায় বললেন, ঠিক আছে তোমার বিবেচনা। জোর জবরদস্তি নাই।
চেষ্টা করব রাতে এখানে থাকতে। দিনে পারব না। কাজকর্ম আছে।
কী কাজকর্ম?
আমি জবাব দিলাম না, হুজুরের মতো উদাস হয়ে পেলাম।
হুজুর বললেন, খারাপ কোনো কাইজ কাম যদি করো তাহলে কাজ শেষ হওয়ামাত্র পীর বাচ্চাবাবার সুপারিশ নিয়া আল্লাহপাকের কাছে মাফ চাবা, মাফ পায়া যাবে। দেরি করে ক্ষমা চাইলে কিন্তু হবে না। সঙ্গে সঙ্গে মাফি মাংতে হবে।
আমি বললাম, ভালো জিনিস শিখলাম হুজুর। এখন আপনার মোবাইলটা দেন, একটা টেলিফোন করব।
এত রাতে কারে টেলিফোন করবা? আচ্ছা থাক, আমারে বলার প্রয়োজন নাই। মানুষের সবকিছু জানতে চাওয়া ঠিক না। সবকিছু জানবেন শুধু আল্লাহপাক।
আমি ডিজি স্যারকে টেলিফোন করলাম। কয়েকবার রিং হতেই তিনি ধরলেন। আতঙ্কিত গলায় বললেন, কে?
স্যার আমি হিমু। ওই যে আপনার কাছে দুটা শব্দ নিয়ে গিয়েছিলাম-ফুতুরি ও ভুঁতুঁরি।
কী চাও?
ভূতুরি বানানটা নিয়ে সমস্যায় পড়েছি। আমার মনে হয় একটা চন্দ্ৰবিন্দু থাকলেই চলবে। দুটা চন্দ্ৰবিন্দুতে বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে।
ডিজি স্যার লাইন কেটে দিলেন। তবে লাইন কাটার আগে চাপা গলায় বললেন, সান অব এ বিচ!
আমি ডিজি, বাংলা একাডেমী
আমি সচরাচর গালাগালি করি না। আমার রুচিতে বাঁধে। আমার গালাগালি স্টুপিডে সীমাবদ্ধ। তবে কিছুক্ষণ আগে হিমু নামধারী একজনকে ‘সান অব এ বিচ’ বলেছি। এই বদ আমার পেছনে লেগেছে। রাত বাজে তিনটা পঁয়তাল্লিশ। এত রাতে আমার ঘুম ভাঙিয়ে ‘ভুতুরি’ বানান নিয়ে কথা বলে? এ চাচ্ছে কী? বুঝতেই পারছি কোনো একটা বিশেষ মতলব নিয়ে সে ঘুরছে। বাংলাদেশ ভরতি হয়ে গেছে। মতলববাজে। কে কোন মতলব নিয়ে ঘুরে বোঝার উপায় নেই। সব মতলববাজের পেছনে দু-তিনটা মন্ত্রী-মিনিস্টার থাকে। এইটাই সমস্যা।
আমার হটলাইনের টেলিফোন নম্বর হিমু মতলববাজটাকে কে দিল? যে দিয়েছে সেও হিমুর সঙ্গে জড়িত। আমার পেছনে একটা চক্র কাজ করছে। চক্রের প্রধানটা কে? আমার পিএস। দাবির কি জড়িত? কম্পাসের কাটা তার দিকে ঘুরে।
দবির অতি ভদ্র অতি বিনয়ী ছেলে। ভদ্রতা ও বিনয়ের ভেতর শয়তান বসে থাকে। ভদ্রতা-বিনয়-ভালোমানুষি হলো শয়তানের মুখোশ।
আমি ভোর হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। ভোর হলেই দবিরকে টেলিফোন করব। অতি ভদ্রভাবে জিজ্ঞেস করব হিমু নামের বদটাকে সে আমার গোপন নম্বর দিয়েছে কি না। যদি দিয়ে থাকে তাহলে কেন দিল? হিমু এমন কে যে তাকে আমার গোপন নম্বর দিতে হবে!
আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, এটা পরিষ্কার; কে করছে, কেন করছে।–এটাই বুঝতে পারছি না। আমার প্রধান সমস্যা, আমি কাউকে না বলতে পারি না। সরকারি ছাত্রদলের একসময়ের বড় নেতা এসে পাণ্ডুলিপি জমা দিল। পাণ্ডুলিপির নাম ‘বাংলার ঐতিহ্য চেপা শুঁটকির একশত রেসিপি’। তাকে কষে চড় দেওয়া দরকার। তা না করে বললাম, একটি দেশের কালচারের অং রান্নাবান্না। পাণ্ডুলিপি এখনই রিভিউয়ারদের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি। সে বলে কী, রিভিউয়ার লাগবে না, মন্ত্রীর সুপারিশ আছে। মন্ত্রী মহোদয় আপনাকে টেলিফোন করবেন।
আমি বললাম, অবশ্যই, অবশ্যই। তবে আমাদেরও তো কিছু নিয়মকানুন আছে।
যেখানে তিনজন মন্ত্রীর সুপারিশ সেখানে আবার নিয়মকানুন কী?
আমি আবারও বললাম, অবশ্যই, অবশ্যই।
নিন পূর্ত মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলুন।
আমাকে মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলতে হলো।
এখন রাত প্ৰায় চারটা। হিমু বদমাইশটা যদি এখন বলে, রেল মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলুন, আমাকে কথা বলতেই হবে। মন্ত্রী মহোদয়রা রাতে কম ঘুমান। তারা অদ্ভুত অদ্ভুত সময়ে কথা বলেন। আমি ফ্রিজ থেকে বোতল বের করে একগ্লাস ঠান্ডা পানি খেলাম। বারান্দায় বসে একটা সিগারেট শেষ করলাম। মন অস্থির হয়েছে। অস্থির অবস্থায় বিছানায় ঘুমুতে যাওয়া ঠিক না। অস্থির অবস্থায় ঘুমুতে যাওয়া মানুষ দুঃস্বপ্ন দেখে।
সিগারেট খাওয়ার কারণেই কি না জানি না, অস্থিরতা খানিকটা কমল। বিছানায় গিয়েছি, চোখ লেগে এসেছে। আবার টেলিফোন। বদটাই কি আবার করেছে? নম্বর সেভ করা নাই বলে বুঝতে পারছি না। টেলিফোন ধরব নাকি ধরব না? কিছুক্ষণ কথা বলে তার মতলবটা ধরা যেতে পারে।