কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের নাম বা বিশেষ কোন দোষের উল্লেখ করিবার আমাদের আদৌ ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু কুতার্কিকদিগের কুতর্ক নিবারণের নিমিত্ত এইরূপ ক্রীতদাসী ওরফে দেবীর প্রমাণ দিতে বাধ্য হইলাম। এজন্য আমরা নিজেই দুঃখিত। কিন্তু কর্ত্তব্য অবশ্যপালনীয়।
৩
পশ্চিমাঞ্চলের জনৈক শমস্-উল-উলামা (জাকউল্লা সাহেব) বলেন “নথ নাকেল এর (নাকাদড়ীর)ই রূপান্তর!”
৪
অলঙ্কার পরা ও উক্তরূপে টাকার শ্রাদ্ধ করা একই কথা। কিন্তুু আশা করা যায় যে উক্ত প্রকারে টাকার শ্রাদ্ধ না করিয়া টাকার সদ্ব্যয় করাই অনেকে ন্যায়সঙ্গত মনে করিবেন।
৫
সেদিন (গত ৯ই এপ্রিলের) একখানা উর্দ্দু কাগজে দেখিলামঃ- তুরস্কের স্ত্রীলোকেরা সুলতান-সমীপে আবেদন করিয়াছেন যে, “চারি প্রাচীরের ভিতর থাকা ব্যতীত আমাদের আর কোন কাজ নাই। আমাদিগকে অন্ততঃ এ পরিমাণ শিক্ষা দেয়া হউক, যাহার সাহায্যে যুদ্ধের সময় আমরা আপন আপন বাটী এবং নগর পুরুষদের মত বন্দুক কামান দ্বারা রক্ষা করিতে পারি। তাঁহারা ঐ আবেদনে নিম্নলিখিত উপকারগুলি প্রদর্শন করিয়াছেনঃ
(১) প্রধান উপকার এই যে নগরাদি রক্ষা করিবার জন্য অনেকগুলি সৈন্য নিযুক্ত থাকায় যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্য সংখ্যা কম হওয়ায় যেক্ষেতি হয়, তাহা আর হইবে না। (যেহেতু “অবলা”গণ নগর রক্ষা করিবেন!)
(২) সন্তান সন্ততিপূর্ণ শৈশব হইতেই যুদ্ধবিদ্যায় অভ্যস্ত হইবে। পিতা মাতা উভয়ে সেপাহী হইলে শিশুগণ ভীরু, কাপুরুষ হইবে না।
(৩) তাঁহারা বিশেষ এক নমুনার উর্দ্দি (Uniform) প্রস্তুুত করিবেন, যাহাতে চক্ষু ও নাসিকা ব্যতীত মুখের অবশিষ্ট অংশ এবং সর্ব্বাঙ্গ সম্পূর্ণ আবৃত থাকিবে।
(৪) অবরোধপ্রথার সম্মান রক্ষার্থে এই স্থির হইয়াছে যে, অন্ততঃ তিন বৎসর পর্যন্ত প্রত্যেক পরিবারের সৈনিক পুরুষেরা আপন আপন আত্মীয় রমণীদিগকে যুদ্ধ শিক্ষা দিবেন। অতঃপর যুদ্ধশিক্ষাপ্রাপ্ত মহিলাগণ যুদ্ধশিক্ষা দিবার জন্য ঘরে ঘরে দেখা দিবেন। উক্ত মহিলাগণ ইহাও লিখিয়াছেন যে, “আমরা উর্দ্দির (Uniform এর) খরচের জন্য গবর্ণমেন্টকে কষ্ট দিব না। কেবল বন্দুক এবং অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র সরকার হইতে গাইতে আশা করি।” দেখা যাইক, সুলতান মহোদয় এ দরখাস্তের কি উত্তর দেন।
উপরোক্ত সংবাদ সত্য কি না, সেজন্য সেই পত্রিকাখানি দায়ী। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস, তুরস্ক-রমণীদের ওরূপ আকাঙ্খা হওয়া একেবারে অসম্ভব নহে। ইতিহাসে শুনা যায়, পূর্ব্বে তাঁহারা যুদ্ধ করিতেন। একটা যেমন তেমন “মুসলমানী পুঁথি”র পাতা উল্টাইলেও আমরা দেখিতে পাই-(যুদ্ধ করিতে যাইয়া)-
“জয়গুণ নামে বাদশাহজাদী কয়েদ হইল যদি,
আর যত আরব্য সওয়াব” ইত্যাদি।
বলি, এদেশের যে সমাজপতিগণ “লেডীকেরাণী” হওয়ার প্রস্তাব শুনিলে চমকাইয়া উঠেন (shocked হন)-যাঁহারা অবলার হস্তে পুতুল সাজান ও ফুলের মালা গাঁথা ব্যতীত আর কোন শ্রমসাধ্য কার্য্যের ভার দেওয়ার কল্পনাই করিতে পারেন না, তাঁহারা ঐ লেডীযোদ্ধা হওয়ার প্রস্তাব শুনিলে কি করিবেন? মূর্চ্ছা যাইবেন না ত?
৬
কোন কোন নথের ব্যাস ছয় ইঞ্চি এবং পরিধি ন্যূনাধিক ১৯ ইঞ্চি হয়! ওজন এক ছটাক!!
৭
পরন্তু ইউরোপীয় খৃষ্টানদের বিশ্বাস যে Eve অভিশপ্তা হইয়াছিলেন, সত্য; কিন্তু যীশুখৃষ্ট আসিয়া নারীজাতিকে সে অভিশাপ হইতে মুক্তি দিয়াছেন। তাঁহারা বলেন, Through women came aurse and sin; and through women came blessing and salvation also· (ভাবার্থ-নারীর দোষে জগতে অভিশাপ ও পাপ আসিয়াছে এবং নারীর কল্যাণেই আর্শীর্ব্বাদ এবং মুক্তিও আসিয়াছে)। পুরুষ খ্রীষ্টের পিতা হয় নাই, কিন্তু রমণী যীশুখ্রীষ্টের মাতৃপদ প্রাপ্তে গৌরবান্বিতা হইয়াছেন।
৮
বঙ্গীয় কোন কোন সমাজের স্ত্রীলোক যে স্বাধীনতার দাবী করিয়া থাকেন, তাহা প্রকৃত স্বাধীনতা নহে-ফাঁকা আওয়াজ মাত্র।
৯
সমাজের সমঝদার (reasonable) পুরুষেরা প্রাণদণ্ডের বিধান নাও দিতে পারেন, কিন্তু “unreasonable” অবলাসরলাগণ; (যাঁহারা যুক্তি তর্কের ধার ধারেন না, তাঁহারা) শতমুখী ও আঁইস বঁটীর ব্যবস্থা নিশ্চয় দিবেন, জানি!!
১০
আমাদের উন্নতির ভাব বুঝাইবার জন্য পুরুষদের সমকক্ষতা বলিতেছি। নচেৎ কিসের সহিত এ উন্নতির তুলনা দিব? পুরুষদের অবস্থাই আমাদের উন্নতির আদর্শ। একটা পরিবারের পুত্র ও কন্যায় যে প্রকার সমকক্ষতা থাকা উচিত, আমরা তাহাই চাই। যেহেতু পুরুষ সমাজের পুত্র, আমরা সমাজের কন্যা! আমরা ইহা বলি না যে “কুমারের মাথায় যেমন উষ্ণীব দিয়াছেন, কুমারীর মাথায়ও তাহাই দিবেন!” বরং এই বলি, কুমারের মস্তক শিরন্ত্রাণে সাজাইতে যতখানি যত্ন ও ব্যয় করা হয়, কুমারীর মাথা ঢাকিবার ওড়নাখানা প্রস্তুতের নিমিত্তও ততখানি যত্ন ব্যয় করা হউক।”
১১
কিন্তু আমাদিগকে তাহা করিতে হইবে কেন? কৃষক প্রজা থাকিতে জমীদার কাঁধে লাঙ্গল লইবেন কেন? শুধু রাজার চাকরী ছাড়া আর কিছু উচ্চদরের কার্য্য কি আমরা করিতে পারি না? কেরাণী ইত্যাদির কথা কেবল উদাহরণ স্বরূপ বলা হইল। যেমন স্বর্গের বর্ণনায় বলিতে হয়-সেখানে শীত নাই,-গ্রীস্ম নাই, কেবল চিরবসন্ত বিরাজমান থাকে। স্বর্গোদ্যানে মরকত লতিকায় হীরক-প্রসূন ফোটে!! তাই আমাদের উচ্চ আশা বুঝাইবার নিমিত্ত লেডীভাইসরয় হইবার কথা না বলিলে কিসের সহিত আমাদের সে উচ্চদরের কার্য্যের উপমা দিব?