“এই হুকুমটা তোমার ওপরও রইল।”
হঠাৎ তীব্র একটা চোখ-ধাঁদানো জোরালো টর্চের আলো বারোহার ঠিক মুখের ওপর পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অবিশ্বাস্যভাবে এই কথাগুলো শুনতে পেলাম। কথাগুলো একটি মেয়ের গলার – আর সে মেয়ে যে এলসা তার কথা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে পরাশর কামরার অন্য একটা আলো জ্বেলে দেওয়ায় তা বুঝতে পারলাম। এলসার এক হাতে টর্চ আর অন্য হাতে বারোহার ঠিক কপাল লক্ষ্য করে উঁচিয়ে ধরা পিস্তল।
এলসা শুধু একা নয় তার সামনে আর একটা যে মেয়ে আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে তাকে মঁসিয়ে রেনোয়া-র ভাগনী বলেই চিনলাম।
আলো জ্বলবার পরই আবার কড়া আদেশ শোনা গেল, “তোমার পিস্তল ফেলে দাও বারোহা। তুমি যত বড় লক্ষভেদীই হও, তুমি জানো যে তোমার হাত ঘুরিয়ে পিস্তল ছোঁড়ার আগেই তোমার মাথার ঘিলু এই কার্পেটকে নোংরা করে দেবে। ফেলো পিস্তলটা।”
বারোহা দুচোখে অগ্নি বৃষ্টি করেও পিস্তল ফেলে দিতে এবার বাধ্য হল।
জিনেৎকে টর্চ ধরা হাতে ঘৃণাভরে বারোহার দিকে ঠেলে দিয়ে এলসা এবার বললে, “এই নাও তোমার যোগ্য সহচরীকে বুড়ো লম্পট মঁসিয়ে রেনোয়াকে কাবু করবার জন্যে ভাগনী বলে সেবাদাসী করে নিজেই যাকে তুমি জুটিয়ে দিয়েছেলে।”
এ নাটক দেখতে দেখতে সত্যি তখন আমি স্তম্ভিত হয়ে গেছি। পরাশরের কথায় আমার চমক ভাঙল। বারোহার ফেলে দেওয়া পিস্তলটা কুড়িয়ে নিয়ে সে আমায় বললে, “সাবধানের মার নেই। আর কিছু না পাও ওপর থেকে মিস এলসার স্কার্ফ টার্ফ কিছু এনে গুণধরের হাত দুটো একটু বেঁধে ফেলো দিকি।”
পাশের ঘরে বাঁধবার কিছু খোঁজবার জন্যে যেতে যেতে একটা কথা শুধু না জিজ্ঞেস করে পারলাম না। “আচ্ছা মিস এলসার রহস্যটা দু কথায় একটু বলবে? উনি কি আমাদেরই আরক্ষী বাহিনীর কেউ? তুমি কি ওকে চিনতে?”
এলসা হাসল, আর সংক্ষেপেই উত্তর দিলে পরাশর, “না, উনি ইণ্টারপোল।”
বিশ্ব পুলিশ সংস্থার একজন বড় গোয়েন্দা। প্রায় দু বছর ধরে নানা দেশে নানা বেশে বারোহাকে চোখে চোখে রেখে যাকে বলে রাঙা হাতে ধরবার জন্যে পেছনে লেগে আছেন। আর তাঁকে চেনার কথা জিজ্ঞাসা করছ? ওঁকে চিনতে দেরী হয়েছে বলেই এ ব্যাপারটা এতদূর গড়াতে পেরেছে।
পাঁচতারা হোটেলের সব ঝামেলা চুকে তুকে যাবার পর পরাশরের সঙ্গে এই ব্যাপারটা নিয়েই আলোচনা করতে করতে একদিন জ্যোতিষ চক্রবর্তী শঙ্কর মহারাজের কথা জানতে চেয়েছিলাম। পরাশর হেসে বলেছিল, “আরে উনিই ত চর চরাবার চাঁই। জ্যোতিষ সেজে দেশী বিদেশীদের পেটের খবর বার করে আমাদের জন্যে জমা করে রাখেন। এরপর একটু ধোঁকায় ধাঁধায় পড়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, “আচ্ছা, তোমাদের এই আন্তর্জাতিক ঠগ ধরার ব্যাপারে আমাকে অমন ধড়াচূড়া পরিয়ে নিয়ে গেছলে কেন বলো ত? আমি তোমাদের কোন কাজে ত লাগিনি!”
“বাঃ, তোমায় না নিয়ে গেলে এ বৃত্তান্তের কথক হত কে! আমি কি আবার নিজের জবানীর দায়ে পড়ব নাকি!”
বন্ধু বাৎসল্য এরপর আর রাখা যায়!
শেষ