ফল কিন্তু উল্টো হল। বারোহা সাময়িক ব্যাথাটা ঝেড়ে ফেলে আবার সোজা হয়ে বসে বললে, “আমার এ উত্তেজনা মিছিমিছি বলছেন! আপনি যা বলছেন তার মানেটা নিজেই তলিয়ে বুঝেছেন। আপনার মতে আমাদের খাবার বা পানীয়ে বিষ অতি অবশ্য কিছু ছিল। সে বিষের জন্যে এ হোটেলের ব্যবস্থা বা লোকজন দায়ী নয়। তার অর্থ এই দাঁড়াচ্ছে নাকি যে আমাদের খাবারে বা ড্রিংকে আমাদের পার্টির কেউই বিষ মিশিয়েছে? কিন্তু পার্টির চারজনই আমরা যে অসুস্থ সেটা হিসেবে ধরেছেন?”
“মিস এলসার অসুস্থ হওয়ার খবর অবশ্য আমি এখনো পাইনি।” জানালে মিঃ সেঙ্গার।
“খবর না পেলেই তিনি সুস্থ মনে করার কোনো কারণ নেই।”
ম্যানেজারের মন্তব্যটা সংশোধন করলে বারোহা, “মিস এলসার কোনো খবর না পাওয়া ত আরো ভাবনার ব্যাপার বলে আমার মনে হচ্ছে। তিনি হয়ত আমাদের চেয়ে বেশী অসুস্থ বলে কোনো খবর দিতেও পারেন নি?”
“না, তিনি অসুস্থ নন।” বাধ্য হয়েই প্রতিবাদ জানালাম।
“অসুস্থ নয়। আপনি কি করে জানলেন।” একটু সন্দিগ্ধ ভাবেই জিজ্ঞাসা করলে বারোহা।
“জানলাম, আমি তাঁকে সুস্থ শরীরে ওপরের ল্যাণ্ডিং-এ নিচে নামবার লিফটের জন্যে অপেক্ষা করতে দেখেছি বলে।”
“সেই অত সকালে আপনি নিজের কামরায় যাবার সময় তাঁকে ল্যাণ্ডিং-এ দেখেছেন!” মিঃ সেঙ্গার সবিস্ময়ে বললেন, “কিন্তু মিস এলসা ত সে লিফটে নিচে নামেন নি। আমি আর মিঃ বর্মা ঐ লিফটে ওপরে আসব বলেই অপেক্ষা করছিলাম। লিফট ত কোথাও না থেমে সোজা নিচে নেমে এসেছে।”
তাহেল তিনি বোধহয় কিছু ভেবে তাঁর কামরাতেই আবার ফিরে গেছেন! বারোহা বললে, “তার কারমায় একবার ফোন করে দেখলে ত পারেন।”
“হ্যাঁ, তাই করুন।” বললে পরাশর, “নম্বর ত চারশ’ পঁচিশ।”
চারশ’ পঁচিশ শুনে মনে মনে একটু চমকালাম। পঁচিশ মানে একেবারে আমার পাশের কামরা। আমাকে ঠিক ছাব্বিশ নম্বরেই ঘর দেবার মধ্যে সেদিক দিয়ে কোনো অর্থ আছে নাকি?
মিঃ সেঙ্গার তখন এলসার ঘরে ডায়াল করে কোনো সাড়াই কিন্তু পাচ্ছেন না। ফোনটা ধরে রেখেই তিনি আমাদের দিকে ফিরে বললেন, “এ তো শুধু রিং-ই হয়ে যাচ্ছে। কেউ ধরছে না।”
“তাহলে মিঃ ভদ্র আর কাউকে দেখে এলসা মনে করে ভুল করেননি ত?” সন্দেহ প্রকাশ করলে বারোহা।
“না, সে-ভুল হওয়াও সম্ভব নয়,” বললেন ম্যানেজার, “ফ্লোরে এলসার বয়স বা চেহারার কোনো মেয়েই নেই।”
লিফটের জন্যে ল্যাণ্ডিং-এ দাঁড়িয়ে থাকলেও কোন কারণে হয়ত তখন না গিয়ে এলসা পরে নেমে গেছে মনে করে নিচের রিসেপশন কাউণ্টারে খোঁজ নেওয়া হল এর পর। না, মিস এলসা নিচে নামেই নি বলে সেখান থেকে জানা গেল।
“তাহলে তার কামরাতেই খোঁজ করতে যেতে হয়।” উদ্বিগ্ন হয়ে বললে বারোহা।
“তা যাওয়া যাবেখন, পরে।” বললে পরাশর, “আপাততঃ উপরের তলায় একবার ফোন করে দেখুন ত মিঃ সেঙ্গার।”
“ওপরের তলায় ফোন করে দেখব,” ম্যানেজার বেশ অবাক, “সে কি!”
“নিচে না নেমে থাকলে ওপরে গেছে ভাবাই স্বাভাবিক নয় কি!” পরাশরের গলায় একটু যেন প্রচ্ছ্ন্ন কৌতুক।
“কিন্তু ওপরতলায় ফোন করা হবে কাকে।” জিজ্ঞাসা করলে বারোহা।
“র্যাথবোনদেরই ফোন করে দেখুন।” নির্দেশ দিলে পরাশর।
“র্যাথবোনদের?” বারোহার গলায় তার অবিশ্বাসের সুরটা অস্পষ্ট রইল না। কিন্তু র্যাথবোনদের কামরাতেই এলসার খবর পাওয়া গেল। সে কিচ্ছুক্ষণ আগে ও-কামরাতেই গেছে। এই মিনিট দুযেক হল নিজের কামরয় নেমে গেছে।
“মিস এলসার হঠাৎ র্যাথবোনদের ঘরে যাবার মানে।” ভুরু কুঁচকে নিজের বিমূঢ়তাটা বুঝিয়ে বারোহা এবার সোজাসুজি পরাশরকেই চেপে ধরতে চাইল, “কিন্তু আপনি সবকিছু জড়িয়ে যে রকম একটা শয়তানী ষড়যন্ত্র কল্পনা করছেন, এই সবেমাত্র দিল্লীর ঐ শোভরাজের দল ধরা পড়ার পর নেহাৎ গবেট ছাড়া কারুর পক্ষে সেরকম কিছু করা কি সম্ভব? খবরের কাগজে কাগজে এখনো ত সে দলের নানা খবর বার হচ্ছে। কি করে তারা ট্যুরিস্ট সেজে নিরীহ সরল অন্য ট্যুরিস্টদের সঙ্গে ভাব জমিয়ে তাদের বিষ দিয়ে অজ্ঞান কে যথাসর্বস্ব লুট করত সে বিবরণ ত এখন কারুর অজানা নয়। সদ্য সদ্য ঐ ঘটনার পর ঐ এক প্যাঁচ দিয়ে বাজিমাৎ করার কথা কোনো আহাম্মকও নিশ্চয় ভাববে না।”
“আহাম্মকেরা পারবে না বলেই অতি বুদ্ধিমানেরা ভাববে।” পরাশর তার নিজস্ব ব্য্খ্যা শোনালে, “সাধারণের পক্ষে বিশ্বাস করা শক্ত বলেই এই সময়টা তারা বেছে নেবে একই প্যাঁচ খাটাবার জন্যে।”
“না। আমায় মাপ করবেন মিঃ বর্মা,” নিজের মাথাটা ঝাঁকি দিয়ে বললে বারোহা। “আমার মাথাটা কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। আপনার কথা আমি বুঝতে পারছি না।”
“বোঝবার চেষ্টা এখন তাহলে করবেন না।” পরাশর উপদেশের সুরেই বললে, “আপনি শুধু একটু সাবধানে থাকবেন।”
“আমি সাবধানে থাকব।” পরাশরের কথায় বারোহা আমাদের মতই হতভম্ব, “আমারও এখনো ভয়ের কিছু আছে নাকি? কাল রাত্রের ব্যাপারেও তা কেটে যায় নি?”
“না, মিঃ বারোহা!” বেশ গম্ভীর হয়েই জানালে পরাশর, “আপনার আসল বিপদ এইবারেই আসছে। আর র্যা থবোনদের চেয়েও তা অনেক গুরুতর।”
“বলেন কি?” বারোহার মুখ দেখে মনে হল পরাশরের কথাটা ঠাট্টা না সত্যি সে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। হেসে উঠবে না ভয় পাবে ঠিক করতে পারছে না তাই।