শিবানী ঠাট্টা করে জিজ্ঞাসা করেন, এখনই শেখাবে?
না বউদি, ঠাট্টার কথা নয়। আপনি দেখবেন খোকনের মতন ড্রাইভিং…
তোমার খোকন তো সবই করবে।
করবেই তো!
.
শিবানী হাসতে হাসতে স্বামীকে বললেন, বিহারী আজ কি বলছিল জানো?
কি?
ট্রাফিক পুলিশটা নম্বর নিয়েছে বলে ও বলছিল, খোকনকে পুলিশ কমিশনার হতেই হবে।
ও একটা বদ্ধ পাগল!
কিন্তু ও খোকনকে এত ভালোবাসে যে তা বলার নয়।
তা ঠিক।
বিহারীর বাড়ি থেকে ঘুরে এসেই শিবানী মিস্টার সরকারকে বললেন মেয়েটার রং কালো হলেও দেখতে ভারি সুন্দর হবে।
তাই নাকি?
দিন কয়েক পরে তুমিও একবার দেখে এসো। মেয়েটাকে তোমার নিশ্চয়ই ভালো লাগবে।
মিস্টার সরকার শিবানীর কানে কানে বললেন, যতদিন তুমি আমাকে একটা মেয়ে দিচ্ছ না, ততদিন অন্যের মেয়েদের নিশ্চয়ই ভালো লাগবে।
একটা ছেলে দিয়েছি। আমি আর কিছু দিতে পারব না।
ছি, ছি, ওকথা বলে না।
অত যদি মেয়ের সখ হয় তাহলে আরেকটা বিয়ে করো।
ঠিক আছে। ডিভোর্স করে তোমাকেই আবার বিয়ে করছি।
শিবানী হাসতে হাসতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
.
কদিন পরে বিহারী শিবানীকে বলল, বউদি, এবার দাদাকে গাড়ি চালানো শিখিয়ে দিই?
কেন?
আমি দু-চার দিন না থাকলে দাদার খুব অসুবিধে হয়।
কেন? অফিসের গাড়িতেই তো যাতায়াত করেন।
অফিস যাতায়াত চলে যায় ঠিকই কিন্তু আর তো কোথাও যেতে পারেন না।
এই বয়সে গাড়ি চালাতে গিয়ে…
দাদার কি এমন বয়স হয়েছে? অফিসের সাতজন ডেপুটি ডিভিশন্যাল ম্যানেজারের মধ্যে দাদার বয়স সব চাইতে কম।
শেখাবে শেখাও কিন্তু তোমার দায়িত্ব।
আপনি কিছু চিন্তা করবেন না বউদি। আমি তিন মাসের মধ্যেই দাদাকে এমন গাড়ি চালানো শিখিয়ে দেবো যে তখন আমি বড় জামাইবাবুদের টি গার্ডেনে চাকরি নিয়ে…
শিবানী হাসতে হাসতে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি খোকনকে ছেড়ে যেতে পারবে?
বিহারী কোন জবাব দিতে পারে না। শুধু হাসে।
মাস চারেক পরের কথা।
স্টিয়ারিং-এ মিস্টার সরকার, পাশে বিহারী, পিছনে শিবানী আর খোকন।
দক্ষিণেশ্বর হয়ে গান্ধীঘাট। সেখান থেকে ঢাকুরিয়া হয়ে বাড়ি।
শিবানী হাসতে হাসতে বললেন, বিহারী, তোমার ছাত্র তাহলে অনার্স নিয়েই পাস করলেন।
৩. দিনগুলো বেশ কাটছে
দিনগুলো বেশ কাটছে। মিস্টার সরকার ডিভিশনাল ম্যানেজার হয়েছেন। বোম্বে বদলী হবার কথা হয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত কলকাতাতেই থেকে গেছেন। মাঝে অবশ্য এক বছরের জন্য পাটনা যেতে হয়েছিল, তবে শিবানী বা খোকনকে নিয়ে যাননি। ওরা পাটনা গেলে খোকনের পড়াশোনার গণ্ডগোল হতো। মিস্টার সরকার প্রত্যেক মাসে একবার আসতেন। বিহারী ছিল বলে শিবানীর কোন অসুবিধে হয়নি। তাছাড়া শ্বশুর-শাশুড়ি মাস ছয়েক ছিলেন।
.
বিহাইকাকা, ও বিহাইকাকা, শুনে যাও। পড়ার ঘর থেকেই খোকন বিহারীকে ডাকে।
কিরে খোকনদা?
কাছে এসো। কানে কানে বলব। খুব প্রাইভেট কথা।
মিস্টার সরকার হাসতে হাসতে স্ত্রীকে বললেন, শিবানী তোমার ছেলের মাথায় বোধহয় কোন মতলব এসেছে।
শিবানীও হাসেন। বলেন, বিহারী আদর দিয়ে দিয়েই ছেলেটার বারোটা বাজাবে।
বিহারী কোন মতে হাসি চেপে গম্ভীর হয়ে বলল, আমি কী করলাম বউদি?
না, না, তুমি কি করবে? তুমি কিছু করোনি।
বিহারী কিছু বলার আগেই আবার খোকন ডাকল, কি হলো বিহাইকাকা? এলে না?
মিস্টার সরকার খোকনের দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি এখানে এসে বলে যাও না!
আমি যে পড়ছি।
খোকনের জবাব শুনে তিনজনেই হাসেন।
বিহারী আর দেরি না করে খোকনের কাছে যায়। খোকন কানে কানে ফিস ফিস করে কি যেন বলে। বিহারীও ওর কানে কানে জবাব দেয়।
বিহারী ড্রইংরুমে ফিরে আসতেই ওরা দুজনে ওর দিকে তাকালেন। বিহারী একটু হেসে খুব চাপা গলায় ফিস ফিস করে বলল, আজ গেমস পিরিয়ডে খোকনের কেডস জুতোটা কে ব্লেড দিয়ে কেটে দিয়েছে।
শিবানী বললেন, তাই নাকি?
মিস্টার সরকার বললেন, এর আগের মাসেই তো…
যাকগে। ওকে কিছু বলবেন না। বউদি, আমাকে দশটা টাকা দিন। ওর একজোড়া মোজাও কিনতে হবে।
শিবানী বললেন, ওর কি মাসে মাসেই এক জোড়া জুতোমোজা লাগবে?
ছেলেরা যদি দুষ্টুমি করে, ও কি করবে? বিহারী এক নিশ্বাসেই বলে, তাছাড়া যে গরু দুধ দেয়, তার চাটিও ভালো লাগে।
মিস্টার সরকার হাতের খবরের কাগজ না নামিয়েই বললেন, খোকনের সব ব্যাপারেই বিহারীর ওই এক যুক্তি।
শিবানী বললেন, ছেলে আমার কি এমন একেবারে বিদ্যাসাগর হয়েছে যে…
ওকথা বলবেন না বউদি; খোকনের মতন ছেলে ওদের ক্লাশে আর একটাও নেই;
আবার ওঘর থেকে খোকনের গলা শোনা গেল, বিহাইকাকা, আমার পড়া হয়ে গেল।
এবার শিবানী হাসেন। সোফা থেকে উঠতে উঠতে বললেন, নতুন জুতো-মোজা কেনার জন্য আর পড়ায় মন বসছে না।
.
খোকন আরো বড় হয়।
সকাল বেলায় স্কুল যাবার সময় বিহারীকে বলে, বিহাইকাকা, তুমি ঠিক তিনটের মধ্যে বাড়ি চলে এসো। সাড়ে তিনটের মধ্যে মাঠে না পৌঁছলে ভালো জায়গা পাব না।
তুমি স্কুল থেকে বাড়িতে এসেই একবার ফোন কোরো।
না, না, আমি বাবাকে ফোন করব না। অফিসে ফোন করলেই বাবা ভীষণ রেগে যায়।
তাহলে বউদিকে বোলো।
মার তখন ঘুমুবার সময়। মাকে ফোন করতে বললে মাও রেগে যাবে। তুমি চলে এসো।
বিহারীকে আসতেই হয়। না এসে পারে না।
সন্ধের পর মাঠ থেকে ফিরে এসেই বিহারী বলে, বউদি, এক বাটি সরষের তেল দিন।