আমরা কি কচি বাচ্চা?
তবুও এই রকম একটা কাণ্ডর পর কিছুই বললেন না?
শুনেছিলাম সবাইকে ফাইন করা হবে কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভয়ে আর কিছু করেননি।
তাহলে হোস্টেলে বেশ ভালোই আছ।
এমনি বেশ মজায় থাকি তবে খাওয়া-দাওয়ার বড় কষ্ট।
কেন?
কি বিচ্ছিরি রান্না, তুই ভাবতে পারবি না।
তাই নাকি?
হ্যাঁরে। গলা দিয়ে নামতে চায় না।
এক গাদা টাকা নিচ্ছে অথচ…
শালারা চুরি করে।
তাহলে তোমরা কি করে খাও?
কি আর করব বল? বাধ্য হয়ে খিদের জ্বালায় সবাই খেয়ে নেয়।
বড়মা তাহলে ঠিকই বলেন।
মা কি বলে?
কালও বাজার করতে গিয়ে তোমার খাওয়া-দাওয়ার কষ্টের কথা বলছিলেন।
আজ আমি যা খেলাম, হোস্টেলে এর সিকি ভাগও খাই না।
আজকের রান্নাগুলো তোমার ভালো লেগেছে?
আমি ভাবতেই পারিনি তুই এত ভালো রান্না শিখেছিস।
আজকাল বড়মাকে আমি বিশেষ রান্নাঘরে ঢুকতে দিই না।
সব তুই করিস?
বড়মা বেশিক্ষণ রান্নাঘরে থাকলেই শরীর খারাপ হয়। হঠাৎ এক একদিন এমন মাথা ধরে যে বিছানা থেকে উঠতে পারেন না।
মা যে কিছুতেই ঠিক মতন ওষুধ খাবে না।
তুমিও ঠিক জ্যাঠামণির মতন কথা বলছ।
খোকন আর শুয়ে থাকে না উঠে পড়ে। বলে, যাই, এবার একটু মার কাছে শুই।
সোনালী হেসে বলল, তুমি কলেজে পড়লেও এখনো সত্যিকার খোনই থেকে গেছ।
খোকন ঘর থেকে বেরুতে বেরুতে বলল, আমি কি বুড়ো হয়ে গেছি যে মার কাছে শুতে পারি না?
আমি কি তাই বলেছি? কিন্তু…
সোনালীকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই খোকন একটু চাপা গলায় বলল, মার পাশে শোবার দিন তো ফুরিয়ে আসছে।
কেন?
কেন আবার? এর পর বউয়ের পাশে…
এ রাম! কি অসভ্য!
খোকন সোনালীর একটা হাত চেপে ধরে বলে, এতে অসভ্যতার কি আছে? আমি যেমন বউয়ের পাশে পোবো তুইও তেমন স্বামীর…
সোনালী অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বলল, আঃ খোকনদা, কী অসভ্যতা হচ্ছে।
খোকন সোনালীর হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলল, বিয়ে করা কি অন্যায়?
অন্যায় হবে কেন?
তবে বিয়ে করার কথা বলতেই তুই আমাকে অসভ্য বললি কেন?
যখন বিয়ে করবে তখন এসব কথা বোলো। সোনালী একটু হেসে বলল, এখন বিয়ে করতে চাইলেও তোমাকে বিয়ে দেওয়া হবে না।
তুই কি আমার বিয়ে দেবার মালিক?
মালিক না হলেও আমার মতামতেরও অনেক দাম আছে।
তাই নাকি?
নিশ্চয়ই।
খোকন আর দাঁড়ায় না। সোনালীও উঠলো। বলল, আমি কিন্তু একটু পরেই চা করব।
.
খোকন মাকে জড়িয়ে শুতেই উনি বললেন, তুই এলি আর আমার দুপুরবেলার বিশ্রামের বারোটা বাজল।
তুমি ঘুমোও না।
এমন করে জড়িয়ে থাকলে কেউ ঘুমোত পারে?
অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছ। আর ঘুমোতে হবে না।
কেন, কটা বাজে?
চারটে।
এর মধ্যেই চারটে বেজে গেল?
সময় কি তোমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে?
এই তোর বকবকানি শুরু হলো।
সত্যি মা, তোমার কাছে এলেই বকবক করতে ইচ্ছে করে।
মাকে জ্বালাতন না করে কি তোর শান্তি আছে?
মার কথা শুনে খোকন হাসে।
এতক্ষণ তুই কি করছিলি?
সোনালীকে হোস্টেলের গল্প বলছিলাম।
ছুটির মধ্যে তোদের কি সত্যি টিউটোরিয়াল হবে?
আরে দূর। কে ছুটির মধ্যে টিউটোরিয়াল করবে?
তবে যে বলছিলি দিন পনেরো পরেই যেতেই হবে?
ও সোনালীকে ক্ষ্যাপাবার জন্য বলছিলাম।
তুই আসবি বলে ও আজ কটায় উঠেছে জানিস?
কটায়?
পাঁচটারও আগে।
খোকন শুনে হাসে।
ওর মা বললেন, সকাল আটটা থেকে ও আমাকে স্টেশনে যাবার জন্য তাড়া দিতে শুরু করল।
আচ্ছা মা, সোনালীদের বাড়ির কি খবর?
বিহারীর দোকানটা মোটামুটি ভালোই চলছে আর সন্তোষকে তো তোর বাবা ওঁদেরই অফিসে ঢুকিয়ে দিয়েছেন।
তাই নাকি?
হ্যাঁ। তুই জানিস না?
না।
সোনালী ওদের বাড়ি যায়?
প্রত্যেক মাসেই যায় তবে রাত্তিরে থাকে না।
কেন?
ও আর আজকাল আমাদের ছেড়ে থাকতে পারে না।
খোকন আবার হাসে।
ওর মা বলেন, তাছাড়া ও না থাকলে আমাদেরও খুব খারাপ লাগে।
তা তো লাগবেই।
বিশেষ করে তোর বাবার তো এক মিনিট ওকে না হলে চলবে না।
তাই নাকি?
ওর মা হেসে বললেন, সোনালী যেদিন ওর বাবা-মার কাছে যায় সেদিন তোর বাবাকে দেখতে হয়।
কেন? কি করেন?
অফিস থেকে বাড়ি ফিরে মিনিটে মিনিটে আমাকে শোনাবেন, হতভাগী মেয়েটা না থাকলে বাড়িটা এত ফাঁকা ফাঁকা লাগে যে।
খোকন হেসে বলে, আচ্ছা।
তারপর আটটা বাজতে না বাজতেই নিজে গাড়ি নিয়ে ছুটবেন।…
খোকন একটু জোরেই হাসে।
এখনই হাসছিল? আসলে উনি সোনালীকেই আনতে যান কিন্তু ওখানে গিয়ে বলবেন, কাল ভোরবেলায় চলে আসিস।
সোনালী থাকে?
ও হতভাগীও জানে, জ্যাঠামণি ওকে আনতেই গেছে। ও জ্যাঠামণির গাড়ি চেপে চলে আসে।
সোনালী ট্রেতে করে তিন কাপ চা নিয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে, জানো খোকনদা, বাড়িতে এসে দেখি বড়মা আমার জন্য রান্না করছেন।
খোকনের মা নিজের দুর্বলতা ঢাকার জন্য কোনমতে গম্ভীর হয়ে বললেন, আমি যখন জানি তুই আসবিই তখন তোর জন্য রান্না করব না?
খোকন চায়ের কাপে চুমুক দিয়েই মাকে বলে, যেমন বাবা তেমন তুমি! দুজনেই মেয়েটার মাথা খাছ।
ওর মা একটু রাগের ভান করে বলেন, তুই চুপ কর।
সোনালী খুশির হাসি হেসে বলল, ঠিক হয়েছে।
খোকন কটমট করে সোনালীর দিকে তাকিয়ে বলল, আমি তোর জ্যাঠামণি বা বড়মা না। ঠিক একটা থাপ্পড় খাবি।
খোকনের মা এবার সত্যি রেগে বললেন, কথায় কথায় থাপ্পড় মারা কি ধরনের কথা?
বেশ তো শাড়ি-টাড়ি পরছে। এবার কোন একটা হাবা-কানা ধরে বিয়ে দিয়ে দাও না।