তবে?
তবে আবার কি?
তাহলে জেনে-শুনে নেশা করছ কেন?
আজকালকার যুগে সবাই কিছু না কিছু নেশা করে।
সবাই মোটেও করে না।
সবাই মানে অধিকাংশ লোকই…
জানো খোকনদা, সিগারেটের গন্ধটা আমার দারুণ লাগে!
ভালো লাগে?
খুউব।
খোকন হাসে।
সোনালী একটু থেমে বলে, তবে যে যাই বলুক, কলেজের ছেলেরা একটু-আধটু সিগারেট খেলে বড্ড ক্যাবলা ক্যাবলা লাগে।
খোকন ওর কথা শুনে একটু জোরেই হাসে।
হাসছ কেন।
তোর কথা শুনে।
আমি কি এমন হাসির কথা বললাম?
খোকন ওর কথার জবাব না দিয়ে পর পর দু-তিনটে টান দিয়ে সিগারেটটা অ্যাসট্রেতে ফেলে দেয়।
আচ্ছা খোকনদা, আমি কি সত্যিই বেশ বড় হয়ে গেছি? নিজের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে সোনালী প্রশ্ন করে।
খোকন ওর দিকে একবার ভালো করে দেখে বলল, তা একটু হয়েছিস। তুমি বড়দিনের ছুটিতে যা দেখেছিলে আমি তার থেকে বড় হয়েছি?
নিশ্চয়ই হয়েছিস।
দেখে বুঝা যায়?
শাড়ি পরে তোকে একটু বড় লাগছে।
তুমিও যেন হঠাৎ বড় হয়ে গেছ।
তাই নাকি?
সত্যি বলছি।
খোকন হাসে।
সোনালী হেসে বলে, সামনের বার হয়তো দেখব তুমি দাড়ি কামাতে শুরু করেছ।
খোকন একবার নিজের মুখে হাত বুলিয়ে বললে, সামনের বার না হলেও বছর খানেকের মধ্যে শুরু করতেই হবে।
ভালো কথা খোকনদা, মীরাদির বিয়ে হয়ে গেল।
প্রদীপ আমাকেও একটা কার্ড পাঠিয়েছিল। তোরা গিয়েছিলি?
জ্যাঠামণির অফিসে মিটিং ছিল বলে যেতে পারেননি। আমি আর বড়মা গিয়েছিলাম।
জামাইবাবু কেমন হলো রে?
খুব সুন্দর।
আজকালের মধ্যেই একবার প্রদীপদের বাড়ি যেতে হবে।
প্রদীপদা বোধহয় আজ বিকেলে আসবে।
ও এসেছিল নাকি?
দু-তিন দিন আগে এসেছিলেন।
ও জানে আমি আজ আসছি?
প্রদীপদা বসে থাকতে থাকতেই তোমার চিঠিটা এলো।
তাই নাকি?
হ্যাঁ।
আর কেউ আমার খোঁজ নিতে এসেছিল?
একদিন মানসদা এসেছিলেন।
মানস? খোকন একটু বিস্মিত হয়েই জিজ্ঞাসা করল।
মানসদা এসেছিল শুনে তুমি চমকে উঠলে কেন?
ও হতভাগা লিখেছিল বিলেত যাচ্ছে।
এবার সোনালী চমকে ওঠে, তাই নাকি?
স্টেশনে নেমেই মাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমার কোনো বন্ধু-বান্ধব এসেছিল কিনা, মা বলল না কেউ তো আসেনি।
বড়মা অত খেয়াল করেননি।
তোর মতন একটা প্রাইভেট সেক্রেটারি না থাকলে আমি যে কী মুশকিলেই পড়তাম।
সোনালী হেসে বলল, জ্যাঠামণিও ঠিক একই কথা বলেন।
মা রেগে যায় না?
না। বড়মা বলেন, আমি তোমার প্রাইভেট সেক্রেটারি হবো কোন্ দুঃখে?
সত্যি, মা যদি এম-এস সি পাস করে রিসার্চ বা প্রফেসারী করতেন, তাহলে অনেক উন্নতি করতেন।
বড়মা আমাকে পড়াতে পড়াতে কি বলেন জানো?
কি?
বলেন তোর জ্যাঠামণিকে বলে আয় আমার মতন মাস্টার রাখতে হলে মাসে মাসে আড়াই শ টাকা লাগবে।
বাবা কি বলেন?
জ্যাঠামণি গম্ভীর হয়ে বলেন, বিয়ের সময় লাখ টাকা নগদ না দিলে স্বামীর ঘরে এসে এসব খেসারত দিতে হয়।
খোকন আবার একটা সিগারেট ধরাতেই সোনালী বলল, তুমি আবার সিগারেট খাচ্ছ?
দেখতে পাচ্ছিস না?
এই তো, একটু আগে খেলে।
একটু আগে মানে ঘণ্টা খানেকের উপর হয়ে গেছে।
হলেই বা!
গল্প-গুজব করতে গেলেই একটু বেশি সিগারেট খাওয়া হয়। কলেজ ছুটির দিনে তো হোস্টেলের ঘরে ঘরে দার্জিলিং-এর মতন মেঘ জমে যায়।
হোস্টেলে খুব মজা হয়, তাই না খোকনদা?
অতগুলো রাজার বাঁদর এক জায়গায় থাকলে মজা তো হবেই।
হোস্টেলে তোমাদের দেখাশুনার জন্য কোন প্রফেসর থাকেন না?
থাকেন।
খোকন সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে বলল, মাঝে মাঝে তাকে আমরা এমন টাইট দিই যে তিনি আর এক সপ্তাহ আমাদের ধারে কাছে আসেন না!
প্রফেসরকে তোমরা কী টাইট দেবে?
কত রকম টাইট দিই, তার কি ঠিক-ঠিকানা আছে।
যেমন?
খোকন মুখ টিপে টিপে হাসতে হাসতে সিগারেট খায় কিন্তু কোন কথা বলে না।
সোনালী অধৈর্য হয়ে ওঠে। বলে, বলো না খোকনদা, প্লীজ। হোস্টেলের গল্প শুনতে আমার খুব ইচ্ছে করে।
না তোকে বলব না।
কেন?
তুই কখন যে মাকে বলে দিবি, তার কি ঠিক আছে!
না, না, বলব না।
ঠিক বলছিস?
সত্যি বলছি, কাউকে বলব না।
তুই জ্যাঠামণি আর বড়মার যা ভক্ত, তোকে হোস্টেলের কথা বলতে সত্যি ভয় হয়।
মা কালীর নামে বলছি কাউকে কিছু বলব না।
খোকন সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে বলল, রোজ সকাল-সন্ধেয় হোস্টেল সুপারিন্টেন্ডেন্ট একবার আমাদের দেখতে আসেন।
কি দেখতে আসেন?
সব ছেলেরা ঘরে আছে কিনা বা পড়তে বসেছে কিনা। তাছাড়া বাইরের কোন ছেলে আছে। কিনা তাও চেক করেন।
হোস্টেলে বাইরের ছেলে থাকতে পারে?
বাইরের মানে কলেজেরই বন্ধু-বান্ধব। অনেক সময় নাইট শোতে সিনেমা দেখে বাড়িতে না ফিরে হোস্টেলেই কারুর কাছে থেকে যায়।
বুঝেছি।
হতভাগা বোজ ভোর ছটায় এসে আমাদের উৎপাত করে। একদিন সবাই মিলে ঠিক হল আমরা সবাই দরজা খুলে ন্যাংটো হয়ে শুয়ে থাকব।
শুনেই সোনালী দাঁত দিয়ে জিভ কাটল। লজ্জা আর বিস্ময়মাখা দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বলল, এ রাম!
অত রাম রাম করলে শুনতে হবে না।
আচ্ছা, আচ্ছা, বলল।
মৌজ করে সিগারেটে টান দিয়ে খোকন বলল, পরের দিন ভোরবেলায় হোস্টেলের দেড়শ ছেলেকে তৈলঙ্গস্বামী হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে…
তোমাদের লজ্জা করল না?
হোস্টেলে থাকলে লজ্জা ঘেন্না ভয় বলে কিছু থাকে না।
একটু চুপ করে থাকার পর সোনালী জিজ্ঞাসা করল, পরে উনি কিছু বললেন না?