আমার গায়ে গন্ধ?
হ্যাঁ, তোর গায়েও গন্ধ আছে বৈকি!
সোনালী বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বলল, ঘণ্টা আছে।
সোনালী আর কথা বলে না। শুয়ে পড়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ওর ঘুম আসে। সামনের সোফায় বসে সিগারেট টানতে টানতে খোকন ওর দিকে তাকায় অনেকক্ষণ। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
পাশ ফিরতে গিয়ে হঠাৎ সোনালী চোখ মেলে তাকায়। খোকনকে দেখে। জিজ্ঞাসা করে, তুমি একটু ঘুমোবে না খোকনদা?
না।
রাত্রে তো ঘুম হয়নি। এখন একটু ঘুমোও।
সোনালী আবার ঘুমিয়ে পড়ে।
বিকেলবেলায় সমুদ্রের ধারে বেড়াতে বেড়াতে মিস্টার সরকার সোনালীকে বললেন, এখানে সুন্দর সুন্দর সিল্কের শাড়ি পাওয়া যায়। দামও সস্তা।
তাহলে বড়মাকে একটা ভালো শাড়ি কিনে দাও।
তুই কিনবি না?
আমি সিল্কের শাড়ি দিয়ে কি করব?
আমি তো ভাবছিলাম শুধু তোর জন্যই একটা শাড়ি কিনব।
কেন?
তোর বড়মার অনেক শাড়ি আছে।
তা হোক। তুমি বড়মাকেই কিনে দাও।
খোকন হাসতে হাসতে বলল, সোনালী তুই বেশ ভালোভাবেই জানিস বাবার মাথায় যখন এসেছে তখন তোর শাড়ি কিনবেনই, কিন্তু বেশ ন্যাকামি করে…
সোনালী আর এক মুহূর্ত দেরি না করে ওর পিঠে দুম করে একটা ঘুষি মেরে বলল, আর আজেবাজে কথা বলবে?
ও ভয়ে কম্পিত নয় বীরের হৃদয়।
ওরা তিনজনেই হাসেন।
শিবানী হাসতে হাসতে বললেন, তোদর ছেলেমানুষী আর যাবে না।
পরের দিন সকালে গভর্নমেন্ট এম্পোরিয়াম থেকে দুটো শাড়িই কেনা হল। এম্পোরিয়াম থেকে হোটেলে ফেরার পর শিবানী বললেন, সোনালী আজ বিকেলে এই শাড়িটা পরিস।
কলকাতায় গিয়ে পরব।
না আজ বিকেলেই পরিস।
বিকেলে ওই শাড়িটা পরে সোনালী সামনের বারান্দায় আসতেই মিস্টার সরকার আর ওঁর স্ত্রী একসঙ্গে বললেন বাঃ! কী সুন্দর দেখাচ্ছে।
সোনালী ওদের দুজনকে প্রণাম করল। খোকন এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে ভুবনেশ্বর গেছে। খেয়ে-দেয়ে রাত দশটা-সাড়ে দশটায় ফিরবে। তাই ওকে প্রণাম করতে পারল না।
মিস্টার সরকার সোনালীকে একটু আদর করে বললেন, তুই সত্যিই সোনালী।
শিবানী ওর কপালে একটা চুমু খেয়ে বললেন, যত দিন যাচ্ছে তুই তত সুন্দরী হচ্ছিস।
লজ্জায় আর খুশিতে সোনালী মুখ তুলতে পারে না।
সমুদ্রের ধারে বেড়াতে গিয়ে সবাই একবার সোনালীর দিকে দেখেন। ও লজ্জায় মুখ তুলে হাঁটতে পারে না। মিস্টার সরকার গর্বের সঙ্গে বললেন, দেখেছ শিবানী আজকে কেউ সমুদ্র। দেখছে না, সবাই তোমার মেয়েকে দেখছে।
বড়মা, জ্যাঠামণি এইসব কথা বললে আমি এক্ষুনি হোটেলে ফিরে যাব।
শিবানী বললেন, কালও কত লোক তোকে দেখেছিলেন। এতে লজ্জা পাবার কি আছে?
.
রাত্রে বি এন আর হোটেলের ডাইনিংরুমে এক মজার কাণ্ড ঘটল। মধ্য বয়সী এক দম্পতি মিস্টার সরকার শিবানীকে বললেন, আপনার এই মেয়েটিকে যে আমি পুত্রবধু করার লোভ সামলাতে পারছি না।
সোনালী ওই কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে ঘরে চলে গেল।
সোনালীর কাণ্ড দেখে ওরা চারজন একসঙ্গে হেসে উঠলেন।
দু-এক মিনিটের মধ্যে খোকন ফিরে এসে ওকে এত সেজেগুঁজে একলা থাকতে দেখে জিজ্ঞাসা করল, তুই একলা একলা কী করছিস?
এমনি বসে আছি।
বাবা মা কোথায়?
ডাইনিংরুমে।
তোর খাওয়া হয়ে গেছে?
হ্যাঁ।
ওঁদের খাওয়া হয়নি?
হয়েছে।
তবে ওঁরা কি করছেন?
এক ভদ্রলোক-ভদ্রমহিলার সঙ্গে কথা বলছেন।
তা তুই চলে এলি?
সোনালী এতক্ষণ মুখ নীচু করে একটার পর একটা প্রশ্নের জবাব দিয়েছে। এবার ও খোকনের দিকে তাকিয়ে বেশ একটু উৎকণ্ঠার সঙ্গে বলল, জানো খোকনদা ওই ভদ্রমহিলা কি অসভ্য!
খোকন অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল, কেন কি হয়েছে?
হঠাৎ বড়মা আর জ্যাঠামণিকে এসে বলছে আপনার মেয়েকে পুত্রবধু করতে ইচ্ছে করছে!
খোকন হো হো করে হেসে উঠল আর সঙ্গে সঙ্গে সোনালী ওর হাতে একটা চড় মেরে বলল, তুমিও ভীষণ অসভ্য।
কয়েক সেকেন্ড পরেই সোনালী খোকনকে প্রণাম করতেই ও জিজ্ঞাসা করল, চড় মেরেই প্রণাম?
নতুন শাড়ি পরেছি না।
খোকন কয়েকটা মুহূর্তের জন্য অপলক দৃষ্টিতে সোনালীকে দেখে বললে, সত্যি আজ তোকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।
সকালবেলার প্রথম ঝলক সোনালী রোদের মতন ও হঠাৎ মিষ্টি হেসে বলল, সত্যি খোকনদা?
খোকন ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল, দারুণ!
খোকন আর কোন কথা না বলে বাবা মার সঙ্গে দেখা করতে গেল। দশ-পনেরো মিনিট পরে এঘরে ফিরে আসতেই সোনালী জিজ্ঞাসা করল, জ্যাঠামণি বা বড়মা আমার সম্পর্কে কিছু বললেন?
খোকন মুখ টিপে হাসতে হাসতে জিজ্ঞাসা করল, তুই কি জানতে চাস? বিয়ের কথা?
খুব গম্ভীর হয়ে সোনালী বলল, বাজে অসভ্যতা কোরো না।
তোর ভয় নেই। কেউ তোকে দুম দাম বিয়ে দিয়ে পার করবে না।
সোনালী চুপ করে বসে থাকে। কোনো প্রশ্ন, কোনো মন্তব্য করে না।
খোকন চুপ করে থাকে না। আস্তে আস্তে সোনালীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে, তোর বিয়ে দিতে হবে ঠিকই কিন্তু বাবা-মা তোকে ছেড়ে থাকার কথা ভাবতেই পারেন না।
সোনালী এবারও কিছু বলে না।
খোকন বলে, আমি ভাবতেই পারি না তুই অন্য কোথাও চলে যাবি। তুই না থাকলে আমি তো বোবা হয়ে যাব।
সোনালী এসব কথার কোন জবাব না দিয়ে শুধু বলল, আর কথা না বলে জামা-কাপড় বদলে শুয়ে পড়ো।
তোর ঘুম পাচ্ছে নাকি?
আজ বোধহয় সারারাতই জেগে থাকব।
কেন?
কেন আবার? দুপুরে ঘণ্টা চারেক ঘুমিয়েছি।