দোকানদার বলে দিল, হাটের একেবারে পেছন দিকে হাট কমিটির শেড। সেদিকে যাওয়ার আগে প্রিয়নাথ লটারির টিকিটের রিক্সাটার দিকে যায়। তাকে দেখে ছেলেটি মাইকেই বলে ওঠে, আসুন দাদা, কখানা?
না, শোনেন দাদা, টিকিট না, অন্য একটা কথা আছে।
কী কথা দাদা, বলুন। কথাও বলুন, টিকিটও নিন। মাত্র এক টাকায়—
ছেলেটি তার কথা মাইকেই বলে যাচ্ছিল। কিন্তু প্রিয়নাথের গলা মাইকে শোনা যাচ্ছিল না। ফলে প্রিয়নাথের কেমন অপ্রস্তুত লাগছিল। সে তাড়াতাড়ি বলল, মানে, কাল ত এখানে হলকা ক্যাম্প বসবে।
কী ক্যাম্প?
হলকা ক্যাম্প। সেটেলমেন্টের। এই জমিজমা মাপামাপি হবে। কোন জমি কার এইসব। তার ওপর কোন জমিতে কে চাষ করছে সেসব রেকর্ড হবে। এই কথাটা যদি মাইকে একটু বলে দেন সবাই জানতে পারবে।
মানে, কোনো কালচারাল ফাংশন হবে?
কী? ফাংশন?
হ্যাঁ, মানে কোনো আর্টিস্ট আসবে?
আরে না না, এ ত সরকারের ব্যাপার, আইনের ব্যাপার, ফাংশন না।
তা হলে সবাইকে বলতে বলছেন যে?
বললাম ত, জমিজমা মাপামাপি হবে, রেকর্ড হবে, অপারেশন বর্গা।
সে ত পার্টির ব্যাপার স্যার, আমরা কোনো পার্টিফার্টিতে নেই দাদা। একটা টিকিটের দাম মাত্র এক টাকা। কিন্তু এর বদলে আপনি এক লক্ষ টাকা পেতে পারেন–ছেলেটি একই গলায় ঘোষণা করে যায়। তার পর থেমে হঠাৎ প্রিয়নাথের দিকে তাকিয়ে বলল, ফাংশন না হোক, লোকজন আসবে ত?
সে ত আসবেই। সবাই যাতে জানতে পারে সে জন্যই আপনাকে একটু অ্যালাউন্স দিতে বললাম।
সে করে দিচ্ছি। কিন্তু কাল আমাদের একটু চান্স দিতে হবে। টিকিট বিক্রি করব।
নিশ্চয়, নিশ্চয়, সে আপনারা কাল সকাল থেকেই আসবেন।
তা হলে বলুন, কী ক্যাম্প?
হলকা।
হলকা? এ কি দাদা একটা নাম হল! একটা ইংলিশ নাম দিলে পারতেন।
কিসের?
এই ফাংশনের।
সে আমরা দেব কী করে? এ তো গবর্মেন্টের নাম। বরাবর তো হলকা ক্যাম্পই বলে।
ও আচ্ছা, আমি ভাবছিলাম নতুন জিনিশ। গবর্মেন্টেরও ত কত নতুন জিনিশ হয়, তা বলুন কী বলতে হবে। ভাইয়ো অউর বহির্নো, তগদির এক চিজ অউর তগদির কা খেল অউর এক চিজ, ছেলেটি হিন্দিতে লটারির টিকিট বিক্রি শুরু করে। প্রিয়নাথ একটু অপেক্ষায় থাকে। থামলে বলে, বলতে হবে আগামীকল্য হইতে এইখানে ক্রান্তির হাটে সেটেলমেন্টের হলকা ক্যাম্প বসিবে। আধিয়ারি রেকর্ডও করা হইবে। আপনারা সকলে দলিলপত্র লইয়া উপস্থিত থাকিবেন।
ধুত দাদা, এসব ত কীরকম পুলিশ পুলিশ শোনাবে। সবাই ভাববে আমরা সরকারি লোক। কেউ আর টিকিট কিনতে আসবে না।
না। ওটাই বলতে হবে তা নয়। ওটাকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দিলেই হবে। এই যে এইটা দেখে নিন। হাতে কোন একটা নোটিশ না ইস্তাহার ছিল–সেটা এগিয়ে দেয়। ছেলেটা দু-চার লাইন পড়েই উল্টে শাদা পিঠটা দেখে। তার পর আবার ছাপাটা দেখে। আবার উল্টোয়। এ কি দিাদা, এ ত আমি কেন, আমার মামাও বুঝতে পারবে না। প্রিয়নাথ তাড়াতাড়ি বলে, ঐ সব মিলিয়ে-মিশিয়ে বলে দেন দাদা, একটু উপকার হয়। ছেলেটি একটু থেমে কিছু ভাবে। তারপর বলে, আচ্ছা শুনুন বলছি, এতে হবে কি না দেখুন। তারপর সেই গলাতেই বলে যায়, জীবনে কত কী ঘটে যাচ্ছে সব সময়। সবই ত নতুন। এইমাত্র আমাদের এক দাদা আমাদের এক নতুন জিনিশ শেখালেন, হলকা, হলকা ক্যাম্প। কাল সকাল থেকে নাকি এই ক্রান্তির হাটে এই হলকা ক্যাম্প বসবে। আপনারা নিশ্চয় সবাই সেই ক্যাম্পে আসবেন। ঘুরবেন। দেখবেন। এর আগে আমরা কখনো হলকা শুনি নাই। তেমনি আগামী কালের খেলার শেষে যখন আপনার দরজায় টেলিগ্রাফ পিয়ন এসে বলবে আপনি পশ্চিমবঙ্গ লটারির ফার্স্ট প্রাইজ পেয়েছেন–তখন আপনিও বলবেন লটারি যে কেউ পায় তা প্রথম জানলাম। তাই বলছিলাম জীবনে সব সময়ই ত নতুন কিছু ঘটছে। কালকের হলকা ক্যাম্প নতুন। তেমনি আপনার ফাস্ট প্রাইজ নতুন। কিন্তু একটা, একটা টিকিট ত আপনাকে কাটতে হবে। কী দাদা, চলবে?
হ্যাঁ, হ্যাঁ, এ ত খুব ভাল বলছেন। কিন্তু হলকা ত নতুন ব্যাপার নয়। এটা
আচ্ছা, আচ্ছা, ওটা ম্যানেজ করে দেব।
আর, ঐ নাকিটা বলবেন না?
নাকি? মানে? নাকি বলব না! এখন মনে হতে লাগল মাইকে কোনো নাটক হচ্ছে। বা ঝগড়াও হতে পারে। দু-একজন লোক ঘাড় ফিরিয়ে তাকায়, একজন এগিয়ে আসে। আসুন দাদা, মাত্র এক টাকার বিনিময়ে লক্ষ টাকা। কিন্তু লোকটা টিকিট না কিনে করে দাঁড়িয়ে থাকে। প্রিয়নাথ দেখে ছেলেটি তার দিকে আর তাকাচ্ছে না। আসুন, পশ্চিমবঙ্গ লটারি-মাঝখানে প্রিয়নাথ বলে বসে, ঐ যে বললেন না হলকা ক্যাম্প নাকি বসবে, ওখানে বলতে হবে হলকা ক্যাম্প বসিবেই! ছেলেটি কোনো জবাবও দিল না। প্রিয়নাথের ভয় হল ছেলেটি বলে বসবে, মাইকে কিছুই বলতে পারবে না। তাই, তাড়াতাড়ি ঠিক আছে বলে সরে যেতে নেয়। পেছন থেকে ছেলেটি বলে, আমরা বলে দিচ্ছি। কিন্তু আমাদের রিক্সা কাল আপনাদের ক্যাম্পে এলে তখন যেন পুলিশ ঝামেলা না করে।
আরে না না, আপনারা আমার কাছে যাবেন। আমি ত থাকব। প্রিয়নাথ হাট কমিটির অফিসের দিকে যেতে শুরু করে। পেছনের মাইকে শুনতে পায়, জীবন মানে ত পদ্মপাতার জল, কিন্তু যা হওয়ার তা ত…
ক্যাম্প মানে ত কাল এখানে কিছুই না। কে-বির [খানাপুরী বুঝারত, মাঠখশড়া ফিল্ড-সার্ভে] কাজ ত মৌজায়। যাক, আসুক ত।