ঘটনা কী?
ঘটনা হচ্ছে একটা বাচ্চা ছেলে কাঁদছে।
বয়স কত?
আনুমানিক বয়স ছয় সাত।
কেন কাঁদছে?
রাস্তার মোড়ে গ্যাস বেলুন বিক্রি হচ্ছে–ছেলেটা বেলুন কিনতে চাচ্ছে। বাবা কিনে দিচ্ছে না।
কেন দিচ্ছে না? কারণটা কি অর্থনৈতিক?
কারণ অর্থনৈতিক বলে মনে হচ্ছে না। বাবাকে দেখে মনে হচ্ছে তার টাকা পয়সা আছে।
তা হলে বেলুন কিনে দিচ্ছে না কেন?
বাবা বলছেন–বেলুন দিয়ে হবেটা কী! একটু পরেই সুতা ছেড়ে দিবি বেলুন চলে যাবে আকাশে।
ছেলেটা কি এখনো কাঁদছে?
না এখন কাঁদছে না, এখন সার্টের হাতায় চোখ মুছছে। তবে বার বার ঘাড় ঘুরিয়ে বেলুনওয়ালার দিকে তাকাচ্ছে।
তিনটা বেলুন কিনে এক্ষুনি ছেলেটার হাতে দেবার ব্যবস্থা কর।
জ্বি আচ্ছা স্যার।
বেলুন পাবার পর ছেলেটার মনের অবস্থা কী হল–এক্ষুনি জানাও আমি লাইনে আছি।
জ্বি আচ্ছা।
নানা ধরনের আন্দোলন চলছে— দারিদ্র্য মুক্ত পৃথিবী আন্দোলন, ক্ষুধা মুক্ত পৃথিবী আন্দোলন। অশ্রু মুক্ত পৃথিবী আন্দোলন কি শুরু করা যায় না? যে পৃথিবীতে কেউ চোখের পানি ফেলবে না। সেই পৃথিবীর ডিকশনারীতে আনন্দ অশ্রু শব্দটা থাকবে কিন্তু অশ্রু শব্দ থাকবে না।
রাস্তায় নেমে দেখি ধরনী তেন্তে আছে। পিচের রাস্তায় তো পা ফেলা যাচ্ছে না। ফুটপাথেও না। চৈত্র মাসের দুপুরে খালি পায়ে ঢাকা শহরে হাঁটা অসম্ভব।
লু হাওয়ার মত হাওয়াও বইছে। মরুভূমি কি এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে? প্রকৃতি নানান খেলা মানুষকে নিয়ে খেলে। শস্য সবুজ জনপদকে মরুভূমি বানিয়ে দেয়— আবার মরুভূমিকে সবুজ করে দেয়। সমস্ত নদ নদী শুকিয়ে বাংলাদেশ কি মরুভূমি হয়ে যাবে? চকচক করবে। বালি। সেই বালির উপর উটের পিঠে চড়ে আমরা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাব। আমাদের ইলেকশনে নীেকা, ধানের শীষ এবং লাঙ্গলের সঙ্গে যুক্ত হবে উট মার্কা।
আমি পেছনে ফিরলাম, কেউ আমাকে লক্ষ করছে কি–এ দেখা দরকার। পুলিশের কর্তা ব্যক্তি যখন বলেন লোক লাগিয়ে রাখবেন তখন তিনি তাঁর কথা রাখবেন। এক অন্ধ ভিখিরী পেছনে পেছনে আসছে। সে পুলিশের কেউ না তো? সে হয়ত অন্ধ না, মেকাপ নিয়ে অন্ধ সেজেছে।
জুঁই মেয়েটাকে টেলিফোন করা দরকার। পুলিশ সাহেব যখন পরের বার আমাকে ধরে নিয়ে যাবেন তখন নিশ্চয়ই বলবেন, তোমাকে টেলিফোন করতে বলেছিলাম, টেলিফোন করনি কেন?
এখন হাতেই মোবাইল। টেলিফোন করে ঝামেলা চুকিয়ে রাখা ভাল। টেলিফোন নাম্বার লেখা কাগজটা পাঞ্জাবির পকেটেই থাকার কথা। জুঁই-এর সঙ্গে কী নিয়ে কথা বলব? প্রথম কিছুক্ষণ চৈত্র মাসের গরম নিয়ে কথা বলা যায়। তারপর কী? আচ্ছা তারপরেরটা তারপরে দেখা যাবে। গায়ক হেমন্তবাবু তো গানের মধ্যে বলেই গেছেন–তার আর পর নেই, নেই কোনো ঠিকানা……..
হ্যালো!
হ্যালো কে বলছেন? কাকে চাচ্ছেন?
আমি আমার মেরুদণ্ডে সামান্য কাঁপন অনুভব করলাম। কথা বলছেন জুঁই-এর বাবা। ভদ্রলোক আজ অফিসে যাননি না-কি? শরীর খারাপ? আমি গলার স্বর অতিরিক্ত মসৃণ করে বললাম, স্যার আপনার শরীরটা কি ভাল?
হ্যাঁ ভাল। তুমি হিমু না?
ইয়েস স্যার। টেলিফোনে গলা শুনে চিনতে পারবেন বুঝতে পারিনি। জুঁই কেমন আছে স্যার?
ভাল আছে।
আপনি অফিসে যাননি কেন? শরীরটা ভাল না। তাই না স্যার?
শরীর ভাল। এবং আমি অফিস থেকেই বলছি। এটা অফিসের নাম্বার। তোমাকে জুঁই-এর নাম্বার বলে অফিসের নাম্বারটাই দেয়া হয়েছে।
ও।
জুঁই–কে কি কোনো খবর দিতে হবে?
জি-না।। শুধু বলবেন যে কোনো একদিন এসে কফি খেয়ে যাব।
আচ্ছা বলব।
স্যার আরেকটা কথা।
বল।
আপনি বলেছিলেন আমার পেছনে লোক লাগিয়ে রাখবেন। কিন্তু কাউকে তো দেখতে পাচ্ছি না। একজন অন্ধ অনেকক্ষণ ধরে আমার পেছনে পেছনে আসছে কিন্তু তাকে তো আসল অন্ধ বলেই মনে হচ্ছেচোখের মণি একেবারে কোটির থেকে তুলে নেয়া।
সে আমাদের কেউ না। তবে তোমার পেছনে লোক ঠিকই লাগানো আছে।
শুনে ভাল লাগছে স্যার। নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে।
নিউ অর্লিন্স থেকে তোমার এক খালা এসেছেন–মালিহা। তুমি ডাকো মালু খালা। তোমার এই খালার স্বামীর নাম আরেফিন। তাদের কেয়ার টেকারের নাম হাদি। ঠিক হচ্ছে না?
জ্বি, ঠিক হচ্ছে। আমি পুলিশের কর্মদক্ষতায় মুগ্ধ। আচ্ছা স্যার হাদি সাহেবের মেয়েটার নাম বলতে পারবেন?
না।
মেয়েটার নাম পাখি। এ মাসের বারো তারিখে তার জন্মদিন। জন্মদিনে সে একটা হাতির বাচ্চা উপহার চায়। আপনাদের কাছে তো সব খবরই আছে। এই খবরটাও থাকা দরকার। স্যার হাতির বাচ্চা কোথায় পাওয়া যায় বলতে পারেন। একদিনের জন্যে ভাড়া করতাম।
টেলিফোনের লাইন কেটে গেল। আমি ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেললাম।
কেন জানি মনে হচ্ছে হাতির বাচ্চার সমস্যার একটা সমাধান করা যাবে। বড় বড় সমস্যার সমাধান অতি সহজেই করা যায়। ছোট ছোট সমস্যার সমাধান করাই কঠিন।
নতুন জামা উপহার
নতুন জামা উপহার পেলে জামা গায়ে দিয়ে যিনি উপহার দিয়েছেন তাকে সালাম করতে হয়। নতুন মোবাইল পেলে কী করতে হয়? মোবাইল কানে লাগিয়ে পা ছুয়ে সালাম? অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। আমি খালার সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। ধানমন্ডিতে বাড়ি। এক বিঘা জমির উপর ছিমছাম ধরনের বাড়ি। সামনে বিরাট লন। একটা অংশে আবার চৌবাচ্চার মত আছে। পানি টলটল করছে। সেই পানিতে পেটমোটা রঙ্গিন মাছ। খালার এই বাড়ি মনে হয় রিয়েল এস্টেট কোম্পানীর চোখে পড়েনি। চোখে পড়লে এর মধ্যে ছতালা ফ্ল্যাট উঠে পড়ত। স্মাট পোশাকের দারোয়ানরা ফ্ল্যাট পাহারা দিত। এইসব দারোয়ানদের আবার সবার হাতেই ট্রাফিক পুলিশের মত বাঁশি। বাচ্চা ছেলেদের মত অকারণে বাঁশি বাজাতেও এরা খুব পছন্দ করে।