আমাদের মানে কি? বিয়ে করেছ?
হুঁ করেছি।
প্রেমের বিয়ে?
জুঁই হাসতে–হাসতে বলল, বিয়ে করে ফেলার মত প্রেম ছিল না, বিয়ে করেছি বাবাকে শিক্ষা দেবার জন্যে।
আমার তো ধারণা ওনার যথেষ্ট শিক্ষা হয়ে গেছে।
উঁহু এখনো শিক্ষা হয়নি। আমি বাবার গোয়েন্দাগিরি জন্মের মত শেষ করব। এর মধ্যে আমি আবার মনসুরকে দিয়ে বাবাকে টেলিফোন করিয়েছি। মনসুর গলা মোটা করে বলেছে— থাক এসব বলতে ইচ্ছা করছে না। মনসুর আমার হাজবেন্ডের নাম। সে যেমন সাধারণ তার নামটাও সাধারণ। আমি অবশ্যি তাকে মনসুর ডাকি না। আমি ডাকি–মন। কই আপনি বললেন না–কয়েকদিন থাকার মত একটা জায়গা। আপনি দিতে পারেন কি-না। তিন-চার দিন থাকতে পারলেই আমার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
কী ভাবে?
আমার মাকে খবর দিয়েছি। উনি থাকেন জার্মানীতে। মা চলে আসছেন।
ও।
এখন বলুন তিন-চার দিন লুকিয়ে থাকার মত কোনো জায়গা কি আছে?
পাখিদের বাসায় থাকতে পারো!
পাখি কে?
পাখি হল হাদিউজামানের মেয়ে।
হাদিউজ্জামান কে?
হাদিউজ্জামান হচ্ছে মালিহা বেগমের কেয়ারটেকার।
মালিহা বেগম কে?
মালিহা বেগম হল আরেফিন সাহেবের মৃতা স্ত্রী।
জুঁই ক্লান্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আপনার সঙ্গে বক বক করতে ভাল লাগছে না, আপনি নিয়ে যান আমাকে ঐ বাড়িতে।
আমার যাবার দরকার কী? তোমাকে চাবি দিয়ে দিচ্ছি। বাড়ির ঠিকানা বলে দিচ্ছি। তুমি মন সাহেবকে নিয়ে উঠে পড়া।
কেউ কিছু বলবে না?
মনে হয় না কেউ কিছু বলবে। আর যদি বলে তুমি বলবে তুমি পাখির চাচাতো বোন। বাড়ি পাহারা দেবার জন্যে আছে।
আমি রাজি।
এই নাও চাবি।
জুঁই বিস্মিত হয়ে বলল, একটা পুরো খালি বাড়ির চাবি আপনি পকেটে নিয়ে কী জন্যে ঘুরছিলেন?
আমি বক্তৃতা দেবার ভঙ্গিতে বললাম, জুঁই শোনো আমরা সবাই বড় একটা পরিকল্পনার অংশ। সেই বড় পরিকল্পনা যিনি করেন আমরা তাকে দেখতে পাই না। কেউ তাঁকে বলে নিয়তি, কেউ বলে প্রকৃতি আবার কেউ কেউ বলে আল্লাহ। আমি পাঞ্জাবির পকেটে খালি বাড়ির চাবি নিয়ে ঘুরব এবং তোমার সঙ্গে আমার দেখা হবে এটা আমার ধারণা বড় পরিকল্পনার ক্ষুদ্র একটা অংশ।
জুঁই শান্তগলায় বলল, আপনার কথা আমার বিশ্বাস করে ফেলতে ইচ্ছা! করছে, কিন্তু আমি বিশ্বাস করছি না। গোয়েন্দা বাবার মেয়ে এত সহজে সব কিছু বিশ্বাস করে না।
আমি বললাম, জুঁই তুমি একটু শব্দ করে হাসো তো?
জুঁই বলল, কেন?
তোমার হাসির শব্দ অসম্ভব সুন্দর।
জুঁই বলল, আপনার কোনো কথাই আমি বিশ্বাস করি না, কিন্তু এই কথাটা বিশ্বাস করলাম।
মুসলেম ছাড়া পেলেন
মুসলেম মিয়া আবারো পত্রিকার প্রথম পাতায় চলে এসেছে। ছবি সহ নিউজ।
মুসলেম ছাড়া পেলেন
বৃষ্টিতে নগ্ননৃত্য করে যিনি সবার নজর কেড়েছিলেন সেই মুসলেম মিয়া দুদিন হাজত বাসের পর ছাড়া পেয়েছেন। খবরে জানা গেছে পুলিশের গাড়ি তাকে পুরানো ঢাকার শাহসাহেব গলিতে নামিয়ে দেয়। সেই সময় তাঁর পরনে পুলিশের উপহার দেয়া নতুন পায়জামা পাঞ্জাবি ছিল। অপরাধী হিসেবে ধৃত কারোর প্রতি পুলিশের এই আচরণ নজিরবিহীন। জানা গেছে। থানার পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অনেকেই পা ছুয়ে তার দোয়া নিয়েছেন।
মুসলেম মিয়া সম্পর্কে থানা সূত্রে প্রাপ্ত একটি তথ্য হচ্ছে গত দুদিন মুসলেম মিয়া কোনো খাদ্য গ্ৰহণ করেননি। এবং এক মুহূর্তের জন্যেও নিদ্রা যাননি। গ্রেফতারের প্রথম দিনে কিছু কথাবার্তা বললেও দ্বিতীয় দিন থেকে তিনি কারো সঙ্গেই কোনো কথা বার্তা বলেন নি। একটি অসমর্থিত খবরে বলা হয় মুসলেম মিয়ার শরীর থেকে ভুড়ভুড় করে বেলী ফুলের গন্ধ আসছে।
মুসলেম মিয়াকে দেখতে যাওয়ার দরকার। সত্যি–সত্যি তার জীবনে কোনো ঘটনা ঘটে গেছে কি-না কে জানে। নদীর সঙ্গে মানুষের অনেক মিল আছে এ ধরনের কথা বলা হয়। নদীর সঙ্গে মানুষের সবচে বড় অমিল হল নদীর পানি হঠাৎ করে উল্টো দিকে বইতে শুরু করতে পারে না। মানুষের গতি পথ হুট করে কোনো রকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই পাল্টে যেতে পারে।
ঘোর বৈষয়িক মানুষও এক ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে হঠাৎ বলে বসতে পারেন–এ জীবনে যা উপার্জন করেছি, সৎ উপার্জন এবং অসৎ উপার্জন সবই আমি দান করে দিতে চাই। ব্যবস্থা করো। কিংবা আশ্রমের কোন মহাপুরুষ ধরনের সাধক মানুষ তার সমগ্রজীবনের পূন্যফল হঠাৎ কোনো এক রাতে আশ্রমের কোনো কাজের মেয়ের পায়ে তুলে দিয়ে বলে–এইটাই আসল জীবন।
মানুষ নদী না। মানুষ অন্য জিনিস।
মুসলেম মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত রাখলাম। তার সঙ্গে দেখা করার আগে আমাকে জরুরি ভিত্তিতে একটা কাজ করতে হবে, হাদি সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তাকে বলতে হবে তার মেয়ে ভাল আছে। এমন এক জায়গায় তাকে রাখা হয়েছে যে তাকে নিয়ে আর কোনো দুঃশ্চিন্তা করতে হবে না। হাদি সাহেব যদি বাকি জীবন জেলেই কাটিয়ে দেন, কিংবা ফাঁসির দড়িতে ঝুলে পড়েন তাতেও সমস্যা নেই।
আমাকে দেখে ওসি রকিবউদ্দিন সাহেব কিছুক্ষণ এমন ভাবে তাকিয়ে রইলেন যেন বিরক্ত হবেন না খুশি হবেন মনস্থির করতে পারছেন না। শেষে বিরক্ত হবার সিদ্ধান্ত নিয়ে বললেন, কী ব্যাপার?
আমি গদগদ গলায় বললাম, আপনাকে দেখতে এসেছি। সামাজিক মেলামেশা। অনেকদিন দেখি না। মনটা কেমন যেন করছে।