ফিহার অসম্ভব বিরক্ত হওয়া উচিত, কারণ কাজটা আবার গোড়া থেকে শুরু করতে হবে। কিন্তু তিনি বিরক্ত হচ্ছেন না। তাঁর ভালো লাগছে। অসম্ভব ভালো লাগছে। তিনি কান পেতে গানের কথাগুলি শোনার চেষ্টা করছেন।
দিনের প্রথম আলোয় তোমাকে দেখতে চেয়েছিলাম তুমি এলে না। মধ্যাহ্নের তীব্র আলোয় তোমাকে কেমন দেখায় জানা হল না, কারণ তুমি মধ্যাহ্নে এলে না। সূর্যের শেষ রশ্মি কি তোমার রঙ বদলে দেয়? আমি জানি না, কারণ তুমি এলে রাতের অন্ধকারে। প্রিয়তম, আমি শুধু তোমাকে দেখতে চেয়েছিলাম। অন্ধকারে কি করে দেখব?
ফিহা মুগ্ধ গলায় বললেন, গাধাটাতে ভালো গাইছে। বেশ ভালো গাইছে।
পাঠক বলল, ডাটা এন্ট্রির কাজটা আজ বন্ধ থাকলে কি ক্ষতি হবে?
থাকুক বন্ধ থাকুক।
আপনাকে এবং আপনার স্ত্রীকে আমি কি অভিনন্দন জানাতে পরি?
হ্যাঁ পার।
পাঠক নিচু গলায় বলল, মানুষের আনন্দ অনুভব করার ক্ষমতা আমার নেই। তারপরেও মনে হয় আপনার আনন্দ আমি খানিকটা বুঝতে পারছি।
ধন্যবাদ পাঠক।
সময় সমীকরণের অনেকগুলি ধাপ আপনি অতিক্রম করে এসেছেন। সীমাহীন আপনার প্রতিভা। শেষ ধাপটি অতিক্রম করতে আপনার স্ত্রী আপনাকে সাহায্য করবে। এই শুভ কামনা।
সে কি করে সাহায্য করবে? এই জটিল জগতে তার স্থান কোথায়?
সে তার মতো করে আপনাকে সাহায্য করবে। গণিত এবং পদার্থবিদ্যার সাহায্যের প্রয়োজন আপনার নেই, স্যার।
হ্যাঁ তাও বোধ হয় ঠিক। একটি ক্ষুদ্র জায়গায় আমি আটকে গেছি। আমি জট খুলতে পারছি না।
আপনি জটটা বুঝতে পারছেন। সারাক্ষণ তাকিয়ে আছেন জটটির দিকে। এই জট আপনাআপনি খুলবে।
না খুললে সমূহ বিপদ পাঠক। জট খুলতে না পারলে মেটালিস্টরা আমাদের গ্রাস করে নেবে। সামনের পৃথিবী হবে মানবশূন্য পৃথিবী। সেই পৃথিবীতে থাকবে শুধু মেন্টালিস্ট আর কেউ না। মানুষের সংখ্যা দ্রুত কমে আসছে পাঠক। অতি দ্রুত কমে আসছে।
পাঠক বলল, যে ক্ষমতাধর সেই টিকে থাকবে। এ সত্য স্বীকার করে নেয়াই কি ভালো না স্যার?
তুমি মেন্টালিস্টদের ক্ষমতাধর বলছ?
হ্যাঁ বলছি। ওরা যে টিকে যাচ্ছে এটিই কি সবচে বড় প্রমাণ নয় যে ওরা ক্ষমতাধর।
সময় সমীকরণের আমি সমাধান বের করব। আমি নিজে যাব অতীতের পৃথিবীতে। প্রফেসর এ্যাংগেল হার্স্ট যে বিশেষ পরীক্ষাটি করে প্রথম মেন্টালিস্ট শিশু তৈরি করেছিলেন সেই পরীক্ষা আমি করতে দেব না।
তা যদি করতে পারেন তাহলে বুঝতে হবে মানুষই ক্ষমতাধর। মেন্টালিস্টরা নয়।
অবশ্যই মানুষ ক্ষমতাধর। আমি তা প্রমাণ করব পাঠক। আমি তা প্রমাণ করব। শোন পাঠক, আমার সমস্যা কোন জায়গাটায় হচ্ছে আমি তোমাকে বলিখুব সাদামাটাভাবে বলা যায় সময়ের শুরু হচ্ছে বিগ বেংগে। তারপর সময় এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে…
আমাকে বলে কোনো লাভ হবে না। আমি তো স্যার এ ব্যাপারে আপনাকে কোনো সাহায্য করতে পারব না–
আমি জানি, আমি জানি, তবু তুমি শোন—একজন কাউকে শুনাতে ইচ্ছা করছে—সময়কে থার্মোডিনামিক্সের দ্বিতীয় সূত্রের সঙ্গে তুলনা কর। খুব সহজ অর্থে থার্মোডিনামিক্সের দ্বিতীয় সূত্র কি বলছে? বলছে সময় যতই এগুচ্ছে। গরম জিনিস ততই শীতল হচ্ছে। ধর এক কাপ কফি টেবিলে রাখা হল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গরম কফি আরো গরম হবে না। ঠাণ্ডা হতে থাকবে।
এই তথ্য স্যার আমি জানি।
হ্যাঁ জান। অবশ্যই জান। কিন্তু এর মধ্যে একটি মজার ব্যাপার আছে। এটি একটি পরিসংখ্যানগত সূত্র। পরিসংখ্যান কাজ করে অসংখ্য অণুপরমাণু নিয়ে। সমষ্টিগতভাবে এই সব অণুপরমাণু গরম থেকে শীতল অবশ্যই হবে। কিন্তু পরিসংখ্যান আরো বলে এর মধ্যে কিছু অণুপরমাণু গরম থেকে আরো গরম হয়ে যেতে পারে। তাতে থার্মোডিনামিক্সের দ্বিতীয় সূত্র ব্যাহত হবে না। বুঝতে পারছ?
পারছি।
তাহলে বুঝতেই পারছ—এই সব অণু পরমাণু সময়ের উল্টো দিকে যাচ্ছে। আমার কাজ হচ্ছে তাদের নিয়ে। আমি প্রাথমিকভাবে প্রমাণ করেছি যে সময়ের উল্টোদিকে যাওয়া সম্ভব।
হ্যাঁ অবশ্যই সম্ভব। দেখ পাঠক বহু পুরাতন একটা সূত্র দেখা যাক।
Tau = √(1–v2 / c2)
ধরা যাক y হচ্ছে একটি বস্তুর গতি। c আলোর গতি।
অতীতে যেতে হলে তাঁর মান হতে হবে আলোর গতির চেয়ে বেশি। যখন তা হবে তখন বস্তুর ওজন, বস্তুর দৈর্ঘ্যপ্রস্থ সব হয়ে যাবে কাল্পনিক সংখ্যা। সবার আগে চলে আসবে √-12 আসবে না?
আসবে।
এই সমস্যার সমাধান আমার কাছে খুব জটিল কখনো মনে হয় নি। গণিত শাস্ত্রে আমরা কাল্পনিক সংখ্যা নিয়ে শুরু করি এবং এক সময় সেটাকে সত্যিকার সংখ্যায় রূপান্তরিত করি। আমি অগ্রসর হচ্ছি কোন দিকে জান?
আমার জানার কথা নয় স্যার।
হা তোমার জানার কথা নয়। অবশ্যই তোমার জানার কথা নয়— দুধরনের বস্তুর কণার কথা চিন্তা করা যাক। আলোর চেয়ে কম গতিসম্পন্ন বস্তুকণা যেমন ধর, ইলেকট্রন, প্রোটন, যাদের বলা হয় টারডিওস, আবার অন্য কণা চিন্তা কর যাদের গতি আলোর চেয়ে বেশি। এরা হচ্ছে টেকিওনস…
এরা কাল্পনিক কণা। এদের অস্তিত্ব নেই।
যার অস্তিত্ব নেই তাকে অস্তিত্ব দিতে হলে কি করতে হবে? তুমি স্পেস নিয়ে চিন্তা কর। স্পেসকে কি করলে এই কণাগুলি তৈরি হবে…
স্যার আপনি কি গ্রেগরিয়ান এ্যানালিসিসের কথা বলছেন?
হ্যাঁ আমি গ্রেগরিয়ান এ্যানালিসিসের কথা বলছি। আমি কতটা কাছাকাছি চলে এসেছি তুমি কি তা বুঝতে পারছ?