স্যার।
ফিহার চিন্তায় বাধা পড়ল। ডাটা এন্ট্রিতে শেষ সংখ্যা কি বলেছিলেন ভুলে গেলেন। তিনি ক্রুদ্ধ চোখে তাকালেন। লীম দাঁড়িয়ে আছে। নিচু বুদ্ধিবৃত্তির রোবটগুলির চেহারাও কি বোকার মতো করে বানানো হয়? কী অদ্ভুত বোকা বোকা লাগছে এই গাধা ধরনের রোবটটাকে।
কি চাও?
আমি কিছু চাই না স্যার।
কেন এসেছ এখানে?
একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কোথায় দাঁড়িয়ে আছে? গেটে।
কি চায়?
জানি না কি চায়।
ফিহার শরীর জ্বলে যাচ্ছে রাগে। গাধা ধরনের এই রোবটগুলি কেন তৈরি করা হয়?
নাম কি?
আমার নাম লীম।
মেয়েটার নাম জানতে চাচ্ছি।
মেয়েটার নাম মেয়েটা জানে। আমি জানি না।
ফিহা প্ৰচণ্ড ধমক দিতে গিয়েও দিলেন না। হঠাৎ মনে হল নুহাশ নয়ত? সে কি আসবে? তার আসার সম্ভাবনা ছিল মাত্র দশভাগ; কিন্তু.ফি উঠে দাঁড়ালেন। তাঁর পেছনে পেছনে লীম আসছে। এর হাঁটাচলাও বেকুবের মতো। অকারণে দরজায় ধাক্কা খেল।
ফিহা থমকে দাঁড়িয়ে বললেন, তুমি কেন পেছনে পেছনে আসছ?
জানি না স্যার।
তোমাকে আসতে হবে না।
গেটের বাইরে নুহাশ দাঁড়িয়ে আছে। তার সঙ্গে দুটো ব্যাগ। একটা বেশ বড়, একটা ছোট। প্যাকেট করা এক গাদা বই। একটা ফোল্ডিং ইজিচেয়ার, একটা টেবিল ল্যাম্প। নুহাশ লাজুক গলায় বলল, আপনি আসতে বলেছিলেন, আমি এসেছি।
ঠিক কোন কথাটা বললে ভালো হবে ফিহা বুঝতে পারছেন না। সব কেমন জট পাকিয়ে গেছে। মেয়েটিকে ঐদিন তেমন আকর্ষণীয় মনে হয় নি। আজ অসম্ভব রূপবতী বলে মনে হচ্ছে। কোনো সাজসজ্জা করেছে বলেতো মনে হয় না। তাহলে সুন্দর লাগার কারণ কি? সৌন্দর্য ব্যাপারটা কি? একটা জিনিসকে কেন সুন্দর লাগে, কেন অসুন্দর লাগে?
আমি কি চলে এসে আপনাকে খুব ব্ৰিতকর অবস্থায় ফেলেছি।
না।
আমি আমার সব জিনিসপত্র নিয়ে এসেছি।
ভালো করেছ।
আমি কি বাড়ির ভেতর আসব?
অবশ্যই আসবে। অবশ্যই।
সুন্দর কিছু বলা উচিত। বলতে ইচ্ছাও করছে। কিন্তু সুন্দর কোনো কথা মনে আসছে না। তাঁর কি উচিত না মেয়েটির রূপের প্রশংসা করে কিছু বলা? কি বলা যায়?
নুহাশ বলল, আপনি গেট ছেড়ে সরে না দাঁড়ালে তো আমি ভেতরে আসতে পারছি না।
ফিহা সরে দাঁড়ালেন। তাঁর ইচ্ছা করছে মেয়েটিকে হাত ধরে ভেতরে নিয়ে যেতে, কিন্তু লজ্জা লাগছে। অসম্ভব লজ্জা লাগছে। লজ্জা লাগার কারণ কি?
নুহাশ বলল, আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি খুব বিব্রত হচ্ছেন।
না না না। বিব্রত হচ্ছি না। মোটেই বিব্রত হচ্ছি না। অঙ্কের একটা মডেল তৈরি করছিলাম, মাঝখানে তুমি এলে মানে সব এলোমেলো হয়ে গেল। একটা কাজ করা যাক। তুমি ঘরে যাও। লীম তোমাকে সব দেখিয়ে দেবে। কোন ঘরে থাকবে। এইসব আর কি।
লীম কে?
লীম হচ্ছে কর্মী রোবট। বোকা ধরনের তবে ঘরের কাজে খুব পটু। তুমি সব দেখে শুনে নাও। আমি এই ফাকে আমার কাজটা শেষ করি। অবশ্যি বিয়ের লাইসেন্সের জন্যে দরখাস্ত করতে হবে। এটা যদিও তেমন জরুরি নয়। কফি?
কফি খাবে?
আমাকে নিয়ে আপনি ব্যস্ত হবেন না।
ব্যস্ত হচ্ছি না তো। মোটেই ব্যস্ত হচ্ছি না। নুহাশ।
জ্বি।
মেয়েদের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয় আমি জানি না। কি বললে তারা খুশি হয় তাও জানি না। পদে পদে আমার ভুল হবে, তুমি কিছু মনে কর না। কি করলে তুমি খুশি হবে তা যদি তুমি বল তাহলে আমি তা করব। অবশ্যই করব।
নুহাশ হাসিমুখে বলল, আপনি যদি হাত ধরে আমাকে বাড়িতে নিয়ে যান তাহলে আমি খুশি হব।
ফিহা নুহাশের হাত ধরে বাড়ির দিকে এগুচ্ছেন। পাঠক এবং লীম দুজনই বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে। পাঠক এমন ভাব করছে যেন সে কিছু দেখছে না। কিন্তু গাধা লীম চোখ বড় বড় করে তাকাচ্ছে এবং খুব মাথা দুলাচ্ছে যেন সে সব বুঝে ফেলেছে। এই গাধাটিকে বাড়িতে রাখাই ভুল হয়েছে। বিরাট বোকামি হয়েছে।
ফিহা লাইব্রেরি ঘরে ফিরে গেলেন। অঙ্কের মডেলটা শেষ করতে হবে। নতুন পরিস্থিতির কারণে সব কাজ কর্ম বন্ধ রাখার কোনো মানে হয় না। তাছাড়া এটা খুব জরুরি, খুবই জরুরি।
লীম গভীর আগ্রহে
লীম গভীর আগ্রহে নুহাশকে সব ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছে। নুহাশ যা দেখছে তাতেই বিস্মিত হচ্ছে। একজন মানুষের জন্যে এত প্রকাণ্ড বাড়ি? বাড়ির পেছনে ফুলের বাগান দেখে নুহাশ হকচকিয়ে গেল। এত সুন্দর!
নুহাশ বলল, ফুলের বাগান বাড়ির পেছনে কেন?
লীম দুঃখিত গলায় বলল, স্যার পছন্দ করেন না, এই জন্যেই ফুলের বাগান বাড়ির পেছনে।
উনি ফুল পছন্দ করেন না?
না।
আর কি কি উনি পছন্দ করেন না?
গান পছন্দ করেন না।
কি বল তুমি?
লীম দুঃখিত গলায় বলল, আমি খুব ভালো গাইতে পারি। কিন্তু এই বাড়িতে গান গাওয়ার উপায় নেই। স্যার বিরক্ত হন।
কখনো গেয়ে দেখেছিলে?
একবার রান্নাঘরে বসে গুন-গুন করছিলাম। স্যার বললেন, গলায় কি হয়েছে। এরকম করছ কেন?
দেখি আমাকে একটা গান শুনাও তো।
কোন ধরনের গান শুনতে চান?
তোমার যা ইচ্ছা তুমি গাও। সব ধরনের গানই আমার ভালো লাগে।
একটি প্রেমের গান গাইব?
গাও।
ফিহা চোখ বন্ধ করে একের পর এক সংখ্যা বলেছেন, পাঠক তা মেমোরি সেলে সাজিয়ে নিচ্ছে। এই প্রক্রিয়া আবার ব্যাহত হল। লীমের গানের শব্দে আবার সব এলোমেলো হয়ে গেল।
ফিহা বললেন, এসব কি হচ্ছে?
পাঠক বলল, গান হচ্ছে স্যার।
ফিহা বললেন, কে গান করছে?
লীম। পিআর ধরনের রোবটদের ভয়েস সিনথেসাইজার খুব উন্নত মানের। তারা চমৎকার গাইতে পারে।