প্রফেসর বললেন, অবশ্যই বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ পাঠ করছি।
আপনি যেভাবে বলছেন তাতে মনে হচ্ছে পরীক্ষাগুলি ইতিমধ্যে করা হয়েছে। মানুষের জীনে ভারি ধাতুর যৌগ ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। টেলিপ্যাথিক মানব সম্প্রদায় তৈরি হয়ে গেছে।
হয়নি কিন্তু হবে। আপনি আমাকে প্ৰবন্ধ শেষ করতে দিন তারপর আমি আপনাদের সমস্ত প্রশ্নের জবাব দেব।
ঠিক আছে, প্রবন্ধ শেষ করুন।
প্রফেসর এ্যাংগেল হার্স্ট বিজ্ঞানীদের হাসাহাসির ভেতর প্রবন্ধ পাঠ শেষ করলেন। তাঁর প্রবন্ধের বড় অংশ জুড়ে নতুন মানবগোষ্ঠীর জীবনযাপন পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হল। পৃথিবীতে এরা যে শুভ প্রভাব ফেলবে তার কথা বলা হল।
বিজ্ঞানের ইতিহাসে এমন উদ্ভট এবং অবৈজ্ঞানিক নিবন্ধ পাঠ করা হয় নি। প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হল।
প্রশ্ন : প্রফেসর এ্যাংগেল হার্স্ট, মনে হচ্ছে আপনি নিশ্চিত যে জীনে একটি ভারি অণু ঢুকিয়ে দিলেই আমরা সুপারম্যান পেয়ে যাব।
উত্তর : আমি সুপারম্যান বলছি না। আমি বলছি বিস্ময়কর মানসিক ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ।
প্রশ্ন : আপনার ধারণা, আপনার মানসিক ক্ষমতা তেমন বিস্ময়কর নয়?
[সভাকক্ষে তুমুল হাস্যরোল শুরু হয়। সভাপতি ঘণ্টা বাজিয়ে সবাইকে থামালেন।]
উত্তর: আপনি আমাকে হাস্যস্পদ করার চেষ্টা করছেন। তার প্রয়োজন দেখি না।
প্রশ্ন : জীনে কোন্ ভারি ধাতু ঢকাবার কথা ভাবছেন–প্লাটিনাম?
উত্তর : না ইরিডিয়াম।
প্রশ্ন : ইরিডিয়াম পরমাণু কীভাবে জীনে সংযুক্ত করবেন?
উত্তর: এটি করতে হবে ডিম্বাণু নিষিক্তকরণ প্রক্রিয়ার সময়ে। পদ্ধতি জটিল নয়।
প্রশ্ন : জেনেটিক ইনজিনিয়ারিং-এর পুরো পদ্ধতি অত্যন্ত জটিল বলে আমরা সবাই জানি এবং আপনিও জানেন।
উত্তর : আমি যে পদ্ধতির কথা বলছি তা মোটেই জটিল নয়।
প্রশ্ন : আপনি নিজেই এই অসাধারণ পদ্ধতি বের করেছেন।
উত্তর : [নীরবতা]
প্রশ্ন : আপনি কি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে চাচ্ছেন না?
উত্তর : আমি নিজে এই পদ্ধতি বের করিনি। আমি একজনের কাছ থেকে পেয়েছি।
প্রশ্ন : দেবদূতের কাছ থেকে পেয়েছেন? সভাকক্ষে আবারো হাসি।
উত্তর: দেবদূতের কাছ থেকে পাইনি, যন্ত্রের কাছ থেকে পেয়েছি।
প্রশ্ন : যন্ত্র আপনাকে বলে গেছে কি করে সুপারম্যান তৈরি করা যায়?
উত্তর : অনেকটা তাই।
প্রশ্ন: আপনার ধারণা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে আমাদের সুপারম্যান তৈরি করা উচিত?
উত্তর : অবশ্যই উচিত।
প্রশ্ন : যন্ত্রটি পেয়েছেন কোথায়?
উত্তর: সে এসেছে।
প্রশ্ন : কোত্থেকে এসেছে?
উত্তর ও উত্তর দিতে চাচ্ছি না। উত্তর শুনলে আপনারা আম ভাবতে পারেন।
প্রশ্ন : আপনি কি ইদানিংকালে কোনো সাইকিয়াট্রিস্টকে দিয়ে আপনার মাথা পরীক্ষা করিয়েছেন?
সভাকক্ষে তুমুল হৈ চৈ, হাসাহাসি হতে থাকল। সভাপতি বললেন, প্রশ্নোত্তর পর্বের এখানেই সমাপ্তি। এই নিবন্ধ এখানে পাঠ করার কথা ছিল না। প্রফেসর এ্যাংগেল হার্স্ট অন্য একটি নিবন্ধ জমা দিয়েছিলেন। সেইটি না পড়ে তিনি এই বিচিত্র নিবন্ধ পড়লেন। এটি নিয়ে আর হৈ চৈ করার কোনো মানে নেই। আমি প্রফেসর এ্যাংগেল হার্স্টকে আসন গ্রহণ করবার জন্যে অনুরোধ করছি।
প্রফেসর এ্যাংগেল বললেন, আসন গ্রহণ করার আগে আমি আপনাদের একটি তথ্য দিতে চাই। ইতিমধ্যে আপনারা আমাকে হাস্যকর ব্যক্তিত্ব হিসেবে জেনে গেছেন। আমার মস্তিষ্কের সুস্থতা সম্বন্ধেও প্রশ্ন উঠেছে। আমি জানি, যে নিবন্ধ আমি পাঠ করেছি তা বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ নয়। পৃথিবীর সেরা এমব্রায়োলজিস্টদের এই সম্মেলনে আমি ঘোষণা করছি যে, নিবন্ধে উল্লেখিত প্রক্রিয়ার প্রয়োগ আমি করেছি। আর্টিফিসিয়াল ইনসেমিনেশন এবং টেস্ট টিউবে ডিম্বাণু নিষিক্তকরণের মাধ্যমে আমি এ পর্যন্ত একুশটি মানব শিশুর জীনে ইরিডিয়ামের একটি করে পরমাণু সংযুক্ত করেছি। এরা এখনো ভূমিষ্ঠ হয়নি। ভূমিষ্ঠ হলেই জানবেন এরা সম্পূর্ণ নতুন এক মানবগোষ্ঠী। এরা মেন্টালিস্ট। এরা বড় হবে। নিজেদের মধ্যে বিয়ে করবে। এদের সন্তান-সন্ততিরাও হবে মেন্টালিস্ট।
আপনার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছে।
সময় তা বিচার করবে।
আপনি যে পরীক্ষার কথা বলেছেন তা যদি করে থাকেন তাহলে আপনি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এমব্রায়োলজিস্টের এথিক ভঙ্গ করেছেন।
প্রফেসর এ্যাংগেল হার্স্ট যেমন বলেছিলেন তেমনি হল। একুশটি শিশুর জন্ম হল। ভয়ংকর রুগণ সব শিশু। মাত্র সাতজন কোনোক্রমে বাঁচল, তাও ইনকিউবেটরে।
এ্যাংগেল হার্স্টকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হল। এ্যাংগেল হার্স্ট বললেন, মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছেন দিন, শুধু দণ্ডাদেশ চার বছরের জন্যে পিছিয়ে দিন। আমি দেখতে চাই সত্যি সত্যি মানসিক শক্তিসম্পন্ন শিশু তৈরি হয়েছে কি-না।
তাঁকে সেই সুযোগ দেয়া হল না। সুযোগ দিলে তিনি বিস্ময় এবং আনন্দ নিয়ে দেখতেন সাতজন মেন্টালিস্টকে। আজকের বিশাল মেটালিস্ট সমাজের যারা আদি পিতা ও মাতা।
ফিহা বললেন, তুমি বলতে চাচ্ছ প্রফেসর এ্যাংগেল হান্ট-এর এক্সপেরিমেন্ট সফল হয়েছিল?
ইতিহাস তাই বলে স্যার।
যে যন্ত্রের কাছ থেকে তিনি এই বিদ্যা পেয়েছিলেন সেই যন্ত্র খুঁজে বের করার চেষ্টা হয় নি?
ইতিহাস বই-এ আর কোনো তথ্য নেই স্যার।
খুব ভালো কথা। এখন অঙ্কের মডেলটা নিয়ে কাজ শুরু করা যাক।
ফিহা অতি দ্রুত সংখ্যা বলে যেতে লাগলেন। এখন শুধু ডাটা এনট্রি।