চক্র পূর্ণ হতে হলে y কে যেখানে থেকে শুরু সেখানেই ফিরে যেতে হবে। গ্রেগরিয়ান ইন্টিগ্রাল নিয়ে আসা যায়। গ্রেগরিয়ান ইন্টিগ্রালকে অর্থপূর্ণ করতে হলে Yকে ফাইনাইট ফাংশান হিসেবে দেখতে হবে।
ফিহা ডাকলেন, পাঠক।
পাঠক ছুটে এল।
সেন্ট্রাল কম্পিউটার চালু করার ব্যবস্থা কর।
চালু করা যাবে না স্যার।
কেন?
প্রচণ্ড ঝড় হচ্ছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ।
ও আচ্ছা।
ছোটখাটো হিসেবের ব্যাপার হলে আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি স্যার।
গ্রেগরিয়ান ইন্টিগ্রাল জানা আছে?
আছে স্যার। তবে…
তবে কি?
ভেরিয়েবল-এর সংখ্যা সাতের নিচে হতে হবে। এর উপর হলে আমি পারব না। আমার ক্ষমতা অল্প।
সাতের নিচে রাখার চেষ্টা করা হবে।
আরেকটি ক্ষুদ্র প্রশ্ন স্যার।
বল।
সমীকরণটি সময় মুক্ত?
না, সময় মুক্ত নয়।
তাহলে স্যার হেসবিয়ান নরমালাইজড ফাংশান আমাকে বের করতে হবে। সময় লাগবে।
ধীরে ধীরেই কর। তার আগে এই বইটি পড়। খুব ভালো করে পড়। বইটি মেন্টালিস্টদের উপর লেখা একটি গ্রন্থ। সম্ভবত ওদের ধর্মগ্রন্থ।
পাঠক বই হাতে নিল। ফিহা পেন্সিলে অঙ্ক সাজাতে শুরু করলেন। তাঁর চোখ-মুখ উজ্জ্বল। অঙ্কের মডেল দাঁড় করানোর আলাদা আনন্দ আছে। তিনি পাঠকের দিকে তাকালেন। সে অতি দ্রুত বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে। রোবটের গ্রন্থপাঠ দেখা এক বিরক্তিকর ব্যাপার। এরা এত দ্রুত পাতা উল্টায় যে মনে হয় পাতা গুনছে, কিছু পড়ছে না।
পড়লাম স্যার।
কেমন লাগল?
কোন্ অর্থে কেমন লাগল জানতে চাচ্ছেন?
বিষয়বস্তু।
বিষয়বস্তুতে নতুনত্ব আছে। তারা চক্রকে ঈশ্বর বলছে।
চক্রকে ঈশ্বর কোথায় বলল?
রূপকের মাধ্যমে বলেছে স্যার। বিজ্ঞানের রূপক বৰ্জিত ভাষা এবং ধর্মগ্রন্থের রূপক ভাষা দুরকম।
তোমার ধারণা তুমি বিষয়বস্তু বুঝতে পেরেছ?
এক ধরনের ধারণা তৈরি হয়েছে। ধারণা কতটুক সত্যি তা বলা মুশকিল। রূপকের ভাষা পাঠ করে একেকজন একেক রকম ধারণা করবে। এমনও হতে পারে যে সবারটাই সত্যি আবার কারোরটাই সত্যি না। আপনি আপনার সমীকরণ বলুন স্যার। আমি সাজাতে শুরু করি।
সমীকরণ বলছি। তার আগে তোমার ধারণা কি শুনি।
এই গ্রন্থে মেন্টালিস্টদের জন্মের ইতিহাস বলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে তিনি মেন্টালিস্ট তৈরি করলেন। সেই তিনি মানুষ নন। যেহেতু সেই তিনি খাদ্য গ্রহণ করেন না সেহেতু সেই তিনি খুব সম্ভব একজন যন্ত্র। এটা আমার অনুমান। বলা হচ্ছে তিনি এসেছেন ভবিষ্যৎ থেকে। মনে হচ্ছে টাইম ট্রাবেল-এর কথা বলা হচ্ছে। একটি যন্ত্র অর্থাৎ একটি রোবট ভবিষ্যত থেকে অতীতে গেল। তৈরি করল মেন্টালিস্ট। যন্ত্রটির আগমন আছে, নির্গমন নেই। অর্থাৎ যন্ত্রটি অতীতে গিয়েছে কিন্তু ভবিষ্যতে ফিরে আসতে পারেনি। বলা হয়েছে—তিনি তাঁর চক্ষু হইতে নতুন মানবগোষ্ঠী তৈরি করিলেন। এই অংশটি মজার। রোবটের চোখের আলোর সংবেদনশীল অংশ তৈরি করা হয় যৌগিক অণু ইরিকার্বো ফসফিন দিয়ে। ইরিকার্বো ফসকিন হচ্ছে একটি ইরিডিয়াম, দুটি কার্বন, একটি ফসফরাস এবং দুটি হাইড্রোজেন পরমাণুর যৌগ;
HIrPHC2
এই অদ্ভুত যৌগ মাত্র পাঁচশ বছর আগে তৈরি হয়েছে। খুবই আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে এই যৌগের র্যাডিকেল মেন্টালিস্টদের জীনে উপস্থিত।
তুমি কি করে জানলে?
মেন্টালিস্টদের প্রতি আমিও এক ধরনের আগ্রহ অনুভব করি। এই আগ্রহ থেকেই ওদের বিষয়ে পড়াশোনা করেছি।
ওদের বিষয়ে কি করে পড়াশোনা করবে? ওদের সম্পর্কে কোনো গ্ৰন্থ তো তোমার পক্ষে পাওয়া সম্ভব নয়।
বৈজ্ঞানিক জার্নালগুলিতে কিছু কিছু তথ্য পাওয়া যায়। মেন্টালিস্টদের জীনের গঠন সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ লেখা প্রকাশিত হয়েছে। মেটালিস্টরা তাদের সম্পর্কে সব তথ্যই নিষিদ্ধ করেছে; কিন্তু তাদের জীন নিয়ে গবেষণা নিষিদ্ধ করে নি।
তুমি সেই সব লেখা পড়েছ?
আমি খুব আগ্রহ নিয়ে পড়েছি।
আর কি পড়েছ?
এ্যাংগেল হার্স্ট-এর সেই বিশেষ বক্তৃতাটা এবং বক্তৃতা প্রদানের ঘটনা পড়েছি। এটি পড়েছি ইতিহাস বই-এ।
এ্যাংগেল হার্স্ট কে?
তাকেই মেন্টালিস্টদের জনক বলা হয়। পুরো ঘটনাটা কি স্যার আপনাকে বলব?
বল। তবে অল্প কথায়।
নিউ ম্যাক্সিকো শহরে তিন হাজার পাঁচ খ্রিস্টাব্দে এমব্রায়োলজিস্টদের একটি বিশেষ অধিবেশন হয়। সেই অধিবেশনে বিশিষ্ট এমব্রায়োলজিস্ট প্রফেসর এ্যাংগেল হার্স্ট একটি বিচিত্র নিবন্ধ পাঠ করে সবার হাসি-তামাশার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। নিবন্ধের শিরোনাম—নতুন মানব সম্প্রদায়।
তিনি নিবন্ধে বলেন, মানুষের জীনে ভারি ধাতুর একটি যৌগ ইরিকার্বো ফসফিন ঢুকিয়ে দিতে পারলে মাধ্যমিক মস্তিষ্কের গঠনে সূক্ষ্ম কিন্তু সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন ঘটবে। থ্যালামাস ও হাইপোথ্যালামাসের সুপ্ত কর্মক্ষমতা জাগ্রত হবে। থ্যালামাসের বিশেষ নিউক্লিয়াসের কেন্দ্রস্থল হচ্ছে মানুষের যাবতীয় অনুভূতির কেন্দ্র। যে কটি অনুভূতি নিয়ে মানুষ পৃথিবীতে এসেছে তার সঙ্গে নতুন একটি অনুভূতি যুক্ত হবে। এই মানব সম্প্রদায় হবে প্রচণ্ড মানসিক ক্ষমতার অধিকারী। এরা টেলিপ্যাথিক ক্ষমতাসম্পন্ন হবে। নিজেরা নিজেদের মধ্যে কোনো রকম মাধ্যম ছাড়াই ভাবের আদান-প্রদান করতে পারবে। অন্য মানুষদের তারা সকৰ্মে, সৎ চিন্তায় প্রভাবিত করতে পারবে…
অধিবেশনে প্রবন্ধ পাঠের মাঝখানে সাধারণত বাধা দেয়া হয় না। প্রফেসর এ্যাংগেল হার্স্টকে বাধা দেয়া হল। অধিবেশনের সভাপতি ঘণ্টা বাজিয়ে তাঁকে থামালেন এবং বললেন, প্রফেসর এ্যাংগেল হা, আপনি কি কোনো বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ পাঠ করছেন?