মানে কী?
যে-কোনো ইলেকট্রনিক্সের জিনিস ঠিক করতে পারে।
সে তাহলে ভালো একজন ইলেকট্রিক্যাল ইনজিনিয়ার। এতে অদ্ভুতের কী আছে!
তার কোনো ডিগ্রি নেই।
এটাও কোনো ব্যাপার না। নিজে নিজে পড়াশোনা করে মানুষ অনেকদূর উঠতে পারে।
সে পড়াশোনাও জানে না।
অনেক ভালো মিস্ত্ৰি আছে পড়াশোনা জানে না।
জালাল শোন, আমি যার কথা বলছি সে মাটিকাটা শ্ৰমিক। তার হাতে যেকোনো জটিল যন্ত্র দিলে সে কীভাবে কীভাবে সেটা ঠিক করে ফেলে। শোনা কথা না। আমার নিজের দেখা। তার কোনো পূর্ব-অভিজ্ঞতা নেই। সে কোনোর ওস্তাদের সঙ্গে কখনো এ্যাসিসটেন্ট হিসেবে কাজ করে নি। তার সঙ্গে কোনো এমিটার, ভোল্টামিটার নেই। সে কাজ করে তার দুটা হাত দিয়ে।
তা কী করে হবে?
আমিও বলছি—তা কী করে হবে। কিন্তু হচ্ছে। সমস্যাটা এইখানেই। তোর সামনে আমি পরীক্ষাটা করতে চাই। তোর সামনে আমি একটা নষ্ট টিভি সারাতে দেব।
নষ্ট টিভি সারানোর দরকার কী? আমি এক কাজ করি, বেশকিছু আইসি নিয়ে আসি, তার মধ্যে একটা আইসির লজিক গেট থাকবে নষ্ট। সে আইসিগুলি হাতে নিয়ে বলুক কোনটা নষ্ট।
তুই যেটা ভালো বুঝিস। আমি ঠিক সন্ধাবেলা ততকে নিয়ে যেতে গাড়ি পাঠাব।
গাড়ি পাঠাতে হবে না।
অবশ্যই পাঠাতে হবে। গাড়ি না পাঠালে তুই ভুলে যাবি।
মাহতাব সাহেব ইজিচেয়ার ছেড়ে টেবিলের কাছে চলে এলেন। হাবীবুর রহমানকে আরেকটা চিঠি পাঠাতে হবে। আজ দিনে দিনে লোক মারফত চিঠি পাঠিয়ে দিতে হবে। যে চিঠি নিয়ে যাবে সে-ই উত্তর নিয়ে আসবে। দেরি করা যাবে না। মাহতাব সাহেব নিজের ভেতর চাপা অস্থিরতা অনুভব করছেন। মনে হচ্ছে প্রেসার বেড়েছে। ডাক্তার ডেকে প্রেসার ছাপানো দরকার। তিনি বেল টিপে ডাক্তারকে খবর দিতে বললেন। ডাক্তার আসতে আসতে দ্রুত চিঠি লিখে ফেললেন।
জনাব হাবীবুর রহমান সাহেব,
আপনি লিখেছেন আপনার বড় বৌমা খলিলুল্লাহ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানে। আমি নিজে আপনার বড় বৌমার সঙ্গে কথা বলতে চাই। আপনি ব্যবস্থা করে দিন।
আপনি চিকিৎসার জন্যে যে-কোনো সময় ঢাকা আসতে পারেন। বাকি ব্যবস্থা আমি করে দেব।
বিনীত
মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী
যা ভেবেছিলেন তাই। প্রেসার বেড়েছে ১৩০/১০০। ডাক্তার সাহেব বললেন, আপনি কি কোনো কিছু নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করছেন।
মাহতাব সাহেব বললেন, না।
বিলাক্সেন ট্যাবলেট খেয়ে রেস্ট নিন।
মাহতাব সাহেব বিরক্ত গলায় বললেন, আমি রেস্টেই আছি।
টুনটুনি মুগ্ধ গলায় বলল
টুনটুনি মুগ্ধ গলায় বলল, খলিল ভাই, আমি তো আপনাকে চিনতেই পারি নি। খলিলুল্লাহ টুনটুনিকে আম্মাজি ডাকলেও টুনটুনি ঠিক করেছে তাকে সে খলিল ভাই ডাকবে।
খলিলুল্লাহ লজ্জিত গলায় বলল, নাপিতের কাছে গেছিলাম। চুল কাটছি। শেভ হইছি।
যে সবুজ সার্টটা পরেছেন সেই সার্টেও আপনাকে দারুণ মানিয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে আপনার বয়সও অনেক কমে গেছে। এখন আপনাকে দেখে কেউ বলবে না যে আপনি একজন মাটি-কাটক। আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি ইউনিভার্সিটিতে পড়েন।
খলিলুল্লাহ মাথা নিচু করে হাসল। টুনটুনি বলল, আপনাকে এখন আর খলিলুল্লাহ নামে মানাচ্ছে না। আপনার জন্যে নতুন একটা নাম বের করতে হবে।
কী নাম?
চিন্তা করছি, সুন্দর কোননা নাম মাথায় আসলেই সেই নাম আপনাকে দিয়ে দেব। ঠিক আছে?
ঠিক আছে আম্মাজি।
দুটা নাম এই মুহূর্তে মাথায় এসেছে। দুটা নামের শুরুই অ দিয়ে। একটা হলো অরণ্য, আরেকটা অমিয়। এর মধ্যে আপনার কোন্টা পছন্দ?
আম্মাজি, আপনার যেটা পছন্দ আমার সেইটাই পছন্দ।
আমার পছন্দ অরণ্য। এখন থেকে আপনার নাম খলিলুল্লাহ না, এখন থেকে আপনার নাম অরণ্য।
জ্বি আইচ্ছা।
অরণ্য নামের মানে জানেন?
জ্বে না।
অরণ্য নামের অর্থ হলো—বন, জঙ্গল, Forest। আর অমিয় নামের অর্থ হলো সুধা। বরিষে অমিয় ধারা। সুধা বৰ্ষণ হচ্ছে। কী বলছি কিছু বুঝতে পারছেন?
জ্বে না।
অরণ্য ভাইয়া শুনুন, নাম বদলের সঙ্গে সঙ্গে কথাবার্তা বলার ভঙ্গিও বদলাতে হবে। যার নাম অরণ্য, সে নিশ্চয়ই গ্রাম্য ভাষায় কথা বলবে না। এখন থেকে শুদ্ধ শহুরে ভাষায় কথা বলবেন।
জ্বে আইচ্ছা।
জ্বে আইচ্ছা না। বলুন জ্বি আচ্ছা। আইচ্ছা থেকে ইবাদ দিন।
খলিলুল্লাহ বলল, জ্বি আচ্ছা।
টুনটুনি বলল, ছাদে চলুন। আমি স্ক্র্যাপ বুক বানাচ্ছি, সেখানে ছবি থাকবে। আপনার বায়োডাটা থাকবে। আপনার ছবি তুলতে হবে।
জ্বি আচ্ছা!।
টুনটুনি গম্ভীর গলায় বলল, আপনার নাম কী?
খলিলুল্লাহ শুদ্ধ বাংলায় বলল, আমার নাম অরণ্য।
ছবি তোলার পর কী হবে জানেন?
না।
লেখাপড়া সেশন। আপনাকে অক্ষর শেখাব। ঠিক আছে?
হুঁ।
দুটা বা তিনটা অক্ষর মিলে মিশে যখন শব্দ হবে তখন খুব মজা পাবেন। উদাহরণ দিয়ে বোঝাই। একটা অক্ষর হলো ক, একটা ল। এই দুটা অক্ষর মিলে মিশে হয় কল।
খলিলুল্লাহ বলল, কলা কীভাবে হয়?
টুনটুনি অবাক হয়ে বলল, বা আপনার তো ভালো বুদ্ধি। আকার বলে আমাদের বাংলা ভাষায় একটা জিনিস আছে। যে-কোন অক্ষরের সঙ্গে আকার যুক্ত হলে আ এসে লাগে। লর সঙ্গে আকার যুক্ত হলে হয় লা। বলুন দেখি ক এর সঙ্গে আকার যুক্ত হলে কী হয়?
কা।
এই তো পেরেছেন। এখন বলুন কলা কীভাবে হবে?
ক, আর সঙ্গে ল, ল-এর সঙ্গে আকার।
আপনি খুব দ্রুত লেখাপড়া শিখতে পারবেন। এখন চলুন ফটোসেশনে।
ফটোসেশন কী?