উত্তর: না।
মন্তব্য : আমি ঠিক করেছি তাকে লেখাপড়া শেখাব। আমার ধারণা তিনি খুব অল্প সময়ে লেখাপড়া শিখতে পারবেন।
৫ম প্রশ্ন : আপনি পানির নিচে কতক্ষণ থাকতে পারেন? আপনার সর্বোচ্চ রেকর্ড কী?
উত্তর: পানির ভিতরে ঢুকলে সময়ের হিসাব থাকে না। যতদিন থাকতে বলেন থাকতে পারব।
মন্তব্য : লোকটা বলে কী? সে কি আসলেই উভচর মানব। আমার খুবই অবাক লাগছে।
৬ষ্ঠ প্রশ্ন : বেঁচে থাকার জন্যে মানুষকে নিশ্বাস প্রশ্বাস নিতে হয়। তার অক্সিজেন প্রয়োজন। আপনি অক্সিজেন কোথায় পান?
উত্তর: অক্সিজেন জিনিসটা কী আমি জানি না তো আম্মা।
৭ম প্রশ্ন : পানিতে আপনি নিশ্বাস নেন না?
উত্তর: জ্বে না। নিশ্বাস বাতাসে নিতে হয়। পানির মধ্যে নিতে হয় না। নাক দিয়া ঢুকলে মাথাত যন্ত্ৰণা হয়।
৮ম প্রশ্ন : আপনি যে পানিতে থাকতে পারেন এটা কখনবুঝতে পারলেন।
উত্তর: খুবই ছোট সময়ে। পুসকুনিত হাত ধুইতে গিয়া পানিতে পইড়া গেছিলাম। তারপর দেখি খুবই মজা। সারা দিঘি ঘুইরা বেড়াইছি। এই দিকে সবেই ভাবছে আমার মৃত্যু হয়েছে। পানিত জাল ফালাইছে। হিঃ হিঃ হিঃ।
৯ম প্রশ্ন : আপনি যে দীর্ঘ সময় পানিতে থাকতে পারেন এটা নিয়ে হৈচৈ পড়ে যায় নি? পত্রিকায় লেখালেখি হয় নি?
উত্তর: ইস্কুলের পিছনের পুসকুনিতে দুইবার খেলা দেখাইছি। ম্যালা লোকজন হইছিল। চেয়ারম্যান সাব আমার লেখা দেইখ্যা খুশি হইয়া আমারে রুপার মেডেল দিছিল। মেডেল হারাইয়া ফেলছি।
১০ম প্রশ্ন : এটাকে খেলা বলছেন কেন?
উত্তর: আ গো, এইটা তো খেলাই। ডুব দিয়া কে কতক্ষণ পানির নিচে থাকতে পারে—এই খেলা সব সময় খেলা হয়। অন্যরা কম পারে, আমি বেশি পারি।
টুনটুনি ঠিক করেছে খলিলুল্লাকে নিয়ে সে স্ক্র্যাপ বুকের মতো বানাবে। খলিলুল্লাহর সংক্ষিপ্ত জীবনী থাকবে। তার ছবি থাকবে। প্রশ্নোত্তর থাকবে। তার ওজন, উচ্চতা, চোখের মণির রঙ, সবই থাকবে। খলিলুল্লাহকে সে কী ডাকবে তা নিয়ে সমস্যায় পড়ে গেছে। আগে ঠিক করেছিল সে খলিল ভাই ডাকবে। কিন্তু খলিলুল্লাহ তাকে আম্মাজি ডাকছে। মা নিশ্চয়ই ছেলেকে ভাই ডাকতে পারে না।
মাহতাব উদ্দিন সাহেবের দুটা অফিস
মাহতাব উদ্দিন সাহেবের দুটা অফিস। একটা মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায়, অন্যটা বাদামতলীতে। তিনি সম্প্রতি ইটের ভাটা বসিয়েছেন। ইট বানানোর এই ব্যবসা খুবই লাভজনক বলে কাছাকাছি নতুন অফিস নিয়েছেন। অফিস বুড়িগঙ্গার পাশে। অফিস ঘরটা দোতলা। উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা। চারদিকে প্রচুর লোকজন, ভিড়, হৈচৈ এর মধ্যে মাহতাব উদ্দিনের অফিস ঘরটা নির্জন।
মাহতাব সাহেব সময় পেলেই এই অফিসে বিশ্রাম নিতে আসেন।
তিনি যে ঘরে বসেন সেখান থেকে বুড়িগঙ্গা দেখা যায়। পুরনো দিনের ভারি একটা ইজিচেয়ার জানালার কাছাকাছি রাখা আছে। তিনি ইজিচেয়ারে শুয়ে বুড়িগঙ্গায় নৌকা চলাচল দেখেন।
আজও তিনি ইজিচেয়ারে আধশোয়া হয়ে আছেন। তাঁর দৃষ্টি অবশ্যি বুড়িগঙ্গার দিকে না। খলিলুল্লাহর দিকে। খলিলুল্লাহকে একটা কাজ দেয়া হয়েছে। নষ্ট টিভি ঠিক করেতে দেয়া হয়েছে। মাহতাব উদ্দিন তাকিয়ে আছেন। তীক্ষ্ণচোখে।
খলিলুল্লাহর হাতে যন্ত্রপাতি বলতে একটা বড় স্কু ড্রাইভার। টিভিটা রাখা হয়েছে টেবিলে। সে কাজ করছে দাঁড়িয়ে। অতি দ্রুত সে টিভির যন্ত্রপাতি খুলে ফেলছে। টেবিল ভর্তি হয়েছে নানান ধরনের স্কুতে। একেক ধরনের স্কু একেক জায়গায় রাখা উচিত। তা সে করছে না। সব এক জায়গায় রেখেছে। কোন স্কু কোথায় বসবে এটা সে মনে রাখবে কী করে কে জানে। এটা নিয়ে মাথা ঘামাবার কিছু নেই। এটা তার ব্যাপার।
মাহতাব সাহেব বললেন, খলিলুল্লাহ, টিভি কীভাবে কাজ করে তুমি জানো?
খলিলুল্লাহ বলল, জ্বে না।
একটা যন্ত্র সম্পর্কে তুমি কিছু জানোনা, যন্ত্রটা ঠিক করবে কীভাবে?
খলিলুল্লাহ জবাব দিল না।
টিভিটা ঠিক করতে কতক্ষণ লাগবে?
খলিলুল্লাহ বলল, ঠিক হয়ে গেছে।
মাহতাব সাহেব বললেন, ঠিক হয়ে গেছে।
খলিলুল্লাহ বলল, জ্বে হয়েছে।
এখন কানেকশান দিলে টিভি চলবে?
জ্বে চলবে।
মাহতাব সাহেব সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললেন, যদি না চলে আমি কানে ধরে তোমাকে একশ বার ওঠবস করা।
খলিলুল্লাহ অবাক হয়ে বলল, আমারে কানে ধইরা উঠবস কেন করাইবেন?
আমার সময় নষ্ট করেছ এই জন্যে। আমার সময়ের দাম আছে। যাই হোক টিভির স্কুগুলো লাগাও। এখানে ডিশের লাইন আছে কানেকশান দাও। তারপর কানে ধরে ওঠবস করার জন্যে তৈরি হয়ে যাও।
জ্বে আইচ্ছা।
আমি পুরস্কার যেমন দিতে পারি, শাস্তিও দিতে পারি। যদি দেখি সত্যি সত্যি টিভি ঠিক হয়েছে তাহলে তোমার জন্যে পুরস্কার আছে।
স্যার, আমার পুরস্কার লাগবে না।
না চাইলেও পুরস্কার দেয়া হবে। শাস্তির ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। শাস্তি না চাইলেও পাবে।
টিভির স্কু লাগানো হয়েছে। খলিলুল্লাহ বলল, কাউরে যন্ত্রটা চালু করতে বলেন।
মাহতাব উদ্দিন বললেন, কাউকে চালু করতে বলতে হবে কেন? তুমি চালু কর। It is your duty.
খলিলুল্লাহ বলল, আমি যন্ত্র চালাইতে পারি না। ফইড় করতে পারি।
মাহতাব উদ্দিনকে কফির মগ এনে দেয়া হয়েছে। কফির মগে চুমুক দিতে দিতে তিনি টিভি স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছেন। তাঁর বাড়ির কেয়ারটেকার বারেক কানেকশান দিচ্ছে। একটু দূরে মেঝেতে গম্ভীর মুখে বসে আছে খলিলুল্লাহ। তার দৃষ্টি টিভি স্ক্রিনের দিকে না। তার দৃষ্টি তার নিজের পায়ের বুড়ো আঙুলের দিকে। সে এখনো তার দুআঙুল নাচাচ্ছে।