তখন তার মন বলে উঠল, আজিজকে চিনতে তুমি ভুল করেছ। স্ত্রী ছেলে মেয়ে থাকা সত্ত্বেও যে তোমাকে দীর্ঘ দিন ভোগ করেছে, সেই রাস্তা পরিষ্কার করার জন্য তোমার স্বামীকে হত্যা করেছে, এখন সমস্ত স্টেট গ্রাস করার জন্য তোমার মাকে হত্যা করার পরামর্শ দিয়ে তোমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছে, সে যে কত বড় ধূর্ত পাপী, একবারও কি চিন্তা করবে না?
তাকে অনেকক্ষণ চুপ করে থাকতে দেখে আজিজ যেন তার মনের কথা বুঝতে পারল। বলল, এতক্ষণ কি ভাবছ? মনে হচ্ছে, আমার পরামর্শ তোমার মনঃপুত হয় নি?
বিবেকের চাবুকে ফায়জুন্নেসার জ্ঞানের চোখ খুলে গেছে। বলল, হ্যাঁ, তুমি ঠিক ধরেছ, তোমার পরামর্শটা আমার মনঃপুত হয় নি। শুধু তাই নয়, তোমার আসল উদ্দেশ্য আমি ধরে ফেলেছি। আজ এখনই তোমাকে বরখাস্থ করলাম। তোমার সঙ্গে আমার আর কোনো সম্পর্ক নেই। তুমি চলে যাও, আর কখনও এমুখো হবে না।
আজিজ খুব রেগে গিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হো হো করে হেসে উঠে বলল, চমৎকার, কি দারুণ তোমার অভিনয়?
ফায়জুন্নেসা রাগের সঙ্গে বলল, না, অভিনয় নয়, যা সত্য তাই বলেছি।
তা হলে তো আমার আসল উদ্দেশ্যের কথা শুনতেই হয়।
নিজেই তো জান, আমার কাছে শুনতে চাচ্ছ কেন? আমি বলব না।
যদি বলি বলতেই হবে।
তুমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছ? ভুলে যেও না, তুমি চৌধুরী স্টেটের একজন কর্মচারী। মালিকের সঙ্গে বেয়াদবী করার শাস্তি নিশ্চয় জান? কোনো উচ্চ-বাচ্চ্য না করে চলে গেলেই ভালো করবে। নচেৎ বলে থেমে গিয়ে ফায়জুন্নেসা তার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাল।
এই দৃষ্টির অর্থ আজিজ জানে। ইনসান চৌধুরীর ভয়ালদর্শন কয়েকজন লেঠেল ছিল। আরও ছিল কয়েকজন ভয়ালদর্শন পিস্তলধারী। ইনসান চৌধুরী যার দিকে অগ্রি দষ্টিতে তাকাতেন। হয় লেঠেলরা তাকে লাঠিপেটা করে মেরে ফেলত অথবা পিস্তলধারী কেউ একজন তাকে গুলি করে মেরে ফেলত। সেই সব লেঠেল ও পিস্তলধারীরা এখনও আছে।
এখন ফায়জুন্নেসাকে অগ্নিদৃষ্টিতে তার দিকে তাকাতে দেখে আজিজ ভয় পেয়ে সেখান থেকে চলে গেল।
তারপর আজিজ আর কখনও চৌধুরী বাড়ির ত্রিসীমানায় না গেলেও একের পর এক তাদের ক্ষতি করে চলেছে। সেও কয়েকজন লেঠেল ও পিস্তলধারী লোক রেখেছে। একবার চৌধুরীদের পত্তনী দেয়া জমির ধান লুট করতে গিয়ে উভয় পক্ষের কয়েকজন লেঠেল ও পিস্তলধারী হতাহত হয়েছে।
.
আজিজকে বরখাস্থ করার পর ফায়জুন্নেসা বেশ কয়েকজন ম্যানেজার রেখেছেন। তাদেরকে আজিজের অস্ত্রধারী লোকেরা ভয় দেখিয়ে চলে যেতে বাধ্য করেছে। যারা না গিয়ে চ্যালেঞ্জ করেছে, তাদেরকে মেরে ফেলেছে। তাই এবারে সুটিং ও ফাইটিং জানা ম্যানেজার পোস্টের জন্য কাগজে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলেন।
৩. কাগজে বিজ্ঞপ্তি দেখে
কাগজে বিজ্ঞপ্তি দেখে ঢাকা থেকে একজন এসেছে গুনে ফায়জুন্নেসা কিছুক্ষণ আগে এসেছেন। তার মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য পেপার ওয়েট ঠুকে শব্দ করেন। তারপর তাকে ঐভাবে তাকাতে দেখে বললেন, মনে হচ্ছে আপনি খুব অবাক হয়েছেন। এতে অবাক হওয়ার কি আছে? ওটা অনেক আগের ফটো। পাশের লোকটা আমার স্বামী আর ছোট মেয়েটি আমাদের একমাত্র সন্তান স্বপ্না। তারপর মৃদু হেসে বললেন, এখন অবশ্য অনেক বড় হয়েছে। ঢাকা ভার্সিটিতে জুওলজিতে মাস্টার্স করে পি.এইচ.ডি. করতে আমেরিকা গেছে।
সালাম দেয়া হয় নি মনে পড়তে ফায়সাল তাড়াতাড়ি সালাম দিল।
ফায়জুন্নেসা সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বসুন।
ফায়সাল বসার পর হঠাৎ খেয়াল করল, দ্রমহিলার শরীরে এতটুকু বয়সের ছাপ পড়ে নি। বাঁধন শরীর, সুন্দর স্বাস্থ্য। গায়ে ওড়না থাকলেও পুরুষ্ঠ বক্ষ দুটো দেখে লজ্জা পেয়ে মুখ নিচু করে নিল।
ফায়জুন্নেসা মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার সব কাগজপত্র এনেছেন?
জি, এনেছি। তবে সেগুলো দেখাবার আগে জানতে চাই, বর্তমানে আপনিই কি চৌধুরী স্টেটের মালিক।
তা জানা কি আপনার খুব প্রয়োজন? নিশ্চয়। যিনি আমাকে চাকরি দেবেন ওনার পরিচয় জানা উচিত নয় কি?
হুঁ, আমিই চৌধুরী স্টেটের একমাত্র মালিক ফায়জুন্নেসা। এবার নিশ্চয়। কাগজপত্র দেখাবেন?
ফায়সাল ব্রিফকেস খুলে কাগজপত্র বের করে টেবিলের উপর রাখল।
ফায়জুন্নেসা সেগুলো দেখে বললেন, ঠিক আছে। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, এত অল্প বয়সে দাড়ি রেখেছেন কেন?
দাড়ি রাখা সুন্নত হলেও ফকিহগণ ওয়াজেব বলেছেন। তাই প্রত্যেক মুসলমান পুরুষদের দাড়ি রাখা উচিত, এখানে বয়সের কথা অবান্তর।
শুনুন, এখানে চাকরি করার যে শর্তটা পেপারে দেয়া সম্ভব নয় বলে দিই নি। সেটা হল, আমি যেভাবে যা কিছু করতে বলব, দ্বিধাহীনচিত্তে করবেন। এতটু প্রতিবাদ করতে পারবেন না।
কিন্তু আপনি যদি অন্যায় কিছু করতে বলেন, তা হলে?
ফায়জুন্নেসা রেগে উঠে গম্ভীরস্বরে বললেন, তা হলেও করতে হবে।
ওনার রাগকে পাত্তা না দিয়ে ফায়সাল বলল, আর যদি কাউকে অন্যায় ভাবে হত্যা করতে বলেন?
ফায়জুন্নেসা আরও রেগে উঠে বললেন, তাও করতে হবে।
ওনার রাগকে এবারও পাত্তা না দিয়ে ফায়সাল বলল, তা হলে আপনিও শুনে রাখুন, আমি জীবনে কখনও কোনোরকম এতটুকু অন্যায় কিছু করি নি। তাই আপনার কাছে চাকরি করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এক্ষুনি বিদায় হচ্ছি বলে কাজগপত্রগুলো ব্রিফকেসে ভরে হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়াল।